নাজমুন্নাহার

  ২০ জুন, ২০২২

বাবা তোমাকে ভালোবাসি

ফার, ভাদের, পাই, পাপা, ড্যাডি, বাবা যে ভাষায় ডাকি না কেন, ভালোবাসার অনুভূতি সবার কাছে একই রকম। বাবা ডাকের মাঝে মিশে আছে বটবৃক্ষের ছায়া, পরম মমতা, হাজারো আবদার, সূর্যের প্রখর রোদ্রের ঘামার্ত শরীরের মিষ্টি গন্ধ। বাবা এমন এক মানুষ যে নিজের শত অপূর্ণতাকে দূরে সরিয়ে সন্তানের চাহিদা পূরণে সদা ব্যস্ত জীবন পার করেন। সন্তানের চাহিদা পূরণে কখন যে সবার স্নিগ্ধ রোদ থেকে দুপুরের খরতাপ পার করে জীবনের শেষ বিকেলের সন্নিকটে চলে আসেন, নিজেও জানেন না। সন্তানের জন্য যেমন মায়ের অবদান অপরিসীম; ঠিক তেমনি বাবার অবদানও কম নয়। বাবা হাঁটতে শিখায়, মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখায়, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জটিল পথকে সরল পথে পরিণত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। মাথার ওপর প্রশান্তির বাতাস দেন। কঠিন এই পৃথিবীর বাস্তবতা থেকে দূরে রাখেন। সব প্রয়োজন মুখ ফুটে বলার আগেই পূরণ করেন। বাবার ভালোবাসা সন্তানের প্রতি চিরকালের। সন্তানও বাবাকে ভালোবাসে সবসময়। বাবাকে ভালোবাসতে লাগে না কোনো দিন ঘণ্টা বা মিনিট।

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যখন থেকে বাবা ডাকা শুরু হয়, তখন থেকেই বাবার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে। কিন্তু বাবার খুশির জন্য বিশেষ কোনো আয়োজন কি আমরা করি? ঈদ বা অন্য কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা প্রয়োজন ছাড়া কোনো উপহার কি আমরা বাবা কে দিই? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর হলো, না। তাই বাবার জন্য বাবা দিবস। বাবাকে খুশি করার জন্য, আমাদের জীবনে বাবার গুরুত্ব কতখানি, তা জানানোর জন্য এই বিশেষ দিনের আয়োজন। প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার দিনটিকে বাবার জন্য সন্তানের ব্যস্তময় জীবনের একটু সময় ব্যয় করার দিন। বাবাকে বলার দিন, বাবা ভালোবাসি তোমায়। তুমি না থাকলে রাতের গহিন অন্ধকার সূর্যের এই আলোময় দিনকে গ্রাস করে কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত করবে। জীবনের কঠিন বাস্তবতায় হারিয়ে যাবে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। যার বাবা নেই, সেই বুঝে কী অমূল্য সম্পদ সে হারিয়েছে। পৃথিবীর সব সম্পদ তার কাছে ফিকে হয়ে যাবে। বুকের ভেতর থেকে বের হবে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস। আমরা বেশির ভাগ সময় বাবার গম্ভীর, রাগী মুখ দেখি। আপাতগম্ভীর খোলসের আড়ালে থাকে তার অন্য রূপ। ঝিনুকের ভেতর মুক্তা যেমন ঢাকা থাকে শক্ত আবরণ দিয়ে; ঠিক তেমনি বাবার রাগী চেহারার আড়ালে থাকে গভীর ভালোবাসা, সন্তানকে আদর্শ মানুষ করার জন্য, সন্তানের চাহিদা পূরণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম। সন্তান মানুষের মতো মানুষ হওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষা। প্রত্যেক সন্তানের জীবনের প্রথম মহানায়ক বা হিরো হলো তার বাবা।

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আমরা অনেক বেশি আধুনিক হয়ে উঠেছি। যৌবনপ্রাপ্তির পর নিজস্ব মনোজগৎ তৈরি করি। যৌথ পরিবার তো এখন আর দেখাই যায় না। স্বামী-স্ত্রী আর এক জোড়া বাচ্চা নিয়ে একক পরিবার গড়ে তুলি। আলাদা পরিবেশে থাকতে পছন্দ করি। শিক্ষিত হতে গিয়ে এত বেশি শিক্ষিত হয়ে যাই যে, সমাজকে বলতে সুযোগ করে দিই, উচ্চশিক্ষিতরাই মা-বাবাকে পরিবার থেকে দূরে রাখে। মা-বাবারা যখন বয়স্ক হয়ে যান, ঠিকানা তখন বৃদ্ধাশ্রম। আমরা ভুলে যাই যার অকৃত্রিম স্নেহ ও ভালোবাসায় আমাদের জীবন সার্থক হয়েছে। প্রথম পথচলা আমাদের যার হাত ধরে, যার নামে আমাকে সবাই চেনে, বাবা মানে নিশ্চিন্ত একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। ছোটবেলায় যে বাবা আমাদের চোখের মণি, যে আমাকে সফল করার জন্য নিজের জীবনকেও বাজি রাখতে পারে, সেই বাবা।

মহান আল্লাহ বলেন, “আপনার রব নির্দেশ দিলেন, তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদের ধমক দিও না, আর তাদের সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল।”

বাবা এক পরম বন্ধু, যার ঘামার্ত শরীর দেখেছি সবসময়, সংসারের সব দায়ভার একা কাঁধে নিয়ে পথ চলতে দেখেছি। মনে মনে ভেবেছি, বাবার কাঁধটা অন্য সবার কাঁধের চেয়ে হয়তো অনেক বড়। তা না হলে কীভাবে পারে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পরিশ্রম করতে। বলতে পারি না বাবা আমার দেখা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা তুমি। তুমি আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা। সব সময় বিশ্বাস করেছো আমায়। শত শাসন সত্ত্বেও এক নিবিড় ভালোবাসায় জড়িয়ে রেখেছো। নিজের ইচ্ছাগুলোকে বিসর্জন দিয়ে আমাদের খুশির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছো, এখনো করছো তুমি। জানি না কবে বলতে পারব বাবা এখন তোমার বিশ্রামের সময় হয়েছে। চলো তোমার জীবনের না পাওয়ার তালিকা নিয়ে বসি। পূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টা করি, অপূর্ণ ইচ্ছাগুলোকে। বটবৃক্ষের ছায়ার থেকেও তোমার ছায়া অনেক বড়। বেঁচে থাকো তুমি আজীবন। তোমার পৃথিবীর রাজকন্যা হয়ে রাজত্ব করি আমি। ভালোবাসি বাবা, তোমায় অনেক ভালোবাসি।

লেখক : কৃষি তথ্যকেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল

ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close