ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৩ জুন, ২০২২

সেন্ট লুসিয়ায় দ্বিতীয় টেস্ট শুরু শুক্রবার

টাইগারদের ঘুরে দাঁড়ানোর সামনে বাধা টপঅর্ডার

গুরুর কাছে ক্যাচ শিখছে শিষ্যরা। ছবি : সংগৃহীত

বছর শুরু মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের উচ্চতার মতো, তারপর যেন উচ্চতা থেকে ধাপে ধাপে ছন্দপতন। গত ছয় মাসে সেই পতন এতটাই হয়েছে যে, এক টেস্ট থেকে অন্য টেস্টে তা তলানীতে নিয়ে গেছে। যার শুরুটা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। কেশব মহারাজের স্পিনের বিরুদ্ধে টাইগাররা ছিল ভাবনাতীত। এরপর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধে ছটফট করা। সবশেষ অ্যান্টিগায় আরও একটি ব্যর্থতা। এর আগে বাংলাদেশ শিবিরে ভয় টপঅর্ডারের ব্যাটিং ব্যর্থতা। মুমিনুল, শান্তদের ব্যাটের যেন ঘুমেই ভাঙ্গছে না।

মুমিনুলদের ব্যাটিং গত ১২ মাসে ধরে ক্রমাগত পতনের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০২২ সালে তাকালে এটি আরও তীব্রভাবে ধরা পড়েছে। এ বছর বিশ্বে সবকটি টেস্ট দলের মধ্যে সর্বনিম্ন ব্যাটিং গড়ের রেকর্ড বহন করছে। সর্বশেষ ১২ ইনিংসের মধ্যে ৫ ইনিংসের ২০০ বা এরও কম রানে অলআউট হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮০ ও ৫৩ অলআউটের স্কোর।

সর্বশেষ অ্যান্টিগা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলাররা বাংলাদেশের ২০ উইকেটের সবকটিই পেয়েছিলেন এবং এর মধ্যে ১৩টি উইকেটই ছিল কিপারের হাতে ক্যাচ বা স্লিপে ক্যাচ। পেস ও বাউন্সি উইকেটে দুর্বলতা আবারও বাংলাদেশ ফিরিয়ে এনেছিল অ্যান্টিগায়। সবশেষ এই ১২ ইনিংসের ব্যাটিং এতটাই বিদ্রুপের পরিহাস হলো তা নিয়ে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মাউন্ট মঙ্গানুইতে জয়-মুমিনুলরা যে ঐক্যবদ্ধ ধৈর্য ও শৃঙ্খলা দেখিয়েছিল সেটাই আবার দরকার লুসিয়ায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্টে। দলগত হয়ে খেলতে পারলেই তা সম্ভব।

টেস্টের ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যায়, এক ইনিংসে ৬ বা তার বেশি শূন্য রানে আউট হবার রেকর্ড আছে মাত্র সাতটি; এর মধ্যে দুটি রেকর্ডই টাইগারদের দখলে। তাও আবার শেষ দুই টেস্ট ম্যাচে, ঢাকা ও অ্যান্টিগায়। এই দুই টেস্ট টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা পেসারদের বিপক্ষে একপ্রকার ছটফটই করতে দেখা গেছে। শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার পেস-বোলিং নায়ক কাসুন রাজিথা এবং আসিথা ফার্নান্দো, যে দুজনের পেসেই মুমিনুলরা খাবি খেয়েছে। এর কয়েক সপ্তাহ পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের পালা, বলা ভালো কেমার রোচের সামনে পড়া। এক কেমার রোচকেই তো সামলাতে পারছে না বাংলাদেশ।

