মাওলানা আমিন আশরাফ
দান-সদকার মাস রমজান

আল্লাহর অশেষ রহমত লাভের আজ পঞ্চম দিন। পবিত্র রমজানে রোজা পালন মানুষকে দানশীলতা, বদান্যতা, উদারতা ও মহত্ত্বের শিক্ষা দেয়। কোনোপ্রকার অপচয় না করে রমজানে মানুষের সেবায় দান-সদকা করলে অভাবী মানুষের উপকার হয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক উদার ও দানশীল ছিলেন। রমজানে হজরত জিবরাইল (আ.) যখন নিয়মিত নবীজির কাছে যাতায়াত করতে শুরু করেন, তখন তার দানশীলতা বহু গুণ বেড়ে যেত। (বোখারি)
হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, ‘আমি নবীজি (সা.) থেকে আর কাউকে এত বেশি দয়ালু হতে দেখিনি।’ (মুসলিম)
রমজান পালনের মাধ্যমে রোজাদারের অন্তরে দানশীলতা ও বদান্যতার গুণাবলি সৃষ্টি হয়ে থাকে। মানুষকে দানশীল, সহানুভূতিশীল, মানবদরদি ও পারস্পরিক কল্যাণকামী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইসলামের প্রতিটি ইবাদত সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালায়। তাই রোজাদার ব্যক্তিকে ইবাদতে মগ্ন থেকে সদয় আচরণ, দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রোজার মাধ্যমেই মানুষ দানশীল ও আল্লাহর পথে নিজের সম্পদ খরচ করতে উৎসাহী হয়।
হাদিসে কুদসিতে আছে, ‘মহান আল্লাহ বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি দান করতে থাকো, আমিও তোমাকে দান করব।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
যিনি দাতা বা দানশীল, তার হাত দানগ্রহীতা বা দান গ্রহণকারীর হাত থেকে উত্তম। দাতা শ্রেষ্ঠ এজন্য যে, তিনি দানশীলতা ও বদান্যতার মাধ্যমে অন্যের উপকার করেন। আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যারা আত্মমর্যাদাশীল অথচ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত, তারা প্রকাশ্যে সাহায্য চাইতে লজ্জাবোধ করলেও তাদের থেকে দান আরম্ভ করা অপরিহার্য। আর দান-সদকা করে রোজাদার ব্যক্তি অন্তরে কষ্ট অনুভব করলে সেই দান আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় ও পছন্দনীয় হয় না। তাই প্রাচুর্য থেকে দান করলে অধিক সওয়াব লাভ হয়। কেননা, এতে দাতার অন্তরে কোনো রকম কষ্ট হয় না। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘আর তাদের (ধনীদের) অর্থ-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা আল-জারিআত, আয়াত ১৯)।
মাহে রমজানে দানের ফজিলত অনেক বেশি। অন্য ১১ মাসের তুলনায় এ মাসে অধিক দান-সদকা করা উচিত। নবীজি (সা.) তার উম্মতদের বাস্তব শিক্ষা দিতে রমজানে দান-খয়রাত ও বদান্যতার হাত প্রসারিত করতেন। রমজানে তার দানশীলতা অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেড়ে যেত। এ মাসকে তিনি দানশীলতার ব্যাপারে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তিনি রমজানে অন্যান্য সময় থেকে অনেক বেশি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল হতেন। প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থী দরিদ্রকেই তিনি দান করতেন। এ সময় কোনো প্রার্থী তার কাছ থেকে খালি হাতে ফেরত যেত না।
যে রোজাদারের মন উদার ও আত্মা পরিশুদ্ধ, সে দরিদ্র হলেও প্রকৃত ধনী। যার যত টাকাপয়সা আছে, সেই অনুপাতে দান-সদকা আল্লাহ গ্রহণ করে থাকেন। ধনী ও বিত্তশালী রোজাদার ব্যক্তি বেশি টাকা দান করে যে পুণ্যের অধিকারী হবেন, অনুপাতে কম টাকা দানকারী বিত্তহীন ব্যক্তিও আল্লাহর কাছে সেই পুণ্যের অধিকারী হতে পারেন, যিনি বিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে খুশি মনে দান করবেন। দানের ব্যাপারে শুধু টাকার অঙ্কের ওপর নির্ভর করে না, তা মানুষের মনের ওপরও নির্ভর করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আত্মার অভাবমুক্তিই হচ্ছে আসল মুক্তি।’ (বোখারি)।
যারা শুধু শুধু এমনিতেই রমজানের রোজা রাখে, কিন্তু দান-সদকা করে না, তার এমন রোজা মহান আল্লাহ ও তার নবীজির কাছে প্রিয়তর করে তুলতে পারে না। হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রা.) বলেছেন, ‘নামাজ মানুষকে আল্লাহর পথে অর্ধেক পৌঁছে দেয়। রোজা তাকে আল্লাহর ঘরের দরজায় নিয়ে যায়। আর দান-খয়রাত তাকে আল্লাহর ঘরে প্রবেশ করায়।’
জান্নাতে প্রবেশের জন্য দানশীলতা একটি অতি প্রয়োজনীয় গুণ। তাই প্রতিটি মুমিন মুসলমানের উচিত রোজা, তারাবি ও কোরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি নিজের ধন-সম্পদ দরিদ্র মানুষের কল্যাণে সাধ্যমতো দান করা। মহান আল্লাহ মাহে রমজানে নিখুঁত ইবাদতের পাশাপাশি দান-সদকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : আলেম, শিক্ষক ও অনুবাদক [email protected]