reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ মার্চ, ২০২৩

হাসিবের ভালোবাসা কাঁটায়

কাঁটার বিন্যাস এবং কাঠামোর মধ্যে এক ধরনের সৌন্দর্য আছে। এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন হাসিবুল হাসান। প্রায় ১ হাজার ৫০০ গাছ তার। প্রজাতির সংখ্যা তিনশোর মতো। বেশির ভাগই ক্যাক্টাস। অস্ট্রেলিয়ার ব্র্রিসবেন শহরে নিজ বাড়িতে হাসিবুল হাসান গড়ে তুলেছেন অপূর্ব এক বাগান, যা দেশি-বিদেশি বাগানপ্রেমীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাকে রিয়ে লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন হাসিবুলরা। তখন তিনি ছোট। বাড়িওয়ালার ছিল সবজি, ফলের গাছের বাগান। ছাদে খেলতে গিয়ে হাসিবুল এসব দেখতেন। তখনই তার গাছের প্রতি আগ্রহ জন্মে। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি কেনেন। তখন তার আগ্রহে ডালপালা গজায়। তিনি অল্প অল্প করে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করা শুরু করেন। মূলত ২০১৬ থেকে সংগ্রহ বাড়তে থাকে ক্যাক্টাসে/সাকুলেন্টগাছের। হাসিবুলের মা গাছপালা পছন্দ করতেন। অ্যাপার্টমেন্ট বাসা হওয়ায় সেভাবে তার বাগান করা হয়নি। হাসিবুল সরকারি চাকরিজীবী। প্রায় দশ বছর তিনি বাগান করার সঙ্গে জড়িত।

বাড়ির চারপাশ এবং দুটি বারান্দা। এতটুকুন জায়গায় তার বাগান। জায়গা অল্প হলেও সুন্দর করে গুছিয়ে বাগান করেছেন তিনি। পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি। বাগানে আরাম করে বসে গাছ দেখার সুব্যবস্থা রেখেছেন তিনি। তার বাগানে ক্যাক্টাস/সাকুলেন্ট-জাতীয় গাছই বেশি। বেশির ভাগ গাছ টবে লাগানো। কিছু দেশীয় ফুল যেমন বেলি, কামিনী, রঙ্গন আছে। শাকসবজির মধ্যে আছে করলা, মিষ্টিআলু, মরিচ আর পুঁইশাক। কমলা, ত্বিন ফলের গাছ তার বাগানের শোভা বাড়িয়েছে।

অভিজ্ঞ ক্যাক্টাস সংগ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ইন্টারনেটে পড়াশোনা তো আছেই। এভাবেই তিনি ক্যাক্টাসের যত্নআত্তি শিখেছেন। পরীক্ষামূলকভাবেও নানা কাজ করেছেন। তিনি বলেন, কখনো মাটি তৈরির উপাদান বদল করে। রোদের পরিমাণ বাড়িয়েও দেখেছি। গাছের বৃদ্ধি কেমন হয়। অনেক গাছ সরাসরি রোদ পছন্দ করে না। কিছু গাছ আবার ছায়াতেই থাকতে পছন্দ করে।

হাসিবুলের বাগানে গাছের সংখ্যা প্রায় ১৫০০-এর মতো। প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৩০০। তবে ক্যাক্টাস প্রজাতির গাছের সংখ্যা বেশি। দুর্লভ প্রজাতির গাছের প্রতি হাসিবুলের খুব আগ্রহ। তিনি আগাভে হোয়াইট রাইনো, কোপিয়াপোয়া ক্যাক্টাস সংগ্রহ করেছেন। দুর্লভ স্নেইক প্লান্টও আছে তার, যেগুলোর কিছুু চারা করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। অনেক প্রজাতির ক্যাক্টাসে গোড়া থেকেই চারা হয়।

হাসিবুল বলেন, আমার বাগানে ইচিনপসিস ক্যাক্টাস সবচেয়ে বেশি বাচ্চা দেয়। সারা অবয়বে কাঁটা ক্যাক্টাসের। এরই মধ্যে বেশির ভাগ ক্যাক্টাসে ফুল ফোটে। দেখতে বেশ সুন্দর। এ জন্য গাছে পরিণত হওয়া পর্যন্ত পর্যাপ্ত রোদ পেতে হয়। জানা গেল তার কাছে।

যখন দুর্লভ কোনো গাছ সংগ্রহ করতে পারেন। গাছের নতুন চারা হয়। ফুল, ফল হয়। তখন হাসিবুলের খুব ভালো লাগে বলে জানান। আবার একটানা বৃষ্টি কিংবা পোকার আক্রমণে গাছ যখন মারা যায়। তখন তিনি খুব মন খারাপ করেন।

ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া/পোকার আক্রমণে ক্যাক্টাস মারা যায়। এটাই ক্যাক্টাস বাগানিদের বড় চ্যালেঞ্জ। হাসিবুল বলেন, এর জন্য ফাঙ্গিসাইড এবং বিভিন্ন ধরনের স্প্রে ব্যবহার করতে হয়। সপ্তাহে অন্তত একবার সব গাছ পর্যবেক্ষণ করা উত্তম। টানা ২/৩ দিনের বেশি বৃষ্টি হলে ছাউনির নিচে গাছ নিয়ে আসতে হয়। নতুবা শিকড় পচে যাবওয়র সম্ভাবনা থাকে। কিছু দেশে বিশেষ ধরনের ক্যাক্টাস কাঁটা ফেলে খাদ্য হিসেবে খাওয়া হয়। অপুনটিয়া ক্যাক্টাস রান্না করে খাওয়া যায়।

হাসিবুলের ক্যাক্টাসের আকার যেমন। তার চেয়ে একটু বড় পাত্রে গাছ লাগিয়েছেন। পাত্র একটু গভীর হলে ভালো। পাত্র মাটি বা প্লাস্টিক উভয়েরই হতে পারে। উর্বর মাটিতে মোটা বালি, কয়লা, পারলাইট ইত্যাদি মিশিয়ে গাছ লাগানো যায়। অনেকে হাড়ের গুঁড়ো, ধানের খোসা, পাতা পচা সার ব্যবহার করেন। তবে যেটাই দেওয়া হোক। পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। নার্সারি, অনলাইন থেকে হাসিবুল গাছ সংগ্রহ করেন। পরিচিতজনদের মধ্যে গাছ অদল-বদলও করেন। বিভিন্ন দামের গাছ তার সংগ্রহে আছে। এক শ থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা দামের গাছ তার রয়েছে বলে জানান।

তার পছন্দের দুটি গাছ হলো স্যানসেভিয়েরা বা স্নেইক প্লান্ট এবং আগাভে। পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হয়। এই গাছের জন্য সেভাবে মাটি তৈরি করতে হয়। স্নেইক প্লান্টের জন্য খুব বেশি আলোর দরকার হয় না, ঘরের ভেতর জানালার পাশেও রাখা যায়। আগাভে গাছের জন্য প্রচুর রোদ দরকার হয়। গরমের সময় প্রচুর গাছের চারা হয়। তখন তিনি অনলাইনে, ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করেন। পর্যাপ্ত রোদ না দেওয়া এবং মাটি সঠিকভাবে তৈরি না করা। শৌখিন বাগানিদের সবচেয়ে বড় ভুল বলে তিনি মনে করেন।

প্রবাসে, দেশে গাছপ্রেমীরা তো বটেই। বিদেশি অনেকের মন জয় করে নিয়েছে হাসিবুলের বাগান। ফেসবুকে তারা তার বাগানের ছবি দেখে যেমন প্রশংসা করেন। আবার তার বাগান থেকে গাছ সংগ্রহ করেন। সে রকমই একজন জুলিয়ান। অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। তার নিজের বাগান আছে। হাসিবুল বলেন, এই ভদ্র মহিলা একটি গাছ কিনতে এসে ৬/৭টি গাছ কিনেছেন। ক্যাক্টাসের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ভালো। ইদানীং ক্যাক্টাস বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বেকার যুবকরা বাণিজ্যিকভাবে ক্যাক্টাসের চাষ করে লাভবান হতে পারেন। দুর্লভ প্রজাতির ক্যাক্টাসের প্রতি মানুষের প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। এমনটাই জানালেন হাসিবুল হাসান। তবে ক্যাক্টাস খুব ধীরে বড় হয়, তাই অনেক ধৈর্যধারণ করতে হবে।

কমপক্ষে ৪/৫ ঘণ্টা সূর্যের আলো পড়ে। এমন জায়গায় ক্যাক্টাস রাখতে হবে। নতুবা ভালোভাবে বৃদ্ধি পাবে না। এমনকি মরেও যেতে পারে। হাসিবুল যে বারান্দায় ক্যাক্টাস রেখেছেন, সেখানে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রচুর রোদ পড়ে বলে জানান। তবে আরো রোদ দিতে পারলে ক্ষতি নেই।

হাসিবুল জানান, অনলাইনে বিদেশি ফোরামে এবং দেশি-বিদেশি গাছের ফেসবুক গ্রুপে তার বাগানের ছবি অনেক প্রশংসিত হয়েছে। অনেকেই তার বাগানকে স্বপ্নের বাগান, সেরা বাগান, অবিশ্বাস্যসহ বিভিন্ন সুন্দর মন্তব্য করেছেন। হাসিবুল ফেসবুকে বাগানবিলাস নামক বাংলাদেশি একটি বড় বাগানবিষয়ক গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে আছেন। সেখানে তিনি সদস্যদের ক্যাক্টাস সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়ে সাহায্য করেন। শৌখিন বাগানিদের জন্য হাসিবুল বলেন, গাছ সম্পর্কে আগে ভালোমতো তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তথ্য অনুযায়ী যত্ন নেওয়া উচিত। দুর্লভ প্রজাতির গাছ সংগ্রহ করা এবং বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সেসব প্রজাতির গাছ সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করা। এটাই হলো হাসিবুল হাসানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close