এটি এম মোসলেহ উদ্দিন জাবেদ

  ০২ জুন, ২০২৩

ধর্মচিন্তা

হজে গমনেচ্ছুদের পরামর্শ

প্রতিনিধিত্বশীল ছবি

মানুষের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণ হলো পবিত্র হজব্রত পালন, যা একই সঙ্গে শৃঙ্খলাবোধ, ছাড় দেওয়ার মানসিকতা, বিনয়, ধৈর্য, শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, সময় ব্যবস্থাপনা, দলীয় বন্ধন দৃঢ়করণসহ অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। পৃথিবীতে আর একক কোনো প্রশিক্ষণ নেই- যেখানে একের ভেতর এত কিছু জানা, বোঝা, শেখা তথা উপলব্ধি করার সুযোগ বিদ্যমান!

মহান আল্লাহ সুবহানুতায়ালা স্বয়ং হজের পরিকল্পক ও নকশাকার আর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হজের সফল বাস্তবায়নকারী। হজের সময় আমরা পৃথিবীর প্রথম মানব ও নবী তথা মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদম (আ.), মুসলিম জাতির পিতা নবী হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও নবী হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে জীবনের জন্য অতিশয় মূল্যবান কিছু শিক্ষালাভ করি। এর পাশাপাশি যে শারীরিক ও মানসিক উপলব্ধি হয়, বাকি জীবনে সেগুলোই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকে। পবিত্র হজপালনের উদ্দেশ্যে এবার যারা সৌদি আরব যাচ্ছেন, এই লেখাটা তাদের জন্য।

হজ হচ্ছে ধৈর্যের পরীক্ষা। প্রতি পদক্ষেপে আপনাকে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। যত প্রস্তুতিই নেন আর যত ভালো সঙ্গই বাছাই করেন না কেন, সৌদি আরবে যাওয়ার পর অনেক কিছুই আশানুরূপ হবে না বা মনের মতো করে পাবেন না। তবু আপনাকে হাসিমুখে সব পরিস্থিতি মেনে নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কারো সমালোচনা করবেন না কিংবা নেতিবাচক মন্তব্য করে অহেতুক গুনাহের ভাগীদার হবেন না।

হজের সফরকালে খাদ্য নির্বাচনে যথাসম্ভব সতর্ক থাকবেন। যত পারেন জমজমের পানি পান করবেন। তবে ঠাণ্ডা পানি পান করা থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকবেন। ফার্স্টফুড কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন, পারলে এড়িয়ে চলবেন। ভাজা-পোড়া পুরোপুরি বর্জন করবেন। তার বদলে নানা ধরনের খেজুরের স্বাদ নিন। আরব দেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ ফল ও ফলের রস খান। প্রতিদিন টকদই/ লাচ্ছা/মাঠা কিনে খাবেন।

অনেকেই হাজিদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন। আপনার চারপাশে খাবারের ছড়াছড়ি দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। আপনি প্রয়োজনীয় ন্যূনতম খাবার সংগ্রহ করতেই পারেন। কিন্তু পরে খাব এই আশায় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করে অন্যের হক নষ্ট করবেন না। অতিরিক্ত খাবারের বোঝা বইতে আপনারই বরং কষ্ট হবে।

যেহেতু ইবাদতের উদ্দেশ্যেই যাচ্ছেন, পাঁচওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও তাহাজ্জুদের নামাজ, এশরাকের নামাজ ও চাশতের নামাজ যথাসময়ে আদায় করবেন। মক্কায় বেশি করে তাওয়াফ করার চেষ্টা করবেন। কোরআন তিলাওয়াত করবেন। হজের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসবে, তত বেশি হাজিদের ভিড় বাড়তে থাকবে। সুতরাং হজ শেষ করার অপেক্ষায় না থেকে যত পারেন নফল তাওয়াফ করতে থাকুন। তবে শারীরিক সক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত চাপ নেবেন না। হজ সম্পন্ন করে দেশে ফেরা পর্যন্ত নিজেকে সুস্থ, কর্মক্ষম ও সক্রিয় রাখতে হবে।