উভয় ইনিংসে আশ্চর্যজনক মিল ছিলো, মাহমুদুল হাসান জয় প্রথম ওভারে আউট, মুমিনুলের অফ স্টাম্পের বাইরে ডেলিভারিতে আত্মাহুতি এবং নাজমুল হোসেন শান্তর অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হয়ে যাওয়া। একই দৃশ্য, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি, যেখান থেকে বেরোতে পারছেন না। এর জন্য দায়ী মূলত ইনিংসের ভালো একটা সূচনা না করতে পারা। এই সময়ে শেষ ১৬ ইনিংসের মধ্যে ১২টিতে, ১০০ রানেরও কম রানে বাংলাদেশ তাদের চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে। আর ১০ বারই স্কোর ছিল ৫০-এর কম। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের শীর্ষ চার ব্যাটসম্যানের গড় ১৮.১৯! যা টেস্ট ক্রিকেটে যেকোনো দলের চেয়ে সবচেয়ে খারাপ।

বাংলাদেশকে যা এগিয়ে রেখেছে, তা হলো টপঅর্ডারের ধ্বংসস্তূপ থেকে মিডল বা লোয়ার অর্ডারের কারও না কারও দাঁড়িয়ে যাওয়া। সেটা কখনো লিটন দাস, কখনো মুশফিকুর রহিম, শেষে মেহেদী হাসান মিরাজ বা রাব্বির ব্যাট ঢাল হয়ে সামাল দিয়েছে। শুরুর পতনের পর ইনিংস মেরামতের সবচেয়ে বড় উদাহরণ গত মাসে ঢাকা টেস্ট। যখন বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ছয় ছয়টি ব্যাটসম্যান শূন্য রানে সাঁজঘরে ফিরেছেন, কিন্তু লিটন দাস এবং মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরির সুবাদে ৩৬৫ রান করে শেষ পর্যন্ত। এখানে একটা তথ্য জানা দরকার গত ১৮ মাসে বাংলাদেশের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ উইকেট জুটি ছিল অবিশ্বাস্য। অন্য যেকোনো দলের চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি স্ট্যান্ড (৫) তৈরি করেছে এই জুটিই। এমনকি পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেটে রেকর্ডে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এবং দ্বিতীয় সেরা গড় নিয়ে আছে রেকর্ডবইয়ে দ্বিতীয়তে। মুমিনুল হকই তার পছন্দের তিন নম্বর পজিশন শান্তর কাছে ছেড়ে দিয়েছিলেন। শান্ত সেই পজিশনের মর্ম কতটা বুঝতে পারছেন কখনো? হ্যাঁ এই সময়ে শান্তর শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শতরান আছে, কিন্তু সেই শতরানের পর ১৭ ইনিংসে মাত্র একবার অর্ধশত পেরিয়েছেন। একে তো শান্ত কখনোই ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিক ছিলেন না তারওপর বাজে ফর্মের প্রভাব পরছে তার ফিল্ডিংয়ে। স্লিপে অসংখ্যবার তার হাত ফসকে ক্যাচ পড়তে দেখা গেছে। যাতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে।

শান্ত বিরতি পাবেন নাকি মুমিনুল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের হাতে আর কোনো ভালো রিপ্লেসমেন্টও নেই। সেক্ষেত্রে যেকোনো একজন বাদ পড়তে পারেন। দলে ঢুকবেন আনামুল হক বিজয়।

তবে যেই বাদ পড়ুক আনামুলের ওপর যে সবার আগ্রহ থাকবে তা বলাই যায়। দলে ঢোকা এক প্রকার নিশ্চিতই আনামুলের। আট বছর আগে যেখানে শেষ টেস্ট খেলে বাদ পড়েছিলেন সেই মাঠেই কি না প্রত্যাবর্তন! বিজয় কি পারবেন এবার তার প্রত্যাশা মেটাতে? তিনি এই টেস্টটা নিজের মতো করে রাঙাতে পারলে যে লাভ বাংলাদেশরই।

সিরিজে মুশফিকের না থাকা, ইয়াসির আলী রাব্বির হঠাৎ ইনজুরি। সব মিলিয়ে এলোমেলো বাংলাদেশ কি পারবে ঘুরে দাঁড়াতে? সেন্ট লুসিয়ার আকাশে ম্যাচ শুরুর আগ পর্যন্ত এটাই বোধহয় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সে প্রশ্নের উত্তর জানতে আরেকটু অপেক্ষা তো করতেই হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঘুরে দাঁড়ানো,সামনে বাধা,টপঅর্ডার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close