মাওলানা মোহাম্মদ হানজালা

  ০২ এপ্রিল, ২০২৩

যাদের রোজা কবুল হয় না 

প্রতীকী ছবি

দশটি কারণে মাহে রমজান শ্রেষ্ঠ। এর মধ্যে এক নম্বর হচ্ছে, কোরআন নাজিলের মাস। এছাড়া সিয়াম ও কিয়াম। রমজান মাসের আগমন ঘটে প্রধানত রোজা ও কিয়ামুললাইল বা তারাবির বার্তা নিয়ে। এটি রমজান মাসের বিশেষ আমল। দুইটি আমলের ব্যাপারে সর্বাধিক যত্নবান হওয়া অত্যাবশ্যকীয়। একই সঙ্গে কোরআন নাজিলের মাস হওয়ায় কোরআন শিক্ষা ও বুঝে তেলাওয়াতের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে যেমনটা বলেছেন, তোমাদের ওপর রোজা ফরয করা হয়েছে যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী বা আল্লাহি ভীরু হতে পার। (সূরা বাকারা আয়াত নম্বর ১৮৩)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু রাসুল স: থেকে বর্ননা করেন। তিনি বলেছেন, রমজান মাসের সর্বাধিক লাভ তো তারাই অর্জন করে, যারা সিয়াম ও কিয়াম পালন করে।

এর প্রথম পুরষ্কার : রমজান শেষে গুনাহ ওই ব্যক্তির মতো পবিত্র হয়ে যায়, যে সদ্য মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল সুবহানাল্লাহ।

২য় নাম্বার হচ্ছে : কুরআন নাযিলের মাস। রমজান মাস হলো কোরআন নাজিলের। এই মাসে পূর্ণ কুরআন লাওহে মাহফুজ থেকে একসঙ্গে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয় এবং রাসূল সাল্লাহু এর উপর ওহী অবতরণের সূচনা হয় এই মাসে।

এরশাদ হয়েছে, রমজান মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত পাওয়ার পথ নির্দেশ ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। (সূরা বাকারা আয়াত নাম্বার ১৮৫)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে রোজা বলবে, হে আল্লাহ! তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে পূর্ণ বিরত রেখেছে। তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। বলবে, আমি তাকে রাতের নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। কাজেই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। -হাদিস

রাসুল স: আরও বলেছেন যে, আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’য়ালা বলেছেন, ‘রোজা আমারই জন্য এবং এর প্রতিদান আমিই দেব।’ অন্য হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, ‘রোজার প্রতিদান আমি নিজেই।’ অপর হাদিসে রাসুল বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও হিসাব নিকাশ করে রমজানের রোজা রাখে, আল্লাহ তা’য়ালা ওই ব্যক্তির আগের ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দেন।’

রোজাদারের জন্য জান্নাত প্রবেশের জন্য বিশেষ দরজা ‘রায়হান’ থাকবে বলেও হাদিসে এসেছে। ওই ভিআইপি দরজা দিয়ে শুধু রোজাদারগণই জান্নাতে প্রবেশ করবেন। কিন্তু কিছু মানুষের রোজা আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। তারা রোজা রাখলেও কোনো প্রতিদান পাবেন না। রোজা কবুল না হওয়ার কারণ কিছু মুসলিম রমজান মাসে রোজা রাখার পরও এর প্রতিদান ও ফজিলত থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবেন। আল্লাহ তা’য়ালা রমজান মাসে প্রতিদিন অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন। বিশেষ করে তিন বাক্তির দোয়া ফারত দেওয়া হয় না। তারা হলেন- রোজাদারের দোয়া ইফতার পর্যন্ত, ন্যায়পরায়ণ শাসক-এর দোয়া ও মজলুম-এর দোয়া।

রাসুল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজা রেখেও অশ্লীল কাজ ও পাপাচার ত্যাগ করতে পারলো না, তার পানাহার ত্যাগ করায় কোনো দরকার নেই।

আরেক হাদিসে এসেছে। হজরত কাব বিন আজরাহ (রা.) বলেন, একদা রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন- তোমরা মিম্বরের কাছাকাছি হয়ে বসো। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সবাই কাছাকাছি হয়ে বসলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখেন এবং বলেন: ‘আমিন’। অতঃপর দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখেন এবং বলেন: 'আমিন'। অনুরূপ তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও তিনি বলেন: 'আমিন'।

বয়ান শেষে মিম্বর থেকে নবীজি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেমে আসলে কৌতূহলী হয়ে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করেন, আপনাকে তো আগে কখনো এমন করতে দেখিনি। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি তখন হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উপস্থিত হয়ে বললেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েছে কিন্তু নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি সে ধ্বংস হোক। তখন আমি বললাম: 'আমিন'।

অতঃপর যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যার নিকট আপনার নাম পেশ করা হয়েছে কিন্তু সে আপনার প্রতি দরূদ পড়েনি সে ধ্বংস হোক। তখনও আমি বললাম 'আমিন'।

সর্বশেষ যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা মাতার কাউকে তাদের বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে, কিন্তু তাদের খেদমত, সেবা-যত্ন করে জান্নাতের মালিক হতে পারেনি সেও ধ্বংস হোক। তখনও আমি বললাম, 'আমিন'। (বায়হাকী: ১৫৭২)

পিডিএস/এইচএস

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোজা,রমজান মাস,কিয়ামুললাইল,তারাবিহ নামাজ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close