তৈমুর খান মবিন

  ০৯ মে, ২০২২

নিদর্শন

টাঙ্গাইলের ২০১ গম্ভুজ মসজিদ

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের লীলাভূমি টাঙ্গাইলে নির্মিত হচ্ছে অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত ২০১ গম্ভুজ মসজিদ। বাগেরহাটের খান জাহান আলী ষাট গম্ভুজ মসজিদ নির্মাণ করে যেমন ইতিহাসে মুসলিম স্থাপত্যের খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তেমনি টাঙ্গাইলের গোপালপুরে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ২০১ গম্ভুজের মসজিদ নির্মাণ করে মুসলিম স্থাপত্যের জগতে আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন।

মসজিদটি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত। ১৫ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে এই মসজিদ। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনার এই মসজিদের দখলে। একটি ৫৭-তলা ভবনের সমান উচ্চতা। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম্ভুজের মসজিদ। পৃথিবীর ইতিহাসে কখনো এত গম্ভুজের মসজিদ নির্মিত হয়নি। মসজিদের ছাদে রয়েছে ২৩ ফুট উচ্চতার ২০০টি গম্ভুজ এবং এর ঠিক মাঝখানে রয়েছে ১০১ ফুট উচ্চতার দৃষ্টিনন্দন সবচেয়ে বড় গম্ভুজ। মসজিদের ছাদের চার কোনায় রয়েছে চারটি মিনার; যেগুলোর উচ্চতা ১১১ ফুট। সবচেয়ে উঁচু ৪৫১ ফুট উচ্চতার মিনারটি নির্মাণ করা হচ্ছে মসজিদের পাশে এবং মসজিদের পাশেই রয়েছে ১০১ ফুট উচ্চতার আরো চারটি মিনার। সবমিলিয়ে মসজিদের মিনার রয়েছে ৯টি।

এবার আসা যাক মসজিদের কারুকার্যের কথায়। মসজিদের অভ্যন্তর সৌন্দর্যমণ্ডিত করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে টাইলস, মার্বেল আমদানি করা হয়েছে। মসজিদের ভেতরকার দেয়ালে এবং মেঝেতে ব্যবহৃত মার্বেল পাথরের টাইলসগুলো আমদানি করা হয়েছে ইতালি এবং চীন থেকে। জানা যায়, মসজিদের প্রধান দরজা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০ মণ পিতল। মসজিদের পেছনে নির্মাণ করা হচ্ছে পৃথক দুটি পাঁচতলা ভবন। ভবনগুলোর নিচতলার পুরোটা জুড়ে রয়েছে উন্নতমানের শৌচাগার। মসজিদের পাশের ভবনগুলোতে থাকবে দুস্থ নারীদের জন্য বিনামূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।

মসজিদের পেছনে বয়ে গেছে ঝিনাই নদী। বর্ষাকালে যখন নদীতে পানি আসে, তখন আশপাশের কয়েক জেলা থেকে পর্যটকরা নৌকায় করে সরাসরি মসজিদের প্রাঙ্গণে আসতে পারেন। এই ঝিনাই নদী মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনের ক্ষেত্রে বাড়তি সংযোজন। মসজিদটির নির্মাণকাজ ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত নির্মাণকাজ অনেকটাই শেষ হওয়ার পথে। মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হলে কাবাঘরের ইমাম সাহেব এসে ইমামতি করে মসজিদটির উদ্বোধন করবেন। মসজিদটিতে একসঙ্গে ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।

এটি নির্মাণ করা হচ্ছে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে। মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ট্রাস্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগেই চলছে এই মহানির্মাণযজ্ঞ। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম তার জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে নির্মাণ করছেন এই মসজিদ। মসজিদটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। মসজিদের পাশেই রয়েছে নির্মাতার বাড়ি। মসজিদ প্রাঙ্গণেই রফিক সাহেব তার সমাধিস্থল তৈরি করে রেখেছেন। তার জীবনের সব সঞ্চয় ঢেলে যে মসজিদ তিনি নির্মাণ করছেন, সে মসজিদ প্রাঙ্গণেই তিনি চিরনিদ্রায় থাকতে চান।

এদিকে মসজিদটি নির্মাণের পর থেকে স্থানীয় মানুষের জীবনে এসেছে আর্থিক পরিবর্তন। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক এই স্থাপত্য দেখতে আসা শুরু করেছেন। মসজিদের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকটি মার্কেট। মার্কেটগুলোতে যেমন স্থানীয়রা ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন, তেমনিভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষজন এ দোকানগুলোর মাধ্যমে টাঙ্গাইলের দেশীয় পণ্যের সংস্পর্শে আসতে পারছেন। স্থানীয়দের তৈরি নকশিকাঁথা, বেত ও মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র পাওয়া যায় এ দোকানগুলোয়। আশপাশে রয়েছে সারি সারি রেস্তোরাঁ। মসজিদ থেকে একটু দূরে বছরব্যাপী মেলা চলে। ছোটদের জন্য এই মেলা বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করে। মেলায় নাগরদোলা, চরকি, ট্রেনের মতো নানা খেলাসামগ্রী রয়েছে। সবমিলিয়ে এক দারুণ পর্যটন এলাকা গড়ে উঠেছে সেখানে।

যেভাবে যাবেন : দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে টাঙ্গাইলের গোপালপুর বাজারে যেতে হবে। ঢাকার মহাখালী থেকে দ্রুতগামী বাস সরাসরি গোপালপুর বাজারে নিয়ে যাবে; ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২০০ টাকা। গোপালপুর বাজার থেকে মসজিদের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার; সিএনজি বা অটোরিকশায় করে সহজেই যাওয়া যায় মসজিদে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close