মাওলানা আমিন আশরাফ

  ৩১ মার্চ, ২০২৩

যে কথা ও কাজে ইবাদত সার্থক হয় না

রহমতের অষ্টম রমজান আজ। আল্লাহতায়ালা মানুষের ওপর এ দশকে রহমত ও করুণা বর্ষণ করেন। মানুষও তার রহমত ও দয়াপ্রত্যাশী।

অন্যায় ও অপরাধমুক্ত থাকার মাস রমজান। নেক আমলে জীবন সাজানোর মাস রমজান। প্রশান্ত আত্মা লাভের মাসও এটি। এ মাসে কিছু অন্যায় কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে পারলেই সফলতা লাভ করবে মুমিন।

আল্লাহর কাছে প্রশান্ত আত্মার অধিকারী বলে বিবেচিত হবেন মুমিনরা।

হাদিসে এসেছে, ‘এমন অনেক রোজাদার আছেন, যাদের রোজা পালন উপবাস করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আবার রাত জেগে ইবাদত করা এমন অনেক আবেদ আছেন, যারা রাত জেগে ইবাদত করেও কোনো বিনিময় পাবে না।’

কারণ রোজা রেখে তারা মারাত্মক কিছু গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে পারেনি। ফলে তাদের রোজা পালন হয়ে যায় উপবাস এবং রাত জাগরণ হয় ব্যর্থ। তাই রমজানে দিনের বেলায় রোজা পালন ও রাত জেগে ইবাদতকে মূল্যমান করতে কিছু অন্যায় ও মন্দকাজ থেকে বিরত থাকা আমাদের একান্ত আবশ্যক।

রোজা আল্লাহর মাস। এ মাসে আল্লাহ বান্দাকে পরিপূর্ণ নেয়ামত দান করেন। তাই রমজানে সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করা সৎকর্মশীল বান্দার গুণ। তাই কোনো রোজাদারকে যেমন কোনো কষ্ট দেওয়া উচিত হবে না, তেমনি কারো সঙ্গে বাজে আচরণ করাও ঠিক হবে না। সবার সঙ্গে ভালো আচরণ ও কল্যাণ কামনাই জরুরি। রহমত লাভে বেশি বেশি এ দোয়া পড়া- ‘রাব্বি আওঝিনি আন আশকুরা নি’মাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা সালেহান তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন।’ (সুরা নামল, আয়াত ১৯)

অর্থ হলো, হে আমার প্রভু! আপনি আমার প্রতি ও আমার বাবা-মার প্রতি যে (রহমত) অনুগ্রহ দান করেছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আমাকে শক্তিদান করুন আর যেন এমন (নেক আমল) সৎকাজ করতে পারি, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন আর আপনি দয়া করে আমাকে আপনার সৎকর্মশীল (নেক) বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন।’

রমজানের চলাফেরা ওঠাবসা সব হবে মহান আল্লাহর জন্য। যেহেতু মাস আল্লাহর আর এ মাসের সব কাজও হবে আল্লাহর জন্য। তাই সব কাজে চোখের হেফাজত জরুরি। কুদৃষ্টিতে তাকানো মহাপাপ। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শয়তানের তীরসমূহের মধ্যে মানুষের দৃষ্টিশক্তিও (কুদৃষ্টি) একটি। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে এ তীরবিদ্ধ হওয়া থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করেন, আল্লাহ ওই ব্যক্তির হৃদয়ে ইমানের এমন দৃষ্টিশক্তি দান করেন, যা তাকে মজা ও স্বাদ অনুভব করতে সহায়তা করে।’

যারা নিয়মিত আল্লাহতায়ালার গুণবাচক নাম ‘আল-হাফিজু’ পাঠ করবেন, তিনি তার ওই প্রিয় বান্দাকে পাপকাজে পতিত হওয়া থেকে হেফাজত করবেন।

রোজা রেখে কোনো ব্যক্তির বদনামি বা পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা জরুরি। পরনিন্দা হলো কারো ব্যাপারে কুৎসা রটানো। কোরআনুল কারিমে এ কাজকে মৃত মানুষের পচা গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-

‘কোনো ব্যক্তির পেছনে এমন কোনো কথা বলা, যা তার সামনে বললে সে ব্যক্তি নারাজ হয়।’ সাহাবারা জানতে চাইলেন, ওই ব্যক্তির মাঝে যদি সেই দোষ বাস্তবেই থাকে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তবেই তো গিবত বা কুৎসা রটানো হলো। আর যদি ঘটনা সত্য না হয়ে মিথ্যা হয় তবে তার ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হলো। যেটি আরো বড় মারাত্মক অপরাধ।’ নাউজুবিল্লাহ!

সুতরাং মুমিন মুসলমানের কাছে রোজার মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই দীর্ঘ ১১ মাস অপেক্ষার পর রমজান পেয়ে তাতে এ কথা ও গর্হিত কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে না পারলে রমজানের রোজা পালন ও ইবাদত কোনোটি সার্থক ও সফল হয় না।

আল্লাহতায়ালা আমাদের এসব কথা ও কাজ থেকে বিরত থেকে রোজা ও ইবাদতকে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : আলেম, শিক্ষক ও অনুবাদক [email protected]

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইবাদত,রোজা,রমজান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close