মো. জাহিদুল ইসলাম, সিলেট থেকে

  ১৮ মার্চ, ২০২৩

আইরিশদের পাড়ার টিম বানিয়ে ছাড়ল টাইগাররা

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাটিং বোলিংয়ে নাস্তানাবুদ করে আইরিশদের পাড়ার টিম বানিয়ে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দাপুটে জয় পেয়েছে টাইগাররা। স্বাগতিকদের দেওয়া ৩৩৯ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৫৫ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। ফলে ১৮৩ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রানের ব্যবধানে জয়।

বাংলাদেশ : ৩৩৮/৮ (৫০ ওভার)

আয়ারল্যান্ড : ১৫৫/১০ (৩০.৫ ওভার)

ফল : বাংলাদেশ ১৮৩ রানে জয়ী

ম্যাচসেরা : তৌহিদ হৃদয়

বাংলাদেশের রান পাহাড়ে রীতিমতো চাপা পড়েছে আয়ারল্যান্ড। বড় লক্ষ্য তাড়ায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেছে আইরিশদের ব্যাটিং লাইনআপ। তাসকিন-এবাদতদের তোপের মুখে ১৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি সফরকারীরা। এর ফলে ১৮৩ রানের বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

শুরুতে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। যেখানে বড় অবদান রেখেছেন দুই মিডল অর্ডার ব্যাটার সাকিব আল হাসান এবং তৌহিদ হৃদয়। জবাবে ৩০ ওভার ৫ বল খেলে ১৫৫ রান তুলে অলআউট হয়েছে আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশের দেওয়া ৩৩৯ রানের পাহাড়সম টার্গেট তাড়া করতে নেমে ধীরগতির ব্যাটিংয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে আয়ারল্যান্ড। দুই আইরিশ ওপেনার স্টিফেন ধোয়েনি ও পল স্টার্লিংকে দুই প্রান্ত থেকেই চেপে ধরেন তাসকিন-মুস্তাফিজরা। প্রথম ৬ ওভারে সফরকারীরা কোনো উইকেট না হারালেও স্কোর বোর্ডে তুলে ২৩ রান। আর তাতে আইরিশদের প্রয়োজনীয় রান রেট বেড়ে দাঁড়ায় সাতের ওপরে।

শুরুর সেই চাপ কমাতে এরপর আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করেন দুই আরিশ ওপেনার। কাউন্টার অ্যাটাকে কিছুটা হলেও সাফল্য পেয়েছেন তারা। পাওয়ার প্লের শেষের ৪ ওভারে ২৮ রান তোলে আইরিশরা। তাতে শুরুর পাওয়ার প্লে শেষে বিনা উইকেটে স্কোর বোর্ডে ৫১ রান যোগ করেছে আয়ারল্যান্ড। এরপর আর বেশিদূর এগোতে পারেনি আইরিশদের উদ্বোধনী জুটি। বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই ধোয়েনিকে সাজঘরে ফেরান সাকিব আল হাসান। এই স্পিনারের করা ১২ ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩৮ বলে ৩৪ রান করেছেন তিনি। ধোয়েনি ফেরার পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেলেন না পল স্টার্লিং। একটি করে চার ও ছক্কায় ২২ রানে থেমেছেন এই ওপেনার। ১৩ ওভারের দ্বিতীয় বলটি খানিকটা শর্ট লেন্থে রেখেছিলেন এবাদত হোসেন। সেটা আগে থেকেই বুঝতে পেরে পুল করতে যান স্টার্লিং কিন্তু বলে বাড়তি বাউন্স থাকায় ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি এই ওপেনার। তাতে বল তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়ে। এদিন উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত ছিলেন অভিজ্ঞ মুশফিক।

