আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৭ এপ্রিল, ২০২০

করোনায় হেরেও সন্তানকে দেখালেন পৃথিবীর মুখ

মেরি অ্যাগিওয়া অ্যাগিয়াপং। ২৮ বছর বয়সি নার্স। কাজ করেন ইংল্যান্ডের শহর লুটনের ‘লুটন অ্যান্ড ডানস্ট্যাবল’ হাসপাতালে। যেখানে করোনা রোগীদের নিবিড় সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। অথচ তিনি ছিলেন গর্ভবতী নারী। শুধু তাই নয়, তার অবস্থা ছিল প্রায় শেষের দিকে। আর মাত্র কয়েকদিন পরই নতুন অতিথি পৃথিবীতে নিয়ে আসার অপেক্ষায় ছিলেন এই নারী। কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস, করোনা রোগীদের সেবা দিতে দিতে নিজেই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে গেলেন অ্যাগিয়াপং। ৫ এপ্রিল পরীক্ষা করার পর জানা গেল, তিনি করোনা পজিটিভ। ৭ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এতদিন মানুষকে সেবা দিয়ে এলেও, এবার করোনা আক্রান্ত হয়ে নিজেই সেবা নিতে শুরু করলেন। এক পর্যায়ে ডাক্তাররা দেখলেন, তার অবস্থা উন্নতির দিকে। এ অবস্থা দেখে ডাক্তাররাও তার ব্যাপারে কিছুটা নির্ভার হয়ে উঠেন। কিন্তু হঠাৎ করেই পরিস্থিতি বদলে যায়। খুব দ্রুত অবনতি ঘটে তার স্বাস্থ্যের। এরপরই ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নেন তার জরুরি সিজারিয়ান অপারেশন করে ফেলবেন।

তাতে যদি বাচ্চাটার জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়! সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ এপ্রিল জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয় তার। জন্ম দেন একটি কন্যা সন্তান। এর কিছুক্ষণ পরই সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অ্যাগিয়াপং। করোনাক্রান্ত মায়ের মৃত্যু হলেও সদ্যোজাত মেয়ে করোনা পজিটিভ কিনা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লুটন হাসপাতালের ডাক্তাররা বলছেন, পরীক্ষার রিপোর্ট আসলেই কেবল জানা যাবে সেটা। লুটন অ্যান্ড ডানস্ট্যাবল হাসপাতালে মেরির সহকর্মীরা বলছেন, এক অসাধারণ নার্স ছিলেন তিনি।

শুধু তাই নয়, সেবার ক্ষেত্রে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন তিনি। হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, মেরির শারীরিক অবস্থা খুব বেশি অবনতি হওয়ার পরই ডাক্তাররা তার জরুরি সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন, যাতে অন্তত গর্ভে থাকা বাচ্চাকে বাঁচানো যায়। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী ডেভিড কার্টার বলেন, মেরির নবজাতক বাচ্চার বেঁচে থাকা হচ্ছে এই গভীর অন্ধকার সময়ে এক আলোকবর্তিকা।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গভীর দুঃখের সঙ্গেই জানাতে হচ্ছে যে, আমাদের অন্যতম সেরা নার্স মেরি অ্যাগিওয়া অ্যাগিয়াপং, ১২ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন। এই হাসপাতালে তিনি পাঁচ বছর কাজ করেছেন। আমাদের দলের মধ্যে তিনি ছিলেন খুবই উঁচুদরের এবং সবার ভালোবাসার পাত্রী। অসাধারণ একজন নার্স। এছাড়া সেবার ক্ষেত্রে স্থাপন করেছেন অনন্য একটি উদাহরণ।

অ্যাগিওয়া অ্যাগিয়াপংয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয় তার ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করার বিষয়ে। এ কারণে তার কোনো ছবি প্রকাশ করা হয়নি। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের আরো তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিভাগের এই সংস্থাটি। সব মিলিয়ে এনএইচএসের কর্মীদের মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৪৫ জনে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close