বিবিসি

  ১২ আগস্ট, ২০২০

সংকট ও সম্ভাবনায় টেলিমেডিসিন সেবা

করোনা মহামারির মধ্যে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা। এই বাস্তবতায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়াও নানা ধরনের অনলাইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান টেলিমেডিসিন সেবাদানের কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু সেখানেও নানা ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে। এ সত্ত্বেও ক্রমে বেড়ে চলেছে টেলিমেডিসিন কার্যক্রম।

সেবাগ্রহীদের অভিজ্ঞতা : সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম জুলাই মাসের শুরুতে ঢাকার একটি সুপরিচিত বেসরকারি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা নেওয়ার জন্য অগ্রিম অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেন ও তাকে জানানো হয়েছিল যে পরদিন ভোরে তাকে ফোন করা হবে। কিন্তু নির্ধারিত দিন সারা দিন অপেক্ষা করেও কারো ফোন পাননি তিনি। পরে কয়েক দফা যোগাযোগের পর বিকাশে ১ হাজার টাকা দিতে বলা হয় তাকে। টাকাও পরিশোধ করেন, কিন্তু দীর্ঘসময়েও ফোন পাননি।

রোজিনা বলেন, ‘সেই ফোন এলো দিন শেষে সন্ধ্যায়। তাও হোয়াটসঅ্যাপে। মনে হলো ডাক্তার বাসায় আর তার সহকারী হাসপাতালে। কথাবার্তা তেমন কিছুই বোঝা গেল না বারবার লাইন কেটে যাচ্ছিল। ডাক্তারের সহকারী প্রেসক্রিপশন দিয়ে ১৫ দিন পর যোগাযোগ করতে বললেন। ১৫ দিন শেষে যোগাযোগ করলে এবার আরো ৫০০ টাকা বেশি দিতে বলা হলো। তিনি বলেন, ‘আমি যা বুঝেছি তা হলো সিরিয়াস দরকারে টেলিমেডিসিনে ভরসার সময় বাংলাদেশে এখনো আসেনি।’ বিবিসি বাংলার একজন কর্মী সম্প্রতি টেলিমেডিসিন সেবা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

তিনি বলেছেন, টেলিমেডিসিন বিষয়ে হাসপাতালগুলোতে ফোন করলে রেকর্ড করা কথা বাজতে থাকে। কথা বলার জন্য কাউকে পেতে অনেক ঝক্কি ঝামেলা ও সময় লেগে যায়। সব মিলিয়ে তথ্য পাওয়াই মুশকিল।

তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত অনলাইনে ভিডিওকলে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞকে সংযুক্ত করে দেয় একটি অনলাইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। পরে দেখা যায় সমস্যা আসলে গ্যাসট্রোলজির। অর্থাৎ যাদের কল সেন্টারে বসানো হয়েছে তারা প্রশিক্ষিত নন। ফলে তারা ভুল করে একজন রোগীকে অন্য ধরনের ডাক্তারের সঙ্গে সংযুক্ত করছেন।’

তিনি বলেন, ‘আবার ডাক্তারের সরাসরি রোগীর শরীরের অনেক কিছু পরীক্ষা করার থাকে। সেটা টেলিমেডিসিনে সম্ভব না। সে কারণে রোগীর মধ্যে অতৃপ্তি কাজ করে। সে কারণে আবার হাসপাতালেই গিয়েছি আমি।’

চুয়াডাঙ্গা সদরের অধিবাসী রেহানা আক্তার। ঢাকার একটি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা চালুর বিজ্ঞাপন দেখে বড় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাবেন মনে করে দুই দিন চেষ্টা করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলেন। রেহানা বলেন, ‘যার সঙ্গে কথা বললাম তিনি কি বললেন আমি বুঝিনি। আবার যে ওষুধগুলোর নাম আমাকে এসএমএস করে পাঠালেন সেগুলো খাওয়া ঠিক হবে কিনাÑ এ নিয়ে চিন্তা করে আর খাইনি।’

তবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কিংবা করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন এমন অনেকেও আছেন।

রফিক চৌধুরী নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেছেন, তিনি তার সন্তানের জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালে নির্ধারিত ডাক্তার না পেয়ে টেলিমেডিসিনের সহায়তা নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কাক্সিক্ষত বিশেষজ্ঞকে পেয়েছিলাম। তার পরামর্শে উপকৃত হয়েছি।

চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা : স্বাস্থ্য বিভাগ ও আইইডিসিআরের যে যৌথ টেলিমেডিসিন সেবা সেখানে কাজ করছেন ডা. আমেনা সুলতানা চৌধুরী। তিনি বলেন টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সাধারণত প্রাথমিক সেবাটাই দিয়ে থাকেন তারা। উপসর্গ শুনে প্রাথমিক করণীয় সম্পর্কে বলি। রোগীরাও তাতে উপকৃত হন। আর যদি মনে হয় প্রাথমিক চিকিৎসায় হবে না। তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কিংবা রিপোর্টগুলো হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে পাঠাতে বলি। সেগুলো দেখে পরামর্শ দিয়ে থাকি।

আমেনা সুলতানা চৌধুরী বলছেন, যেহেতু প্রাথমিক সেবা তাই মানুষ উপকৃত হয়েছে অনেক। অনেকেই হাসপাতালে যেতে পারছিল না নানা কারণে। ফলে টেলিমেডিসিন তাদের ক্ষেত্রে দারুণ সহায়ক হয়েছে।

মূলত মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে ভিডিওকলের মাধ্যমে রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকরা কথা বলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়াটাই টেলিমেডিসিন সেবা। এখন ঢাকা ছাড়াও জেলা উপজেলা পর্যায়েও টেলিমেডিসিন দেওয়া শুরু করেছে হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো। গত সোমবার স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন যে, তারা এ পর্যন্ত ১ কোটি ৮৫ লাখ ফোন কল পেয়েছেন তাদের হটলাইনসহ নির্ধারিত টেলিফোন নম্বরগুলোর মাধ্যমে। অন্যদিকে শুধু আগের ২৪ ঘণ্টায় টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৩৭৩ জন এবং এ পর্যন্ত টেলিমেডিসিন সেবা পেয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭১৪ জন।

মূলত স্বাস্থ্য বিভাগ ও আইইডিসিআরের যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা কল সেন্টারের মাধ্যমেই ফোনগুলো আসছে। এসব কল সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করছেন বিপুল পরিমাণ চিকিৎসক। এর বাইরেও সরকারিভাবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়নে যে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র আছে সেগুলোতেও কম্পিউটার, প্রিন্টার, ডিজিটাল ক্যামেরা, স্ক্যানার এবং ইন্টারনেট মডেম দেওয়া হয়েছে।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, প্রাথমিকভাবে ২২টি ইউনিয়ন ও তথ্যসেবা কেন্দ্রে স্কাইপ ব্যবহার করে টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা এসব অফিসে বসে প্রতি কর্ম দিবসে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ১৮টি হাসপাতালে উন্নতমানের টেলিমেডিসিন সেবা চালু আছে।

এছাড়া প্রতিটি উপজেলা হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ওয়েব ক্যামেরা প্রদান করা হয়েছে যাতে করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন।

পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকেও টেলিমেডিসিন কার্যক্রমে যুক্ত করা হয়েছে। আবার বেসরকারি উদ্যোগে টেলিমেডিসিন সেবার উদ্যোগ নিয়েছিল, এর সঙ্গে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন যাতে বিএমএসহ চিকিৎসকদের তিনটি সংগঠন জড়িত আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close