আগের ওভারে স্টার্লিংকে ফেরানোর পর নিজের পরের ওভারেই হ্যারি ট্যাক্টরকেও ফেরান এবাদত। ঠিক যেন আগের ওভারের কার্বন কপি! পার্থক্য ছিল শুধু ব্যাটারে, স্টার্লিংয়ের জায়গায় ট্যাক্টর। এবারও ওভারের দ্বিতীয় বলটি শট লেন্থে ছিল তাতে ব্যাটার পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন। সাজঘরে ফেরার আগে ট্যাক্টরের ব্যাট থেকে এসেছে ৮ বলে ৩ রান। এবাদত পরপর দুই ওভারে ২ উইকেট নেওয়ার পর দুই প্রান্ত থেকেই পেস আক্রমণে যান তামিম। আর বোলিংয়ে ফিরেই অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিলেন তাসকিন। ১৬ ওভারের তৃতীয় বলে বার্লবর্ণিকে সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরে ফিরিয়েছেন এই পেসার। তার আগে ৫ রান এসেছে আইরিশ অধিনায়কের ব্যাট থেকে। তাসকিনের এই ওভারের কোনো বল থেকেই রান নিতে পারেনি আইরিশরা। ফলে উইকেট মেডেন পান তিনি।

নিজের পরের ওভারে আক্রমণে ফিরে আবারও উইকেটের দেখা পান তাসকিন। এবার তার শিকার টাকার। ওভারের প্রথম বলটি শট লেন্থে ফেলে অফ স্টাম্পের বাইরে রেখেছিলেন এই পেসার, সেখানে অন সাইডে টেনে খেলতে গিয়ে ইয়াসির রাব্বির হাতে ধরা পড়েন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬ রান। ওভারের বাকি বলগুলোতেও কোনো রান দেননি তাসকিন। ফলে পরপর দুটি উইকেট মেডেন পেয়েছেন এই পেসার। ৬০ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ৭৬ রান তুলতেই সাজঘরে টপঅর্ডারের পাঁচ ব্যাটার। ১৬ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে আইরিশরা যখন ধুঁকছে তখন দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলার চেষ্টা করেন জর্জ ডকরেল ও কুর্টিস ক্যাম্পার। ষষ্ঠ উইকেটে এই দুজনে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। তবে অসহায় ছিলেন বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সামনে। তাদের জুটিতে ১০০ পার হয় সফরকারীরা। কিন্তু দলীয় রান তিন অঙ্ক স্পর্শ করার পর আর বেশিদূর এগোয়নি এই জুটি। ১৬ রান করা ক্যাম্পারকে ফিরিয়ে ৩৩ রানের এই জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ।

২৪ ওভারের চতুর্থ বলটি অফ এবং মিডল স্টাম্পের ওপর রেখে ফুল লেন্থে করেছিলেন নাসুম। বলে সামান্য টার্ন থাকায় ডিফেন্স করতে গিয়ে লাইন মিস করেন ক্যাম্পার। তাতে বল সরাসরি পায়ে আঘাত হানলে নাসুমের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি এই আইরিশ অলরাউন্ডার। ফলে রিভিউ নেন তিনি। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। নিজের পরের ওভারে বোলিংয়ে ফিরে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন নাসুম। ওভারের পঞ্চম বলে ১ রান করা গেরেথ ডেলানিকে লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলানোর পরের বলেই অ্যান্ড্রি ম্যাকব্রাইনকেও ফিরিয়েছেন এই স্পিনার। মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে রানের খাতা খুলতে পারেননি ম্যাকব্রাইন। ইনিংসে এটা নাসুমের তৃতীয় শিকার। ব্যাটারদের এমন আসা-যাওয়ার মিছিলেও এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন ডকরেল। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই। তার ৪৫ রান শুধুই হারের ব্যবধান কমিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৩০ ওভার ৫ বল খেলে ১৫৫ রান তুলে অলআউট হয়েছে আয়ারল্যান্ড।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আইরিশ,পাড়ার টিম,টাইগার,ক্রিকেট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close