reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৬ আগস্ট, ২০২১

শ্রীমঙ্গলে সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা

শ্রীমঙ্গল শহরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডের একটি দ্বিতল বাড়ি। এটিই সীতেশ রঞ্জন দেবের বাসা। রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের পাশেই অবস্থিত এই বাড়িটিতেই সীতেশ বাবু তৈরি করেছেন তার মিনি চিড়িয়াখানাটি। বাসার বামপাশে দিয়ে ছোট একটি টিনের গেটের ভেতর দিয়ে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে হয়। চিড়িয়াখানায় প্রবেশমাত্রই চোখে পড়বে গুঁইসাপ! দেখবেন আপনার দিকে তেড়ে আসছে। অবশ্য চমকে ওঠার কোনো কারণ নেই, খাঁচার মধ্যেই রাখা হয়েছে জীবটিকে। কুমির আকৃতির এই গুঁইসাপের বৈশিষ্ট্য হলো মুখ দিয়ে থুথু ছুড়ে মারা। এরপরই চোখে পড়বে মেছো বাঘ। একসময় প্রচুর পরিমাণে শ্রীমঙ্গলে দেখা যেত এই বাঘ। আর একটু এগিয়ে বামে তাকালেই চোখে পড়বে রঙের বর্ণচ্ছটা আর কানে আসবে কিচিরমিচির শব্দ।

বিরল প্রজাতির এই পাখিগুলো দেখে যে কেউই বিস্ময়াভূত হবেন। এই পক্ষীকুলের ভেতর থেকে হঠাৎ বাংলা কথা শোনা গেলে অবাক হবেন না, ওটা সীতেশ বাবুর ময়নার ডাক! সীতেশ দেবের চিড়িয়াখানাটিতে রয়েছে জংলী রাজহাঁস, চখা, সরলী, রাজ সরলী, চা পাখি, ধনেশ, হরিয়াল, সবুজ ঘুঘু, বনমোরগ, ডাহুক, জল কবুতর, নীল গলা বসন্ত বৌরি, তিলা ঘুঘু ও তিতির, ময়না, টিয়া, তোতা, পাহাড়ি বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

এরপর দেখবেন সোনালি কচ্ছপ। যারা আগে কখনো সোনালি কচ্ছপ দেখেননি, নিঃসন্দেহে তাদের কাছে এই কচ্ছপটি বিস্ময়কর মনে হবে। এই সোনালি কচ্ছপের বৈশিষ্ট্য হলো এটি গাছে চড়তে পারে। সোনালি রঙের এই প্রাণীটি ফল খায়, গাছে চড়ে। ছোট্ট এই চিড়িয়াখানার আরেক আকর্ষণ উড়ন্ত কাঠবিড়ালি। নিতান্তই নিরীহ গোছের এই প্রাণীটি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট দূরে ডানা মেলে উড়ে যেতে পারে। উড়ন্ত অবস্থায় এদের শরীরের চামড়া ছড়িয়ে পড়ে ডানার আকৃতি নিয়ে। কিন্তু চিড়িয়াখানায় বাঘ থাকবে না, তা কি হয়? অতএব এবার বাঘ দর্শন। তাও আবার যে সে বাঘ নয়, সাদা বাঘ। এই প্রজাতির বাঘ বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। পুরু শরীরে দুধের মতো সাদা পশমে আবৃত বিরল এ বাঘ নিমিষেই তার চোখের রং পাল্টাতে পারে। বাঘটি যখন আপনি দেখবেন আচমকাই এর জন্য আপনার মায়া হবে। মুখ দিয়ে বাঘটির দিকে একটু ফুঁ দিলেই সাপের মতো ফুস করে উঠবে আপনার দিকে। চিড়িয়াখানার বামদিকে রয়েছে মায়া হরিণের দল। আদর করতে ইচ্ছে হলে খাঁচার ভেতর হাত বাড়িয়ে দিন ।

দেখবেন হরিণগুলো এসে তার জিহ্বা দিয়ে আপন মনে আপনার হাত স্পর্শ করে দিচ্ছে। একটি প্রাণী আপনাকে আদর করে দিচ্ছে ভালো না লেগে কি পারে। মায়া হরিণের পরই রয়েছে ভাল্লুকের খাঁচা। এখানে রয়েছে দুটি ভাল্লুক। এদের সারা শরীর কালো গলায় রয়েছে সাদা ভি আকৃতির দাগ। জঙ্গলের হিংস্রপ্রাণী হলেও চিড়িয়াখানায় এ ভাল্লুক দুটি প্রায়ই খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসে সীতেশ বাবু ও তার ছেলেদের সঙ্গে চলা করে। কখন হাত ধরে কখন কাঁধে চড়ে। আবার প্রায় সময় তারা কুকুরের সঙ্গে খেলাও করে। চিড়িয়াখানায় এক কোণে রয়েছে অজগরের অবস্থান।

এখানে রয়েছে এক জোড়া অজগর। ফেরার আগে অবশ্যই অজগরগুলোকে দেখে যাবেন। কারণ এই অজগরগুলো পাঁচ বছর আগে এখানেই ৩৮টি ডিম পেড়েছিল। সে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছিল। পরবর্তীতে বাচ্চাগুলোকে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করা হয়। এরপর পরই রয়েছে পুরু শরীর জোড়া কাঁটা আবৃত সজারু, হিমালয়ান পাম্প সিভিট, রয়েছে সাদা ডুরাকাঁটা সোনালি বাঘ, শতাধিক রাজকীয় পায়রা ও লম্বা লেজওয়ালা হনুমান। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা এবং বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবার জন্য চিড়িয়াখানা উন্মুক্ত থাকে। চিড়িয়াখানায় প্রবেশের জন্য কোনো ফির প্রয়োজন নেই। তবে যাওয়ার সময় যদি হাতে সময় থাকে, তাহলে কথা বলে যেতে পারেন চিড়িয়াখানার পরিচালক সীতেশ বাবুর সঙ্গে। জানতে পারেন তার জীবনের কাহিনি।

যেভাবে যেতে হবে

শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়ক ধরে কালাপুর বাজার থেকে একটু সামনে এগোলেই বরুনা-হাজীপুর পাকা রাস্তার দেখা মিলবে। এ রাস্তায় প্রবেশ করে যেতে হবে হাজীপুর বাজারে। স্থানীয়দের কাছে এ বাজারটি ঘাটেরবাজার নামে পরিচিত। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে বা হেঁটে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হাইল হাওর। হাজীপুর বাজারে বেশ কজন গাইড রয়েছে। আপনি চাইলে গাইডের সাহায্যও নিয়ে যেতে পারেন সীতেশ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানায়। অথবা সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা। এখানে রূপশপুর এলাকায়ই সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা। সিলেট বিভাগের মধ্যে এই একটিই চিড়িয়াখানা রয়েছে।

তথ্যসূত্র : সংগৃহীত

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close