reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ এপ্রিল, ২০২২

কৃষক প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল

জলবায়ু-সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিসহ ফসলের বৈচিত্রায়ণ প্রযুক্তি

খুলনা কৃষি অঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি রয়েছে। নড়াইলে এই ঝুঁকি সেভাবে না থাকলেও এ জেলার কৃষকরা আধুনিক কৃষিতে পিছিয়ে রয়েছেন। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উচ্চতাপমাত্রা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের কারণে এ অঞ্চলের ফসলের জমিতে লোনাপানির অনুপ্রবেশ ঘটে, শুষ্ক মৌসুমে মিষ্টি পানির অভাব দেখা দেয়, শীতকাল থাকে কম সময়, মাটিতে বেশি দিন ‘জো’ ধরে রাখা যায় না। এসব কারণে রবি ও খরিফ মৌসুমে এ অঞ্চলের প্রায় ৫৯ হাজার হেক্টর জমি পতিত বা আংশিক অনাবাদী থাকে। এসব দিক বিবেচনা করে লাগসই কৃষিপ্রযুক্তি, উত্তম পানি ও মাটি ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় ও জলবায়ুর অভিঘাত সহনশীল ফসল ও ফসলের জাত চাষের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো হবে এবং পতিত ও আংশিক অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় এনে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা হবে।

প্রকল্পের লক্ষ্য : কৃষি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিসহ ফসলের বৈচিত্রায়ণ।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য :

* ক্লাইমেট-স্মার্ট বা জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহার ও পতিত জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় ফসলের নিবিড়তা ১৭০ থেকে ১৭৫ শতাংশে উন্নীতকরণ;

* পানি ব্যবস্থাপনা, মাটির স্বাস্থ্যরক্ষা ও উচ্চমূল্যের আধুনিক জাতের ফল এবং সবজি আবাদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদন ৮-১০ শতাংশ বৃদ্ধিকরণ;

* স্থানীয় অভিঘাত সহনশীল টেকসই জাত সম্প্রসারণ ও অভিযোজন কৌশলের মাধ্যমে ফসলের বৈচিত্রায়ণ।

প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য :

* গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বশেষ প্রাপ্ত ক্লাইমেট-স্মার্ট বা জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তির সফঙ্গ প্রশিক্ষণার্থীদের পরিচিত করানো;

* এ অঞ্চলের উপযোগী ফসলের জলবায়ুর অভিঘাত সহনশীল জাতের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো ও সেসব জাতের ফসল চাষের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীদের ধারণা দেওয়া;

* ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একই জমিতে আন্তঃফসল, সাথী ফসল, শস্যবিন্যাস, টাওয়ার ও বস্তায় ফসল চাষ ইত্যাদি বিশেষ কলাকৌশল প্রশিক্ষণার্থীদের শিখানো;

* আধুনিক পদ্ধতিতে উচ্চমূল্যের ফল, সবজি ও মসলা ফসল চাষাবাদে কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

প্রশিক্ষণের প্রত্যাশিত সুফল : প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে প্রশিক্ষণার্থীদের বিভিন্ন লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা ও আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে, তারা তাদের জমির জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তি নির্বাচন ও প্রয়োগ করে ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারবেন। এ ছাড়া এর ফলে বিভিন্ন প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা সঠিক ও সহজ হবে।

রোপা আমন ধানের সঙ্গে সরিষা/খেসারি/মসুর ও অন্যান্য ফসলের রিলে চাষ : বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য প্রতি ইউনিট আবাদি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। এক ফসলি, দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমিতে চারটি ফসল আবাদ করে ফসলের নিবিড়তা ১৯১ শতাংশ থেকে ৪০০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। রোপা আমন ধানের চাষ করা হয় খরিফ-২ মৌসুমে। রোপা আমন ধানের সঙ্গে রবি মৌসুমে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা, খেসারি, মসুর বা অন্যান্য ফসল চাষ করে পরবর্তীতে একই জমিতে বোরো মৌসুমেই বোরো ধান চাষের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। এতে ফসলের নিবিড়তা ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এমনকি যথাযথ প্রযুক্তি ও সময় মেনে চাষ করলে এক বছরে একই জমি থেকে চারটি ফসল চাষ করাও সম্ভব। রোপা আমন ধানের সঙ্গে সরিষা বা খেসারি/মুগ/মসুরকে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফসল বিন্যাস হলো- ১. রোপা আমন-সরিষা-বোরো-রোপা আউশ; ২. রোপা আমন-সরিষা-মুগ-রোপা আউশ; ৩. রোপা আমন ধানের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা ও মসুরের মিশ্র চাষ।

রোপা আমন-সরিষা-বোরো-রোপা আউশ : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বিনা উদ্ভাবিত স্বল্পমেয়াদি ‘বিনা ধান-৭, বারি উদ্ভাবিত স্বল্পমেয়াদি সরিষার জাত ‘বারি সরিষা-১৪, ব্রি উদ্ভাবিত স্বল্পমেয়াদি জাত ব্রি ধান২৮ এবং আউশের স্বল্পমেয়াদি জাত ‘পারিজা’ সমন্বয় করে রোপা আমন-সরিষা-বোরো-রোপা আউশ ফসল বিন্যাস উদ্ভাবন করেছে। এই ফসল বিন্যাস অবলম্বন করে কৃষক অধিক ফলন পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এ ছাড়া মৃত্তিকার উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি, ভূগর্ভস্থ পানির সংরক্ষণ ও স্বাস্থ্যসুরক্ষায় এই ফসল বিন্যাস যথেষ্ট অবদান রাখবে। মোটকথা কৃষকের আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি বিশেষ

করে নারী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই ফসল বিন্যাস অবদান রাখবে।

গবেষণার ফলাফল : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট তিন বছরব্যাপী রোপা আমন-সরিষা-বোরো-রোপা আউশ ফসল বিন্যাসের বাস্তবায়নযোগ্যতা ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করে। রোপা আমন-সরিষা-বোরো ধান-রোপা আউশ ফসল বিন্যাসের সঙ্গে প্রচলিত রোপা আমন-পতিত-বোরো-পতিত ফসল বিন্যাসের তুলনামূলক পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, এই ফসল বিন্যাসে ধানের সাদৃশ্য ফলন পাওয়া গেছে ২৪.১২ টন/হেক্টর এবং কৃষকের প্রচলিত ফসল ধারায় সাদৃশ্য ফলন ১৪.৩০ টন/হেক্টর। রোপা আমন-সরিষা-বোরো-রোপা আউশ ফসল বিন্যাসে কৃষকের ফসল ধারা (রোপা আমন-পতিত-বোরো-পতিত) থেকে প্রতি হেক্টরে অতিরিক্ত আয় পাওয়া গেছে ৮৭,৩৪৩ টাকা। সুতরাং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে যেসব এলাকায় রোপা আমন-পতিত-বোরো-পতিত ফসলধারা রয়েছে; সেসব এলাকায় রোপা আমন-সরিষা-বোরো ধান-রোপা আউশ ফসলধারা প্রচলন করা সম্ভব এবং উন্নত এই ফসল ধারাটি প্রবর্তন করে শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি করে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

শেখ ফজলুল হক মনি

প্রকল্প পরিচালক

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close