reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ অক্টোবর, ২০২১

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা জাদুঘর

মুঘল শাসনামল থেকে শুরু করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন ও মহান স্বাধীনতা-সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের সচিত্র বর্ণনা এবং বিভিন্ন রকম দুর্লভ চিত্রকর্ম দিয়ে রাজধানীর শাহবাগে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাজানো হয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘর। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালিকে এই ঐতিহাসিক স্থান থেকেই স্বাধীনতার মন্ত্র শুনিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানেই স্থাপিত হয়েছে স্বাধীনতার এই জাদুঘর। মাটির নিচে উপস্থিত জাদুঘরটি দেখলে যে কারো নজর কাড়বে। ওপর থেকে জাদুঘরের নিচে ঢুকতেই হালকা সবুজ আলো চোখে পড়বে। ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ জাদুঘরটির যাত্রা শুরু হয়। এবার জেনে নেওয়া যাক স্বাধীনতা জাদুঘরটি নিয়ে। স্বাধীনতা জাদুঘরের প্রবেশের আগে জাদুঘরে ওপরের অংশে টেরাকোটা ম্যুরাল চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে। এই সৃষ্টিশীল চিত্রাঙ্কন নজর কাড়বে সবারই। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রায় সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই টেরাকোটা ম্যুরালের মধ্য দিয়ে।

ম্যুরালের প্রথম অংশে দৃশ্যমান হবে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা বাঙালির চিরচেনা সেই গান ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ এ যেন গ্রাম-বাংলার সেই চিরায়ত রূপ। পর্যায়ক্রমে এ ম্যুরালে স্থান পেয়েছে ঘটে যাওয়া অনেক আন্দোলনের চিত্র। স্বাধীনতা জাদুঘরের গ্যালারিতে প্রদর্শিত আলোকচিত্রগুলোর প্যানেলে রয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘরের উদ্দেশ্য ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইতিহাস, বাংলাদেশের প্রাচীন, মধ্যযুগ ও সমকালীন ইতিহাস, উপমহাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও স্বাধীনতা-সংগ্রাম, ২৫ মার্চের কালরাত, গণহত্যা, স্বাধীনতা ঘোষণা, প্রত্যক্ষ প্রতিরোধ, শরণার্থীদের মিছিল ও ভারতে শরণার্থীশিবির।

স্বাধীনতা জাদুঘর আরো রয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী ও দোসরদের ভূমিকা, স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র ও অস্থায়ী সরকারের শপথগ্রহণ, মুক্তিবাহিনী গঠন ও প্রশিক্ষণ, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সপক্ষে প্রবাসী বাঙালিদের তৎপরতা ও বিদেশি পত্র-পত্রিকায় প্রতিক্রিয়া, চূড়ান্ত বিজয়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, স্বাধীনতা অর্জনের দ্যুতিময় প্রকাশ। আগত দর্শনার্থীরা জাদুঘরের মাঝখানে দেখতে পাবেন বৃত্তকার একটি বিরাট হলঘরের মধ্যে ছাদের ফোকাল দিয়ে মায়ের অশ্রুর মতো পানির ধারা নিচে বৃত্তাকার আকারে পড়ছে। এই অশ্রু-প্রপাত দৃশ্যটি হলো বাংলা মায়ের অশ্রুর প্রতীকীরূপ। বাঙালি তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে গিয়ে কত ত্যাগ স্বীকার করল, কত রক্ত দিল, কত মায়ের কোল খালি হলো, কত বোন বিধবা হলো, সম্ভ্রম হারাল বাংলার দুই লাখ মা-বোন, বাংলা মায়ের যে কত অশ্রু ঝড়ল তার শেষ নেই। অশ্রু-প্রপাত আমাদের সেই ব্যথাতুর বাংলা মায়ের অশ্রুর অনন্তধারাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্লাজা চত্বরে বসানো হয়েছে গ্লাস টাওয়ার। ইস্পাতের কাঠামোর ওপর ১৫০ ফুট উচ্চতা আর ১৬ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৬ ফুট প্রস্থের এ টাওয়ারটির আলোকচ্ছটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। টাওয়ারের উপরিভাগে রয়েছে স্বচ্ছ কাচ। দিনের বেলায় এতে সূর্যের আলোর প্রতিসরণ ও প্রতিফলন হয়। রাতে আলোকচ্ছটা তৈরির জন্য রয়েছে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা। প্রতি সপ্তাহে শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘরটি খোলা রাখা হয়। এ ছাড়া শুক্রবার ছুটির দিনে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

তথ্যসূত্র : সংগৃহীত

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close