একজন ব্যতিক্রমী মানুষের অসমাপ্ত গল্প
সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে কিছু মানুষ আছেন যারা গড়ে ওঠেন সমাজের প্রয়োজনেই। কাজ করেন যারা সমাজ বিনির্মাণের জন্য। কিন্তু কিছু মানুষ এই সমাজের ফেরিওয়ালা হিসেবেও কাজ করেন, তবে তা নীরবে নিভৃতে। এমনই একজন মানুষ সাইফুল ইসলাম সিফাত। আত্মপ্রচার নয়, আত্মতৃপ্তিই যার মূল উদ্দেশ্য। মানবতার কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া তেমনই একজন মানুষ তিনি। ডিজিটাল এই যুগে নারী-পুরুষের বেকারত্বকে হার মানিয়ে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে কাজ করে যাচ্ছেন এই ব্যতিক্রমী মানুষটি। এ ছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েও মানবিক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার নজির রয়েছে সিফাতের জীবনে। তার এই ব্যতিক্রমী কর্মযজ্ঞের কথা তুলে ধরেছেন মো. মাসুদ হোসেন
আধুনিক পৃথিবীর সব থেকে ব্যস্ত থাকার মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষার্জনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের আবশ্যকতা অপরিহার্য। আজকাল যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বপ্রথম আমরা ইন্টারনেটকেই নির্ভরযোগ্য মনে করি। আর সেই নির্ভরশীলতা থেকে যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত আমরা অনলাইনে সময় ব্যয় করি তখন আমাদের ব্যক্তিগত, শারীরিক ও নানা রকম পারিবারিক সমস্যায় পতিত হই। আর এতে করে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন। অতিরিক্ত মাত্রায় ডিজিটাল এই আসক্তি থেকে বাড়তে থাকে বেকারত্বের হার। তরুণদের অনলাইনের এই বেকারত্ব জীবন থেকে বাস্তব কর্মময় জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন সাইফুল ইসলাম সিফাত।
চাঁদপুর হাজীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা শিক্ষক পিতা মরহুম ছিদ্দিকুর রহমানের ৬ ছেলেমেয়ের মধ্যে ২য় সন্তান সিফাত। ভ্রমণপিপাসু এই ব্যক্তি দেশের প্রায় সবকটি জেলায় ঘুরতে গিয়ে অর্জন করেছেন বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা। আর এই অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পান মানুষের বাস্তব জীবনের অনুভূতি। সমাজের নিম্ন থেকে বৃত্তবান সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বাস্তবিক জীবনযাত্রা খুব কাছ থেকেই দেখেছেন তিনি। সে থেকেই অসহায় ও কর্মহীন মানুষগুলোর প্রতি দুর্বলতা কাজ করে তার। ২০১৭ সালে উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও জেলায় ভয়াবহ বন্যা ও গত বছরের সিলেটের সুনামগঞ্জ ও সম্প্রতি ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দিনের পর দিন সেখানে থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ছিলেন এই মানবিক মানুষটি। দুই সন্তানের জনক এই ব্যক্তি পেশায় একজন গণমাধ্যমকর্মী হলেও চাঁদপুর জেলা জুড়ে তাকে চিনে বহু গুণের অধিকারী একজন মানবিক মানুষ হিসেবে।
এ ছাড়া প্রতি বছর শীতের রাতে ফুটপাতে গিয়ে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণসহ বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে গরিব, অসহায়, পঙ্গু ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাদের মাঝে সহায়তা প্রদান করেছে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে। দেশের এই দুর্যোগ মুহূর্তে এমন মানবিক কাজ করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলার প্রথম গণমাধ্যম ও সমাজকর্মী হিসেবে ঘরবন্দি থাকতে হয়েছে তাকে। এ ছাড়া মেধাবী দুস্থ শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গরিব জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান, কর্মহীনদের স্বাবলম্বী করাসহ অসহায় আশ্রয়ণহীনদের মাঝে ঘর প্রদান করছেন তিনি। সেই সঙ্গে কখনো মাদরাসার এতিমদের পাশে আবার কখনো কোনো দরিদ্র মানুষের ঘরে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন কোনো না কোনো ভালো কাজ করা তার নিত্যদিনের অভ্যাস।
সিফাতের বাবা মরহুম সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন স্বনামধন্য একজন স্কুলশিক্ষক ও মসজিদের ইমাম। তার আদর্শে তৈরি ছেলে সাইফুল ইসলাম সিফাতও মানবিক কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন বিভিন্ন মহলে। বিশেষ করে জেলার স্বেচ্ছাসেবীদের পাশে থেকে উপদেশ কিংবা স্বেচ্ছাশ্রমে মানবিক কাজে সম্পৃক্ত থাকতে দেখা যায় বহু বছর ধরে। প্রায় ১০টির বেশি সামাজিক সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন ২টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। একটি ‘আলোর বাহন’ চাঁদপুর জেলাজুড়ে ও অপরটি ‘আওয়ার ফিউচার বাংলাদেশ’ দেশ জুড়ে সামাজিক কার্যক্রম করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যম ব্যক্তিদের বিপদে আপদেও এগিয়ে আসেন এই মানবিক যোদ্ধা। তার এমন উদারতায় তাকে আপন করে নিয়েছেন হাজীগঞ্জের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ উপজেলার অসংখ্য বেকার নারী-পুরুষের সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে রয়েছে তার অসামান্য অবদান। তাদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন- হাজীগঞ্জ ই-কমার্স প্ল্যাটফরম। বিভিন্ন পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় উদ্যোক্তাদের মন জয় করে নিয়েছেন খুব সহজেই। এতে সফল হয়ে ভালোই আছেন শতাধিক বেকার যুবক ও ঘরে থাকা নারীরা। তিনি জনগণের আস্থা ও ভালোবাসাকে পুঁজি করে গরিব-দুঃখী মেহনতি মানুষের দুঃসময়ের পরম বন্ধু হিসেবে পাশে রয়েছেন। প্রতিনিয়ত দুস্থ অসহায় বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা করে যাওয়া সাইফুল ইসলাম সিফাত বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকেই মানবিক কাজগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করে আসছি। তারপর পেশাগত ও সাংসারিক জীবনে এসেও মানবসেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে চেষ্টা করেছি। এমন মানবিক কাজগুলো করতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কর্মহীনদের স্বাবলম্বী করে তোলতে অতীতের মতো আগামীতেও যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাব ইনশাআল্লাহ। রশেষে আমার মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের বুকভরা ভালোবাসা ও দোয়া নিয়েই বাকি জীবনটুকু কাটিয়ে দিতে চাই।
লেখক : গণমাধ্যম ও সমাজকর্মী
"