প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আসছে বাঁশের বিস্কুট!

ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, মিয়ানমারের এক বিস্তীর্ণ অংশে বাঁশ খুবই সহজে জন্মায়, এই অঞ্চলের গ্রামীণ দৃশ্যপটে বাঁশবন বা বাঁশঝাড় খুবই পরিচিত দৃশ্য। বাঁশগাছের কঁচি অংশ অনেকে খেয়েও থাকেন। তবে সম্ভবত বাঁশ থেকে বিস্কুট বা কুকি এই প্রথম তৈরি করে দেখাল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা। জানা গেছে এই বিস্কুট স্থানীয়ভাবে বাজারে ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

অচিরেই মিলবে বাংলাদেশের বাজারেও। গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক বাঁশ দিবসে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব বাঁশ বা বাঁশের কোঁড়ল থেকে এই বিস্কুট তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন। ‘বাঁশের তৈরি সুস্বাদু কুকি’ তিনি নিজেও খেয়ে দেখেছেন, আর সেই ছবি পোস্ট করেছেন টুইটারেও। ত্রিপুরা সরকার আরো জানিয়েছে, দেশের বাজারে যেমন, তেমনি আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের বাজারেও তারা এই বাঁশের বিস্কুট বাজারজাত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। গোমতী নদী দিয়ে সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ নৌপথে ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য চলাচল শুরু হয়েছে, সেই পথেই ‘বাঁশের বিস্কুট’ প্রতিবেশী দেশে পাঠাতে চায় ত্রিপুরা।

বাঁশের কোঁড়ল দিয়ে এই অভিনব ও স্বাস্থ্যকর বিস্কুট তৈরি করেছে ত্রিপুরার একটি সরকারি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যার নাম ব্যাম্বু অ্যান্ড কেইন ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিসিডিআই)। বাঁশ ও আখের ফলন ও সেগুলো দিয়ে নানা ধরনের কৃষিপণ্য তৈরির জন্য গবেষণা করে থাকে এই সংস্থা। বিসিডিআইয়ের প্রধান ড. অভিনব কান্ত ও সহকর্মীরাই ত্রিপুরার মুলি বাঁশ থেকে এই বিস্কুট তৈরি করেছেন। এই স্মরণীয় দিনটিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব বলেন, ‘ত্রিপুরার মানুষের প্রিয় খাদ্য বাঁশের কোঁড়লকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বাজারজাত করার লক্ষ্যে উদ্যোগী আমাদের সরকার। এখন আন্তর্জাতিক বাঁশ দিবসে প্রাথমিকভাবে বাঁশ কোঁড়লের বিস্কুট বাজারজাত করার সূচনা করলাম।’

ত্রিপুরা সরকার আরো জানাচ্ছে, ময়দা, আটা ও বিস্কুট তৈরির অন্যান্য উপকরণের সঙ্গেই বাঁশ কোঁড়লকে পেস্ট করে এই বিস্কুট প্রস্তুত করা হয়েছে। মাল্টি ভিটামিনস, মিনারেলসে পরিপূর্ণ বাঁশ কোঁড়ল স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী। গবেষকদের দাবি, এই খাদ্য ক্যানসার ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা নেয়। বাঁশের কোঁড়লে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকায় হজমেও সুবিধা হয়। পাশাপাশি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য এই যে, সুন্দরী ত্রিপুরার মাটিতে যে বাঁশ জন্মায় তার ৮০ শতাংশই মুলি বাঁশ। মুলি বাঁশের পেস্ট দিয়েই এই বিস্কুট প্রস্তুত করা হয়েছে।’

বাঁশ কোঁড়লের বিস্কুটকে বাজারজাত করার ক্ষেত্রে প্যাকেজিংয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ ও ত্রিপুরার জনজাতি মানুষের অন্যতম ঐতিহ্য ‘রিশা’। বাঁশের তৈরি শিশিতে রাখা থাকবে বাঁশ কোঁড়লের বিস্কুট। আর তার আবরণ থাকবে রিশার। আগামী দিনে বাঁশের শিশিতে মধুও বাজারজাত করা হবে বলে বিপ্লব দেব জানান। তার কথায়, ‘সামগ্রিক বিষয়টিকে আমরা অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে চাই। আশা করি আমরা তা করতে সক্ষম হব। এই বিস্কুট প্রস্তুত করার জন্য আমি বিসিডিআইকে ধন্যবাদ জানাই।’ ত্রিপুরার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তারা এই নতুন প্রোডাক্টটির ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য মূলত বাংলাদেশের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন। সমিতির একজন সিনিয়র সদস্যের কথায়, ‘আমাদের রাজ্যের বাজার খুব ছোট। বরং বাঁশের বিস্কুটের মতো প্রিমিয়ার প্রোডাক্টের চাহিদা ঢাকা বা চট্টগ্রামে খুব ভালো হবে বলে আমাদের বিশ্বাস, আর এখন পণ্যও সেখানে সহজেই পাঠানো সম্ভব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close