নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

নতুন মোবাইল ফোন বাজারে নেই, বেড়েছে দাম 

প্রতীকী ছবি

ডলার, জ্বালানি তেল, জাহাজের ভাড়া সব কিছুই বাড়তি; সঙ্গে যোগ হয়েছে মূল্যস্ফীতি এবং তিন স্তরে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর)। এতে দেশে মোবাইল ফোনের দাম বেড়েছে। কমেছে চাহিদাও। বাধ্য হয়ে উৎপাদকরা মোবাইল ফোন তৈরি কমিয়ে দিয়েছেন। কমেছে আমদানিও। ফলে দীর্ঘদিন বাজারে নেই নতুন মোবাইল ফোন। এদিকে বাজারে প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রিতেও ধ্বস নেমেছে। বিক্রি কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশের মতো।

তবে শূন্যতে নেমে যাওয়া গ্রে মার্কেটে (অবৈধ বাজার) মোবাইলের বিক্রি বেড়েছে। কম দামে এই বাজারে মোবাইল পাওয়া যাওয়ায় গ্রে মার্কেটে অবৈধ মোবাইলের বিক্রি ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৫-৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে স্থানীয় নির্মাতা ও উদ্যোক্তাদের।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহিদ বলছেন, মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে যাওয়া ও চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। আমরাও (সিম্ফনি ব্র্যান্ড) কমিয়েছি। কোনো উপায় নেই। কারণ, বাজারে টিকে থাকতে হবে।

জাকারিয়া শহিদ জানান, বাজারে মোবাইলের বিক্রি কমে গেছে ২০-৩০ শতাংশ। আমরা মার্কেট ধরে রাখার জন্য মুনাফায় ছাড় দিয়েছি, অনেক ধরনের বাজার প্রসারমূলক কাজ (ছাড়, উপহার, কিস্তিতে বিক্রি ইত্যাদি) হাতে নিয়ে বাজার ধরে রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু পুরোপুরি সফল হতে পারছি না। এতসব উদ্যোগ নেওয়ার পরও মোবাইল প্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ।

মোবাইল ফোনের বাজার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দেশে মটোরোলা মোবাইল ফোনের ন্যাশনাল পার্টনার সেলেক্সট্রা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিব আরাফাত বলেন, বাজারের অবস্থা খুব খারাপ। বিক্রি কমে গেছে, মোবাইলের দাম বেড়ে গেছে। এসবের পেছনে অনেক কারণ যদিও দায়ী। দেশে গ্রে মার্কেটে আসা অবৈধ মোবাইলের বিক্রি বেড়ে গেছে। সরকারের একটা উদ্যোগের কারণে গ্রে মার্কেটে মোবাইলের বিক্রি শূন্য শতাংশে নেমে গিয়েছিল। এখন তা অনেক বেড়ে গেছে। অফিসিয়াল বা বৈধ চ্যানেলে মোবাইলের বিক্রি কমে যাওয়ার পেছনে এটাও একটা কারণ।

সাকিব আরাফাত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, গ্রে মার্কেটের দৌরাত্ম্য কমাতে জরুরি ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হলে মোবাইলের আসল বাজার বাঁচবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আইফোন-১৪ নিয়ে ফেসবুকে বেশ সরব। অনেকে অগ্রিম বুকিং নিতে শুরু করেছেন। দেশে বৈধ চ্যানেলে (অ্যাপল পণ্যের তালিকাভুক্ত রিসেলার) আইফোন-১৪ আসার আগেই ফেসবুকভিত্তিক অনেক পেজ থেকে ক্রেতাদের প্রি-বুক করতে বলা হচ্ছে। কেউ কেউ ১৬ সেপ্টেম্বর বিকালের পর থেকে আইফোন-১৪ ডেলিভারির কথাও উল্লেখ করেছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে টাকা পাঠিয়ে এর মূল্য পরিশোধ করছেন। ফলে এভাবেও টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। মূল বাজার নষ্ট করার পাশাপাশি এরা দেশের টাকা পাচার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষতিসাধন করছে।

প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রি কমেছে ৪০ শতাংশ : প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে বিক্রিতে ধ্বস নেমেছে। মোবাইলের বিক্রি যেসব কারণে কমেছে, সেসব কারণেই কমেছে প্রযুক্তি পণ্যের দাম। ওইসব কারণের সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে ল্যাপটপ আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ। ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং ভ্যাট আরোপের কারণে ল্যাপটপের দাম বেড়েছে বেশি। অন্যান্য পণ্যের দামও বেশি বলে জানিয়েছেন দেশের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি পণ্যের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেড।

প্রতিষ্ঠানটির চ্যানেল সেলস পরিচালক মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে প্রযুক্তি বাজারে ৪০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকের সামর্থ্যে কুলোচ্ছে না। ফলে বাজারে ক্রেতা কম। ল্যাপটপের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। তিনি মনে করেন, এভাবে চলতে থাকলে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাজারে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রযুক্তি পণ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে। ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারছে না। যদিও এসব কারণে কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে পারফরমেন্সের ভিত্তিতে। খুচরা বিক্রি, করপোরেট বিক্রি, সংশ্লিষ্ট পণ্যের স্টক, বিগত দিনের পারফরমেন্স ইত্যাদি দেখে কর্মী ছাঁটাই চলছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মোবাইল ফোন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close