দক্ষ জনবল ও উদ্যোক্তা তৈরি করছে আইসিটি বিভাগ : আইসিটি সচিব
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর আইসিটি সচিব হিসেবে আমি যোগদান করেছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যে প্রকল্পগুলো চলমান, সেই প্রকল্পগুলোকে ক্লোজ মনিটরিং করছি। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং টিম কাজ করছে।
আপনি জানেন, আমার মন্ত্রণালয়ের অধীন অনেক সংস্থা রয়েছে; যেমন- হাইটেক পার্ক, টিআইসিটি ইত্যাদি। এর মধ্যে ২১টি প্রকল্প চলমান, যার মধ্যে বৈদেশিক অর্থায়নে কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে আর বেশিরভাগ আমাদের অর্থায়নে হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলো আসলে কীভাবে হয়েছে, সেটা দেখা হচ্ছে। একটা প্রকল্প তৈরি করা হয় কী টার্গেট নিয়ে বা প্রকল্পে কী কাজ রয়েছে, আমরা সেটা খতিয়ে দেখছি। আমরা টাইম টু টাইম রিপোর্ট পাচ্ছি এবং সেই আলোকেই কাটছাঁট করছি। আপনি শুনে খুশি হবেন- বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্প রয়েছে, যেখানে ১৬০ মিলিয়ন ডলার আমরা সেভ করেছি। এ প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেপ্টেম্বর ২০২৫ সালে আমরা এটির কাজ শেষ করতে পারব। আর মাত্র ১০ মাস প্রকল্পে কাজ চলবে, তারপর আসবাবপত্র পড়ে থাকবে সেটা নয়। প্রকল্পের আউটপুট যেটা আছে, সেটা যোগ্য হাতে হস্তান্তর করা হবে। সেই অর্থ দিয়ে আমরা বিশ্বব্যাংকের আরো কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চালাতে পারব।
যারা স্বৈরাচারী সরকারের দোসর, যাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে প্রতিহত করতে, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করছে। আর কিছু আছে; যেমন চাকরি করতে গিয়ে নির্দিষ্ট কিছু এজেন্ট বাঁচতে গিয়ে অথবা চাকরি বাঁচাতে গিয়ে হোক বা ভয়ভীতি থেকে হোক অথবা স্বল্প প্রেমের জন্য হোক, তাদের বিষয়টিও সেভাবে দেখা হচ্ছে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ বিগত ১৫ বছর যেভাবে প্রতিটি স্তরে তাদের লোক দিয়েছে, সেক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক লোক খুঁজে পাওয়া খুবই দুরূহ। এরপরও কিছু লোক আছে, যাদের দেশপ্রেম শতভাগ আবার কারো ৫০ শতাংশ রয়েছে, এখন মন্দের ভালো নিয়ে এগোতে হবে এবং নতুন করে সৎ ও যোগ্য লোক তৈরির কাজ করতে হবে। বর্তমান বিপ্লবী সরকার যে কাজ করছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো কোনো ব্যক্তির পূজা থাকবে না, দেশের জন্য কাজ করতে হবে, আমরা সেই দিকটা গুরুত্বসহ দেখছি। যারা দেশে ও বিদেশে পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করছেন, তাদের সেই পরিশ্রম যেন ব্যর্থ না হয়, সেই আলোকে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।
আমরা যখন সংস্কার নিয়ে কাজ করছি, তখন আমাদের তিনটি ধাপে অগ্রসর হতে হচ্ছে- ১. আমরা জিডিপি অর্জন করতে পেরেছি কি না। ২. যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে, কীভাবে নেওয়া হয়েছে, সঙ্গে কারা জড়িত। ৩. যে প্রকল্পগুলো আসবে, সেটা কোন নিয়মের আওতায় আসবে; যেমন ধরেন অনেক প্রকল্প ছিল একটা বিশেষ পরিবারের নামে, একই নামে একাধিক প্রকল্প ছিল। আমাদের একটা প্রকল্প চলমান, যার মাঝে একে পরিবারে ১৩ জনের সুযোগ-সুবিধ নেওয়ার ব্যাপারে কথা আছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি কাজ করছে, সেই প্রকল্প এখন বন্ধ আছে। অডিট হবে, আমার একটা স্বাক্ষরে সেটা চলে যাবে অডিট অফিসে, কিন্তু সেটা করার আগে আমি একটা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করিয়ে একটা রেজাল্ট এনে সেটা অতীতের রিপোর্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেখি- কোথাও কোনো গরমিলের সুযোগ নিয়েছে কি না। যদি হয়ে থাকে, তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
এছাড়া যে কোম্পানিগুলো আমাদের সঙ্গে অতীতে কাজ করেছে, তাদের নিয়ে অনেক কথা রয়েছে, আমরা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছি। যে প্রকল্পগুলো চলমান আছে, সেগুলো চলবে। যেগুলো নিয়ে সন্দেহ অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন উঠেছে অথবা গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, সেগুলোর তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে সেই প্রকল্পগুলো বন্ধ আছে। আর যে প্রকল্পগুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে এবং বিশ্বব্যাংকসহ যারা অর্থায়ন করছে, তাদের রিপোর্ট যদি পজিটিভ হয় এবং তারা যদি মনে করে সঠিক কাজ চলমান, তাহলে তারা একটি রিপোর্ট দেয়- তারপর কাজটি বা প্রকল্পটি চলমান থাকবে।
আমাদের আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব আন্দোলনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আহত হয়েছেন অথবা যে পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি করে তাদের পাশে থাকার সুযোগ রয়েছে। যদি আইসিটি সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই, তাহলে দক্ষ লোকের বিকল্প নেই। এ বিপ্লবী সরকার চাচ্ছে যুবকশ্রেণি যারা বেকারত্বের রোষানলে আছেন, তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে। একজন দক্ষ উদ্যোক্তা হলে তিনি আরো ১০০ জনকে উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করবেন। তাহলে আমরা বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারব। বর্তমান সরকার এদিকটি বিবেচনা করে কাজ করা যাচ্ছে। আমরা সেই কাজের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।