সিরাজুম মুনিরা

  ৩০ আগস্ট, ২০২১

মুক্তিযুদ্ধের বিমান ছুঁয়ে দেখতে

মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পেরিয়েছে। দেশে এখনো একটা প্রজন্ম আছে, যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বা দেখেছেন। তারা তো জানেনই কেমন ছিল সেসব দিন। কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তারা কীভাবে জানব সেই সময়ের কথা? তাই তাদের জন্য রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা করেছে মুক্তিযুদ্ধকে জানার। তেমনই একটি জায়গার কথা বলব আজ। যেটি আমাদের রাজধানী ঢাকার ভেতরেই অবস্থিত। বলছি বাংলাদেশ বিমানবাহিনী জাদুঘরের কথা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এর অবস্থান। এটি বাংলাদেশের প্রথম বিমান জাদুঘর। মূলত বিমানবাহিনীর ঐতিহ্য, ইতিহাস, সাফল্য তুলে ধরতেই এর যাত্রা। জাদুঘর এলাকায় ঢুকলেই চোখে পড়বে সারি সারি বিমান। সেই সঙ্গে আছে বেশ কিছু বিমান, যেগুলো সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। এই বিমানগুলোর সামনে দাঁড়ালে শরীরের ভেতর শিহরন জাগবে। এই বিমান ব্যবহার করে শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করা হয়েছে ভাবলে কার না লোম খাড়া হবে বলেন? হাতের নাগালে থাকা এসব বিমান ছুঁয়েও দেখতে পারবেন। চলুন এবার আপনাদের ঘুরিয়ে আনি বিমান জাদুঘরের প্রাঙ্গণ থেকে

এই বিমানটির নাম ডাকোটা। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যখন জন্ম হয় তখন থেকেই এটি সঙ্গে আছে। এর মূল মালিক ছিলেন ভারতের যোধপুরের মহারাজা। এটি মূলত যাত্রী পরিবহনের বিমান। তবে মজার ব্যাপার হলো এটি পাঁচ হাজার পাউন্ড ওজনের বোমা বহন করে তা শত্রুর এলাকায় বর্ষণ করতে সক্ষম। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিমানবাহিনী এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহারও করে। এখন বিমানবাহিনী জাদুঘরে ডাকোটা বিমানটিতে টিকিট কেটে প্রবেশের ব্যবস্থাও আছে।

এটি মিগ-২১ এফএল বিমান। ১৯৬৩ সালে এই বিমানটি ভারতের বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমানবাহিনী এটি আকাশ ও ভূমি আক্রমণের কাজে ব্যবহার করেছিল। যেহেতু এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে তাই যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে বিমানটি উপহার দেয় ভারত।

এটি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এফ-৮৬ যুদ্ধবিমান। এটি তৈরি হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। একজন আরোহী বহনকারী এই বিমানটি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যবহার করেছিল। তবে যুদ্ধ শেষে ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটি ফেলে রেখেই চলে যায় তারা। তখন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ানরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এটি মেরামত করেন। সচল হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এটি সফলভাবে ওড়ে। এটি ২ কেজি ৪০০ গ্রাম ওজনের বোমা বহনে সক্ষম।

এই ন্যাট বিমানটি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী। হালকা ও ছোট এই যুদ্ধ বিমানটি ১৯৫৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারতের বিমানবাহিনী ব্যবহার করে। পরে এটি বাংলাদেশে আনা হয়। যুদ্ধের শুরুতে ভারতের বিমানবাহিনী যে তিনটি ন্যাট বিমান নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ ও তাদের বিমান বগুড়ায় ভূপাতিত করে, এটি তাদের একটি।

চমৎকার এই বিমানটির নাম বলাকা। দেখা গেল এর প্রতিই আগ্রহ বেশি দর্শনার্থীদের। এর ভেতরে ঢুকেও দেখছেন প্রচুর মানুষ, ছবি তুলছেন বলাকার সঙ্গে। এত আগ্রহের কারণ, বলাকা স্বাধীন বাংলাদেশের সংগৃহীত প্রথম বিমান। শুরুতে এটি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমান হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর এই বিমানটিও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। এখন এটির স্থান বিমানবাহিনীর জাদুঘরে।

মিল মি-৮ মডেলের এই হেলিকপটারটিও ব্যবহৃত হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। এখন এর ভেতরটাও দেখার সুযোগ পান দর্শনার্থীরা।

ফুগাসি এস-১৭০ ম্যাজিস্টার মডেলের এই বিমানটি বাংলাদেশ

বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে ১৯৭৭ সালে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত পাইলটদের প্রশিক্ষণে এটি ব্যবহার করা হতো।

বিশালাকায় এই বস্তুটি আসলে একটি রাডার। বিমানকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয় এটি। এখন সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে জাদুঘরের সবুজ প্রান্তরে।

আরেকটি রাডার। এটি দেখতে আবার অন্যরকম।

এ ফাইভ-৩-এ মডেলের এই বিমানটি চীনের তৈরি। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহরে যুক্ত হয় এটি। একজন আরোহী নিয়ে উড়তে সক্ষম এই ছোট বিমান থেকে দেড় হাজার কেজি ওজনের সমরাস্ত্র ও আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল বহন করা যায়। আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই বিমান।

এ রকম নানা মডেলের ছোট বড় বিমান দেখতে আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী জাদুঘরে। যেখানে নানান ইতিহাস বুকে নিয়ে বিমানগুলো অপেক্ষা করছে আপনারই জন্য। সবচেয়ে বড় কথা, শহরের ডামাডোলের মধ্যে বিমানবাহিনী জাদুঘরের সবুজ প্রান্তর মনে এক ধরনের প্রশান্তি এনে দেয়। বাচ্চারাও মনের আনন্দে নিরাপদে ঘুরে বেড়াতে ও খেলতে পারে। এসব মিলিয়ে বিজয় দিবস কিংবা যেকোনো ছুটির দিনে বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস জানার চমৎকার এক জায়গা হতে পারে এই জাদুঘরটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close