হানজালা শিহাব

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

ভালোবাসায় সিক্ত হৃদয়

সোনালি ফসলে বিস্তীর্ণ মাঠ। এর মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে আঁকাবাঁকা খাল। একদিকে ভরা ফসলের খেত। অন্যদিকে স্বচ্ছ পানিতে ঝুঁকে পড়েছে আকাশ। মাঝখানে কাঁচা মেঠোপথ। যেদিকে চোখ যাবে সবুজ শ্যামলী এক দিগন্ত ছোঁয়া প্রকৃতি হৃদয় কেড়ে নেবে। মেঠোপথের ধারে দেখা মিলবে রংবেরঙের শালিক, মাছরাঙা পানকৌড়ি, সাদা বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বিচরণ, ছোটাছুটি। খালের পানিতে পাতিহাঁসের সঙ্গে মাছের মিতালি কার না দৃষ্টি করে! এ যেন শিল্পের রংতুলিতে আঁকা ছবি। প্রাকৃতিক এমন অপরূপ সৌন্দর্য পথিককে কিছুটা থামিয়ে দিতে পারে।

এই গ্রামেই আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কেটেছে গ্রাম্য এ মেঠোপথে হেঁটে হেঁটে। গ্রামটির নাম দক্ষিণ বিঘাই। পটুয়াখালী সদর উপজেলার এ গ্রামের পাশেই সাইচাবুনিয়া গ্রাম। অনেকে দুটিকে একই গ্রাম মনে করেন। অবশ্য দুটি গ্রামের ডাকঘর একই, সাইচাবুনিয়া। গ্রামটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ, মায়াবী। এখানকার মানুষের হৃদয়ও কোমল, ভালোবাসার। তাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হবেন যে কেউ। মুহূর্তেই আপন করে নিতে পারে এই গ্রামের মানুষ।

শৈশব-কৈশোর তাদের সঙ্গে কাটালেও সময়ের পরিবর্তনে জীবনের প্রয়োজনে একসময়ে গ্রাম ছেড়েছিলাম। প্রথমে জেলা শহর। তারপর রাজধানী ঢাকায় আবাস। ইট-পাথরের নগর জীবনে অনেক কিছু পেলেও নির্মল, নিঃস্বার্থ এক গ্রাম ভালোবাসা হারিয়েছি, যা প্রতি মুহূর্তে আমাকে বেদনার্ত, আবেগ-আপ্লুত করছে। স্মৃতিমন্থর করতে বাধ্য করছে। তাই তো দীর্ঘকাল পর আবার ছুটে গিয়েছিলাম সেই গ্রামে। যেখানে আমার মা-বাবা, দাদা-দাদির কবর। যে মাটির সঙ্গে মিশে আছে আমার অস্তিত্ব। যে গ্রামে ‘পোতা’ রয়েছে আমার মাতৃছেড়া নাভি। আমার গা থেকে এখনো এই গ্রামের মাটির গন্ধই হয়তো বের হবে।

আমার গায়ে ফেরার খবর ছড়িয়ে যায় অনেকের কাছে। ছুটেও আসেন তারা। তাদের সঙ্গে ছিল ভেজালমুক্ত গ্রামীণ ফলসহ অনেক কিছু। সেইসঙ্গে বিস্তীর্ণ সোনালি মাঠের মতো হৃদয় নিয়ে এসেছিলেন সবাই। তারা যেন হারানো মানিককে ফিরে পেয়েছিলেন কিছু সময়ের জন্য। তাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। মুগ্ধ হয়েছি। ঋণী হয়েছি। কিন্তু এসব পেছনে রেখে আবার ফিরতে হয় যানজট আর কোলাহলের নগরী ঢাকায়। কৃত্রিম চাকচিক্য, আভিজাত্য আর জৌলুসের ঢাকায় নিজেকে কেন যেন অসহায় মনে হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close