গাজীপুর প্রতিনিধি

  ০৪ জানুয়ারি, ২০২২

সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী ধান আসছে

বাজারে সুগন্ধি চালের দাম অনেক বেশি, প্রচলিত জাতগুলোর চেয়ে সুগন্ধি জাতের ফলনও হয় অনেক কম। তাছাড়া সুগন্ধি চালের মধ্যপ্রাচ্যে বিশাল বাজার রয়েছে। আবার মাজরা ও কারেন্ট পোকার (বাদামি গাছ ফড়িং)’র কারণে কৃষকরা প্রায় ১০-১৮ ভাগ ফলন হারান। পোকা দমনের জন্য প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক কিটনাশক ব্যাবহার করেন যা মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)র বিজ্ঞানী ও কীটত্ত্ববিদ ড. মো: পান্না আলীর নেতৃত্বে একদল গবেষক বাংলাদেশে বহুলভাবে চাষকৃত জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান৮৯ ও ব্রি ধান৯২ জাতে ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী ধান উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন। ইতোমধ্যে ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাছগুলোতে ধানের দানা আসতে শুরু করেছে এবং ধানের শীষগুলো পাকতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, সভ্যতার শুরুতে বন থেকে সংগ্রহ করা বীজ কৃষকের মাঠে চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষির সূচনা হয়। বিজ্ঞানীরা ফসলের জাত উদ্ভাবনের জন্য এতদিন নির্ভরশীল ছিলেন ইনট্রুডাকশন, ক্রসিং ও সিলেকশন, হাইব্রিডাইজেশন, মিউটেশন ইত্যাদি পদ্ধতির উপর। হাল আমলে ফসলের জাত উদ্ভাবনে জিএমও (জ্যানেটিকাল মডিফাইড ক্রপস) প্রযুক্তি আসলেও, জিএমও ফসল নিয়ে সারা বিশ্বে চলছে পক্ষ-বিপক্ষ মতামত। ক্রিসপার কাস-৯ মূলত ফসলের জিন পরিবর্তন করার আধুনিক বিতর্কমুক্ত একটি প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ২০২০ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ইমান্যুায়েল শাপেন্টিয়ের ও জেনিফার ডোউডনা। এই সর্বশেষ আধুনিক পদ্ধতি ব্যাবহার করে ২-৩ বছরের মধ্যে যে কোনো ফসলে কাঙ্খিত গুনাগুন (সুগন্ধি, রোগ ও পোকা প্রতিরোধী) যোগ করে ট্রান্স জিন মুক্ত জাত উদ্ধাবন করা যায়। সম্প্রতি ব্রি’র ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কীটত্ত্ববিদ ড. মো: পান্না আলীর নেতৃত্বে একদল গবেষক ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য সন্নিবেশ করে ধানের ২৪টি গাছ পেয়েছেন।

গবেষণায় নেতৃত্বধানকারী ড. মো: পান্না আলী জানান, বাজারে সুগন্ধি চালের দাম অনেক বেশি হওয়ায় গরিব মানুষ ক্রয় করতে পারে না। তাছাড়া প্রচলিত জাতগুলোর চেয়ে সুগন্ধি জাতের ফলনও অনেক কম হওয়ায় আমাদের কৃষক সুগন্ধি ধানের জাত চাষ করতে চায় না। অথচ সুগন্ধি চালের মধ্যপ্রাচ্যে বিশাল একটি বাজার রয়েছে। তাই বাংলাদেশে বহুলভাবে চাষকৃত জাতগুলো ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান৮৯ ও ব্রি ধান৯২ জাতে ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুগন্ধি বৈশিষ্ট্য ঢুকানো হয়েছে। তাছাড়া মাজরা ও কারেন্ট পোকার (বাদামি গাছ ফড়িং)’র কারণে কৃষকরা প্রায় ১০-১৮ ভাগ ফলন হারান। ফসলের এ পোকা দমন করতে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক কিটনাশক ব্যাবহার করেন, যা মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরুপ। সেজন্যে ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমনের জন্য ব্রি ধান৮৭ ও বোরো মওসুমের জন্য ব্রি ধান৮৯ ও ব্রি ধান৯২ ধানে মাজরা ও কারেন্ট পোকা প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য (জিন পরিবর্তন করে) ঢুকানো হয়। সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী ২৪টি গাছ পেয়েছি। সম্প্রতি ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে গাছগুলো পাওয়া গেছে তা থেকে ধানের দানা আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে ধানের শীষগুলো পাকতে শুরু করেছে।

তিনি আরো জানান, ধানে BADH2 জিন সক্রিয় থাকলে ২-এসিটাইল-১- পাইরোলিন (2AP) উৎপাদন ব্যাহত করে সুগন্ধি তৈরিতে বাধাগ্রস্ত করে । সব ধানেই সুগন্ধি বৈশিষ্ট আছে কিন্তু BADH2 জিন থাকার কারণে সুগন্ধি বৈশিষ্ট প্রকাশিত হতে পারেনা । ক্রিসপার ক্যাস-৯ পদ্ধতিতে জিনটি নিষ্ক্রিয় করে অধিক ফলনশীল যেকোনো ধানের যাতে সুগন্ধি বৈশিষ্ট তৈরি করা যাই । একই পদ্ধতিতে ধান গাছে সেরোটোনিন উৎপাদন ব্যাহত করে ধানের প্রধান অনিষ্টকারী পোকা বাদামি গ্যাসফড়িং ও মাজরা পোকা প্রতিরোধী ধানের জাট উৎপন্ন করা যায়।

তিনি আরো জানান, ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির ক্রিপার ক্যাস-৯ পদ্ধতি ব্যবহার করে উদ্ভাবিত ২৪টি গাছ সম্প্রতি পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ব্রির কীটত্ত্ব বিভাগের প্রধান ও মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শেখ শামিউল হক উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সুগন্ধি,পোকা প্রতিরোধী,ধান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close