মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
পোষা পাখিপ্রেমীদের মিলনমেলা
পাখি কে না ভালোবাসে। সম্প্রতি নানা রং আর প্রজাতির পাখির মেলা বসেছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে। নানা বয়স, পেশার মানুষ জড়ো হয়েছিল পাখি দেখার জন্য। মেলা আয়োজক ছিল এভিয়ান কমিউনিটি অব বাংলাদেশ। এভিয়ান কমিউনিটি অব বাংলাদেশ হলো পোষা পাখিপ্রেমীদের প্রাণের সংগঠন। যারা শুধু পোষা পাখির উন্নয়নেই নয়, বরং বিভিন্ন সময়ে অসহায় ও দুস্থদের সাহায্য করার মতো মানবিক কাজ করে। আবার বন্য পাখি যেন মানুষ না পোষে সেজন্যও তাদের কাজের শেষ নেই।
মেলার প্রধান অতিথি ছিলেন কাজী ফিরোজ রশিদ, এমপি। আরো ছিলেন ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, (ভাইস চ্যান্সেলর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম (ট্রেজারার-শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), এভিয়ান কমিটির সভাপতি মোহম্মদ আলী চৌধুরী, এভিয়ান কমিটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বজলুর রশিদ সেলিমসহ অনেকে। বক্তারা পোষা পাখি সেক্টরের উন্নতির পাশাপাশি প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার কথা বলেন।
মিলনায়তনে লম্বা টেবিল তার ওপর খাঁচায় সুন্দর করে সাজানো নানা রঙের পাখি। হাতের ডান পাশে ফিঞ্চ, ককাটেল প্রজাতির পাখি, মাঝের সারিতে বাজরিগার, টারকুইজিন, ম্যাকাওসহ কত শত পাখি। ককাটেল পাখিগুলো মিষ্টি সুরে শিস দিয়ে যাচ্ছিল। দুটি লাভবার্ড এঁকে অপরের গা খুঁটে দিয়ে ভালোবাসার জানান দিচ্ছিল। ম্যাকাও কড়া সুরে ডেকে হয়তো বলছিল, এত মানুষ তার ভালো লাগছে না। গোল্ডিয়ান ফিঞ্চের নৃত্য মুগ্ধ হয়ে দেখছিল মানুষজন। একজন তো বলেই বসল, এত সুন্দর গেয়ে নেচে মেয়ে বন্ধুকে আহ্বান তো মানুষও করে না।
দর্শনার্থীদের কেউ কেউ পাখির সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে ওঠে। পাখিগুলোও খুনসুটিতে বেশ সাড়া দিচ্ছিল। ফিঞ্চ, বাজরিগার, লাভবার্ড, ককাটেল, নিওফেমা প্রজাতির পাখিগুলো ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ছিল। তাদের জন্য উপযোগী খাঁচায়। পাখির সঙ্গে থাকা এক্সপাটরা দিচ্ছিল দর্শনার্থীদের নানা প্রশ্নের জবাব। আন্তর্জাতিক পাখির শোগুলো যেভাবে করা হয়। এভিয়ানের পাখির শো ঠিক তেমনিই ছিল। পাঁচ টাইপের পাখির প্রতিযোগিতায় যাদের বিচারক করা হয়েছে। তাদের অনেকেই বিশ্বখ্যাত পোষা পাখি এক্সপাটদের দ্বারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বিচারের কলাকৌশল তারা ভালোই জানেন। এমনটাই এভিয়ানের কর্মকর্তারা জানান।
এভিয়ান কমিনিউনিটির প্রচার সম্পাদক সাইফুর রহমান মিল্টন জানান, পাখির জন্য কেজ, লাঠি, পানির ফিডার, খাবারের বাটি এবং পাখির জন্য মিনারেল ওয়াটারের ব্যবস্থা তারা করেছেন। মিলনায়তনের হাতের ডানে ম্যাকাও পাখিসহ নানা রকম বড় পাখি দেখা যায়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাখির দোকান অ্যাংরি বার্ডস বিডি পেট স্টোর-এর মালিক হাসান রাজ জানান, ম্যাকাও পাখি নিয়ে নানা কথা। তিনি বলেন, ম্যাকাও অন্যসব পাখির মতো বাংলাদেশে ভালোই ডিম, বাচ্চা দিচ্ছে। পোষা পাখিপ্রেমীদের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে বলে তিনি জানান। হাসান রাজের স্টলে সব বড় বড় পাখি দেখা যায়। দর্শনার্থীরা প্রচুর ভিড় করছিলেন সেখানে।
মেলায় লরি, কনুইর, কাকাতুয়া, ডায়মন্ড ডোভ, ফরপাস, রিংনেক, ম্যাকাওসহ অনেক দৃষ্টিনন্দন পাখির সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ ছিল দর্শনার্থীদের। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক পাখিপ্রেমী তাদের সেরা পাখিগুলো নিয়ে মেলায় অংশ নেন। মেলায় নানা জায়গায় পোষা পাখি নিয়ে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, টিভি মনিটরে পাখি দেখানোর ব্যবস্থা ছিল। পাখি দেখতে দেখতে গলা শুকিয়ে গেলে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ছিল খাবারের দোকান। তবে দাম বাইরের দোকানের মতোই। এ ধরনের মেলা আসলে শুধু পোষা পাখি সম্পর্কে মানুষকে উৎসাহিতই করে না। পাশাপাশি যারা ব্রিডার (পাখি উৎপাদন করে) তাদের আগ্রহী করে তোলে আরো নানা প্রজাতির পাখির উৎপাদনে। করোনাসহ নানা কারণে পাখির ব্রিডারদের মধ্যে একটা ঝিমুনিভাব চলে আসছিল, যা এখন কেটে যাবে। এমনটাই বলছিলেন মির্জা ফেরদৌস গালিব। অর্গানাইজিং সেক্রেটারি, এভিয়ান কমিউনিটি।
মেলার আয়োজক ‘এভিয়ান কমিউনিটি অব বাংলাদেশ’ সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধিত। শৌখিন পাখিপ্রেমীদের জন্য সংগঠনটি এবার দ্বিতীয়বারের মতো এভিয়ান এক্সেটিক বার্ড শো এবং ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩ আয়োজন করে।
প্রসঙ্গত, এভিয়ান কমিউনিটি ২০১৫ সালে ফেসবুক গ্রুপ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ফেসবুকে গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৩৩ হাজার। এরই মধ্যে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত পাখিপ্রেমীরা এভিয়ানের এই সুন্দর আয়োজনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।
বিশ্বের অনেক দেশেই পোষা পাখি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। বাংলাদেশেরও এমন সুযোগ রয়েছে। পোষা পাখি পালনে বেকারদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ তৈরি হবে। আবার গৃহিণী, স্টুডেন্টরা পাখি পালন করে হাত খরচের টাকা আয় করতে পারেন। এ রকম নানা সম্ভাবনার কথা বলছেন এভিয়ান কমিউনিটির অভিজ্ঞ পাখি পালকরা।
"