মরুভূমিতেও ডুবল এশিয়ানরা
কাতার বিশ্বকাপের স্বাগতিকরা প্রথমপর্ব থেকেই লজ্জার রেকর্ড গড়ে বিদায় হয়। একই ভাগ্য বরণ করে মরুভূমির আরেক দেশ সৌদি আরব। এশিয়ার আরেক দেশ ইরানের ফলও একই। শুধু তাই নয়, এশিয়ার ছয় দলের কেউই এবার কাতার বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের প্রথম ধাপ পেরুতে পারেনি।
যদিও এশিয়াবাসীর জন্য সবশেষ আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিল দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। কিন্তু নকআউট পর্ব থেকেই বাদ তারাও। সবমিলিয়ে মরুভূমির প্রথম বিশ্বকাপে এশিয়া শেষ করল হাহাকার নিয়েই। শেষ ষোলোতেই টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেল এশিয়ার। বাড়ির উঠানের বিশ্বকাপ রাঙাতে পারেনি এশিয়ানরা।
স্বাগতিক কাতার, অস্ট্রেলিয়া, ইরান, জাপান, কোরিয়া, সৌদি আরব-এই ছয় দলই একই পথের পথিক। চার দলের বিদায় গ্রুপ পর্বে, অন্যরা নকআউট পর্বে। পার্থক্য এতটুকু। ব্যর্থতার এই ফিরিস্তি যেন বলে দিয়ে যায় লাতিন আমেরিকা বা ইউরোপের তুলনায় এশিয়ার ফুটবলের অবস্থান এখনো তলানিতে। তাই বরাবরের মতো একটু-আধটু অঘটন ঘটানো কিংবা চমক দেখানোতেই খুঁজে নিতে হচ্ছে তৃপ্তি!
চমক কিংবা এশিয়ার ফুটবলের জেগে ওঠার বার্তা দেওয়ার শুরুটা করেছিল সৌদি আরব; দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও ২-১ গোলে জিতে। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে একই ব্যবধানে হারিয়ে জাপান প্রত্যাশার পারদ তুলেছিল আরও উঁচুতে।
গ্যারেথ বেলের ওয়েলসের বিপক্ষে ইরানের ২-০ গোলের জয় আরেকটি প্রাপ্তি। ডেনমার্ক ও তিউনিসিয়াকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার গ্রুপ রানার্সআপ হওয়া নিশ্চিতভাবেই বড় অর্জন। উরুগুয়ের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের পর ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার নকআউট ওঠা দিয়েছিল দারুণ কিছুর ইঙ্গিত। কিন্তু পূর্ণতা পেল না কিছুই।
গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যায় স্বাগতিক কাতার, ইরান ও সৌদি আরব। নকআউট পর্বের শুরুতে বিদায় ঘণ্টা বাজে বাকি তিন দল অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের। অস্ট্রেলিয়া আটকে যায় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার কাছে। নেইমার, রিশার্লিসন, ভিনিসিউস জুনিয়রে সাজানো বিধ্বংসী আক্রমণভাগের সঙ্গে লুকাস পাকেতাও জ্বলে উঠলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় কোরিয়ার স্বপ্ন। ২০০২ সালে এশিয়ার প্রথম এবং সবশেষ দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ওঠার কীর্তিকে ছাপিয়ে যাওয়া হয় না তাদের। এশিয়ারও।
জাপান অবশ্য দূর্ভাগা। শুরুতে দেইজেন মায়েদার গোলে এগিয়ে গিয়ে গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকে চাপে রাখে তারা, কিন্তু অতটুকুই। ইভান পেরিসিচের গোলে সমতা ফেরার পর টাইব্রেকারে জিতে যায় ক্রোয়াটরা। সূর্য উদয়ের দেশ জাপানের কাতার বিশ্বকাপের সুর্যটা অস্তাচলে চলে যায় টুপ করে। বৈশ্বিক ফুটবলের সর্বোচ্চ আঙিনায় এশিয়ার পতাকাও লুটিয়ে পড়ে সীমাহীন ব্যর্থতা নিয়ে। অথচ এবার এশিয়ার দলগুলো নিয়ে প্রত্যাশা ছিল সবার।
শুরুর দিকের আলো ঝলমলে পারফরম্যান্স দিয়ে বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা এশিয়ার বাইরের গণমাধ্যমকর্মীদের বাহবাও পাচ্ছিল এশিয়ার দলগুলো। ফুটবলের সবুজে আড়মোড় ভেঙে জেগে উঠছে এশিয়া, দিন বদলের সুর বাজছে-এমন প্রশংসায় ভাসছিল দলগুলো। কিন্তু চাওয়া-পাওয়ার হিসেব মেলাতো দূর অস্ত, ঠিক যেন জেগে ওঠার বার্তাও বাকি বিশ্বকে দিতে পারল না জাপান-কোরিয়ার কেউই।
এশিয়ার সমর্থকরাও তাই আপন করে নেওয়ার মতো ঘরের ছেলে খুঁজে পায় না। যতটা মেসি, রোনালদো, নেইমার কিংবা এমবাপেকে তারা আপন ভাবতে পারে, বা আপন করে নেয়ও। এ মুহূর্তে গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে ফরাসি ফরোয়ার্ড এমবাপে, ৫টি গোল জ্বলজ্বল করছে তার নামের পাশে। তিনটি করে গোল পাওয়া আট জনের মধ্যে কেউ এশিয়ার নয়। দুটি করে গোল পাওয়া ১৬ জনের ভিড়ে ইরানের মেহেদি তারিম, জাপানের রিতসু দোয়ান, সৌদি আরবের সালেম আল-দাওসারি এবং কোরিয়া চো চিউইয়ি-সাংয়ের কেবল জায়গা হয়েছে।
এতে না মেলে তৃপ্তি, না মেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা। অথচ ২০০২ সালের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের এশিয়ার আঙিনায় আসা। মুরুভূমিতে প্রথমবার। কিন্তু বাড়ির উঠানেও শুরুতে হুঙ্কার ছাড়লেও শেষ পর্যন্ত ‘বাঘ’ হয়ে উঠতে পারল না কোনো দল। তাতে বিশ্বকাপে এশিয়ার হাহাকার, ব্যর্থতার ফর্দ লম্বা হলো আরও। এইচএস