নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শেখ কামাল আইটি সেন্টারে কারিগরি শিক্ষার আলো

শেখ কামালের নামে সারা দেশে গড়ে তোলা হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ২০৪১ সালের মধ্যে ৬৪ জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে তোলার কাজ শেষ হবে। এতে ১০ লাখ শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন, ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশ পাবে কারিগরি শিক্ষার আলো। এই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।

উদ্যোগের সূচনা হিসেবে জানা যায়, নাটোরে পুরোনো জেলখানা মেরামত করে গড়ে তোলা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখান থেকে ধারণা নিয়ে একই রকম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সেই থেকে শুরু। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নাম রাখা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের নামে। এসব সেন্টারে বিপুল সংখ্যক তরুণ বেকারদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এখন একের পর এক দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার। এরই মধ্যে ৮টি জেলায় নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে এগুলোর কাজ শেষ হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ১৯টি জেলায় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সারা দেশে এই ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ শেষ হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার প্রকল্পটি মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট সজীব ওয়াজেদ জয়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। তিনি ২০১৬ সালে এসএসসি, এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। এরই মধ্যে আমরা বাংলাদেশের আটটি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছি। ২০২১ সালের মধ্যে আটটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।’ পলক আরো বলেন, ‘গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে আরো নতুন শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। ফলে ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা ১৯টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ শেষ করতে পারব।’

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০৪১ সাল নাগাদ ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার থেকে ১০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং প্রায় ৫ লাখ শিক্ষার্থীর কর্মসংস্থান সেন্টারগুলো থেকে নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।

এসব সেন্টারের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী জানান, ইমেজ প্রসেসিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপস ও ডেভেলপমেন্ট, ফটোশপ, ডিজিটাল মার্কেটিং, ডাটা এন্ট্রি, কল সেন্টার এজেন্ট তৈরির মতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বর্তমানে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার সেবা খাতের যে প্রয়োজনীয় লোকবল দরকার সেটা মাথায় রেখেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। ছয় মাসব্যাপী সার্টিফিকেট কোর্স এবং ১২ থেকে ২৪ মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স কারিকুলাম ডিজাইন করা হচ্ছে। এসব সেন্টারে একদিকে যেমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে, অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ইনকিউবেশনের সুযোগ থাকবে। আইটি ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য এসব সেন্টারে ছোট ছোট কিছু ওয়ার্কিং স্পেস থাকবে।

প্রথম করা ট্রেনিং সেন্টারের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা যায়, নাটোরের বড় হরিশপুরে পুরোনো জেলখানা মেরামত ও আধুনিকায়ন করে বেশ কিছু দিন ধরে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত সুবিধা দেওয়া হয়। এরই মধ্যে বিভিন্ন বিষয় যেমন গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং ট্রাবলশ্যুট, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, কন্ডাকন্টিং ই-কমার্স ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বেসিকের ওপর ৪৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, প্রায় ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নাটোরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। যদিও পুরোনো জেলখানার ভবনগুলো সংস্কার করে এত দিন প্রশিক্ষণের কাজ চলছিল। নতুন ভবন উদ্বোধনের ফলে প্রশিক্ষণার্থীরা এখন থেকে ইনকিউবেশনের সুবিধাও পাবেন।

এ বিষয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে অর্থ উপার্জন শুরু করেছেন। ভবিষ্যতে নাটোর হবে প্রযুক্তির উত্তরাঞ্চলীয় হাব। শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের সম্প্রসারণে ৪৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।’

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ হাই-টেক পার্কের তত্ত্বাবধানে দেশের ১১টি জায়গায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপন বিষয়ক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। এটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। গত ২৫ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।

রাজশাহীতে শেখ কামাল আইটি আইটি ইনকিউবেটর তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন। ভবনে এরই মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে হাই-টেক পার্ক সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া, খুলনায় আইটি ইনকিউবেটর কাম ট্রেনিং সেন্টার তৈরি হচ্ছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টারের ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। গত জুন মাসের মধ্যে ভবনটির ৮৫ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নভেম্বর মাসের মধ্যে এ ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানা গেছে।

হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাস পর্যন্ত শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে তোলার কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে মাগুরায় সেন্টার নির্মাণ কাজের ৮২ শতাংশ, বরিশালে ভবন নির্মাণ কাজের ৮১ শতাংশ, সিলেটে ভবন নির্মাণ কাজের ৭৫ শতাংশ, কুমিল্লায় ভবন নির্মাণ কাজের ৭২ শতাংশ, নাটোরে ভবন নির্মাণ কাজের ৫২ শতাংশ, নেত্রকোনায় ভবন নির্মাণ কাজের ৩৭ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। চট্টগ্রাম ও রংপুরের পীরগঞ্জে কাজের জন্য চুক্তি সম্পন্ন ও কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close