হারাম শরিফে এত হাজির গণজমায়েত হয় যে, একবার বের হয়ে এলে আবার ঢোকা মুশকিল। সে কারণে নামাজের উদ্দেশ্যে ঢোকার আগে পানি কম পান করবেন।

তবে বের হবেন জমজমের পানি পান করে। হারাম শরিফ থেকে বের হওয়ার সময় জমজমের পানি ভরে এনে হোটেল কক্ষে পান করার জন্য একটি বোতল সঙ্গে রাখতে পারেন।

কাবাঘর প্রথম দর্শনের সময় যা কিছু দোয়া করবেন, সব কবুল হবে ইনশাল্লাহ। সুতরাং কী দোয়া করবেন- সেটা কাবা শরিফ দৃষ্টিসীমার ভেতরে আসার আগেই মনে মনে সাজিয়ে নিন। হজযাত্রীরা তাদের স্মার্টফোনে হঁংঁশ অ্যাপটি ডাউনলোড করে নেবেন। সেখানে আপনার নাম, মুঠোফোন নম্বর, ভিসা নম্বর ইত্যাদি নিবন্ধন করে রাখতে হবে। তারপর মদিনা শরিফে অবস্থানের সময়সূচি মিলিয়ে রিয়াজুল জান্নাতে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের জন্য অনলাইনে অগ্রিম বুকিং দিতে হবে।

আপনি যে হোটেলে থাকবেন, নামাজের সময় তার সামনে অবধি কাতার দাঁড়িয়ে যাবে। তাই বলে অলসতা করবেন না। চেষ্টা করবেন প্রত্যেক ওয়াক্তে হারাম শরিফের সীমানার ভেতরে গিয়ে নামাজ আদায় করতে। এজন্য ওয়াক্ত শুরু হওয়ার অনেক আগে রওনা হতে হবে, নইলে মুসল্লিদের ভিড়ে ভেতরে ঢোকার সুযোগই পারবেন না।

প্রথম দিন হোটেলে উঠেই অভ্যর্থনা ডেস্ক থেকে হোটেলের ঠিকানা লেখা কার্ড চেয়ে নেবেন এবং সেটা পাসপোর্টের মতোই সব সময় সঙ্গে রাখবেন (বহন করবেন)। পাসপোর্ট যেন হারিয়ে না যায়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া আইডি কার্ড ও সৌদি মোয়াল্লেমের কার্ড সব সময় গলায় ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। 

কোনো কারণে দিকভ্রান্ত হয়ে গেলে সুউচ্চ মক্কা টাওয়ারকে লক্ষ করে যথাস্থানে ফিরে আসবেন। কখনো যদি হারিয়েও যান, টেনশন করবেন না। সবার আগে ধীরে-সুস্থে ইবাদত শেষ করুন, তারপর জমজমের পানি পান করে ঠিকানা খুঁজে বের করুন।

এহরাম বাঁধা এবং ওমরাহ ও হজপালনের ওপর ইউটিউবে অনেক ভিডিও ছড়িয়ে আছে। অবসর সময়ে সেগুলো দেখে নিয়মকানুন জেনে নিতে পারেন।

হজযাত্রীরা হজ গাইডবিষয়ক বিভিন্ন বই পাওয়া যায়, অন্তত একটা বই অবশ্যই সঙ্গে করে সৌদি আরব নিয়ে যাবেন। এ বইগুলোতে বিভিন্ন দোয়া, ওমরাহ ও হজবিষয়ক পরামর্শ দেওয়া থাকে। সেগুলো অনুসরণ করতে পারেন। 

লেখক : কলামিস্ট। ইমেইল : [email protected]

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হজে গমনেচ্ছু,ধর্মচিন্তা,হজ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close