কে এম মাসুম বিল্লাহ

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পজিটিভ প্যারেন্টিং নিয়ে কাজ করছেন আলী আদনান

আমাদের সমাজে শিক্ষাজীবন শেষ করে একটি ভালো অবস্থানে যাওয়াকে সাধারণত সফলতার দৃষ্টিতে দেখা হয়। আমাদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত থাকেন। অধিকাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানদের ছোট থেকেই একটি ভালো স্কুলে ভর্তি করতে চান, পরে ভালো কোনো মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে। কেউ চান তার সন্তান ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হোক, কারো আশা তার সন্তান বিসিএস ক্যাডার কিংবা বড় পোস্টে চাকরি করুক। এ জন্য ছোটবেলা থেকেই স্কুল-কলেজের পাশাপাশি আলাদাভাবে বাসায় প্রাইভেট টিউটর ও কোচিং করানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে যে বিষয়টি অভিভাবকদের কাছে গুরুত্ব পায় না, সেটা হলো সন্তান ভালো মানুষ বানানোর জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও সে অনুযায়ী তাকে ছোটবেলা থেকে হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়া।

আমাদের সমাজে শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের কথা বেশ আলোচিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া সন্তানদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভিভাবকদের অভিযোগের শেষ নেই। অথচ অনেক অভিভাবক বুঝতেই চান না যে তাদের সন্তানদের কথা না শোনার পেছনে অভিভাবকদেরই দায়ভার বেশি! অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের মানুষ হিসেবে দেখতে চাইলেও তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো অবচেতন মনে এড়িয়ে যান! বলা হয়ে থাকে, একজন মানুষের নীতিনৈতিকতার ভিত তৈরি কিংবা আদর্শ মানুষ হয়ে ওঠার পেছনে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী ছোট সময় থেকেই ব্যাড প্যারেন্টিং কিংবা ব্যাড টিচিংয়ের শিকার হয়, যা কি না তাদের পরবর্তী জীবনে প্রভাব রাখে। আর এসব চিন্তাভাবনা থেকেই আদর্শ মানুষ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন একজন তরুণ, নাম তার আলী আদনান।

আলী আদনান, চার বছর ধরে প্যারেন্টিং নিয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে তিনি প্রায় ৫০টিরও বেশি অনলাইন-অফলাইন সেমিনার পরিচালনা করেছেন। ২০২২ সালে তিনি ‘দ্য আর্ট অব প্যারেন্টিং’ নামে একটি বাংলা বই লিখেছেন, যেখানে আধুনিক প্যারেন্টিংয়ের চ্যালেঞ্জ এবং তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন।

২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া ‘আনন্দ পাঠশালা’ নামে ব্যতিক্রমী একটি প্রি-স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে তিনি ‘শুদ্ধ মানুষ’ নামে একটি সাবজেক্ট চালু করেছেন। এর মূল লক্ষ্য অভিভাবকদের মাঝে গুড প্যারেন্টিং চর্চা বাড়িয়ে শিশুদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি ‘মজারু’ নামে একটি জনপ্রিয় অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফরমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যেখানে তিনি প্যারেন্টিংবিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও তৈরি করেছেন। তার তৈরি কনটেন্ট প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ দর্শক নিয়মিত দেখেছেন। এ ছাড়া তিনি ‘যত্ন গড়ি’ নামে একটি সংস্থার সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যার মাধ্যমে তিনি প্রায় ৪০০ অভিভাবককে স্মার্ট প্যারেন্টিং নিয়ে অনলাইন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ‘সন্তানকে শুদ্ধ মানুষ বানাতে চান?’ নামে বাংলা ভাষায় প্রথম পজিটিভ প্যারেন্টিং হ্যান্ডবুক প্রকাশ করতে যাচ্ছেন।

প্রাথমিকভাবে পাইলটিং আকারে কাজ শুরু করলেও ইতিমধ্যেই আলী আদনান তার পরিশ্রমের সুফল পেতে শুরু করেছেন। আলী আদনানের মতে, অভিভাবকদের সচেতন করার মাধ্যমে তাদের সন্তানদের ওপর সেই প্রভাব পড়ছে। পজিটিভ প্যারিন্টিংয়ের মাধ্যমে সন্তানদের দুর্বল দিকগুলোয় তাদের আঘাত না করে বরং সন্তানদের শক্তিশালী জায়গাগুলোয় বেশি উৎসাহ দেওয়া হয়। সন্তান কোনো অন্যায় করলে তাকে ভয়ভীতি না দেখিয়ে কোনো সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়, পজিটিভ প্যারেন্টিংয়ের মাধ্যমে সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই নৈতিকতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, শেয়ারিং শেখানো যায়, যা তাদের পরিবর্তী জীবনকে প্রভাবিত করে। আলী আদনানের মতে, অ্যাকাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সন্তানদের জন্য বাস্তবমুখী এই শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু শিশু-কিশোররা তাদের পরিবার থেকেই নৈতিকতা শিক্ষা পায়, তাই পরিবারের উচিত তাদের সন্তানদের সঠিক শিক্ষাটা প্রদান করা। যেখানে পজিটিভ প্যারেন্টিংয়ের মতো বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মতো দেশে পজিটিভ প্যারেন্টিং নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না, তবে সময় এসেছে এ বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার। সময় এসেছে অভিভাবকদের সচেতন করার, সন্তানকে শুধু ক্লাসে প্রথম বানানোই সফলতা নয় বরং পজিটিভ প্যারেন্টিংয়ের মাধ্যমে সন্তানকে নীতি আদর্শ ও নৈতিকতাসমৃদ্ধ ভালো মানুষ বাানোটা আরো বেশি জরুরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close