মাওলানা আমিন আশরাফ

  ২৪ মার্চ, ২০২৩

কল্যাণের বারতা নিয়ে এলো মাহে রমজান

কল্যাণের বারতা নিয়ে আগমন করল মাহে রমজান। আজ রমজান মাসের প্রথম দিন। শুরু হলো রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস পবিত্র রমজান। বাংলাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমান আল্লাহর নির্দেশমতো পবিত্র রোজা পালন শুরু করেছেন। পবিত্র কোরআনে কারিমে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সঠিক পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন কারিম অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা রাখে।’ ‘হে মুমিনরা! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন দেওয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (বাকারা, আয়াত ১৮৫ ও ১৮৩)।

কল্যাণের বারতাবাহী এ রমজান মাসকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে- রহমতের ১০ দিন, মাগফিরাতের ১০ দিন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির ১০ দিন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি, প্রথম খণ্ড, হাদিস ৩৭, ৩৬ ও ৩৪)

আরবি ভাষায় রোজাকে সিয়াম বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় সাওম বা রোজা হলো ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইবাদতের উদ্দেশ্যে খাবার-দাবার ও স্বামী-স্ত্রীর মিলন থেকে বিরত থাকা। আল্লাহতায়ালা কোরআন কারিমে বলেন, ‘আর তোমরা আহার করো যতক্ষণ রাতের কালোরেখা থেকে সুবহে সাদিকের সাদারেখা স্পষ্টভাবে তোমরা দেখতে না পাও। অতঃপর সূর্যাস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো।’ (বাকারা, আয়াত ১৮৭)

রোজা রাখা রাখা বাধ্যতামূলক ফরজ ইবাদত- প্রাপ্তবয়স্ক বা সাবালক, বুদ্ধিমান, রোজা পালনে সামর্থ্য রাখে এমন সব সুস্থ সবল নারী ও পুরুষের ওপর। ঋতুমতী নারী, সন্তান প্রসবকারী মা, অসুস্থ ব্যক্তি এ রোজা পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করবেন। এমন অক্ষম ব্যক্তি, যাদের আবার সুস্থ হয়ে রোজা পালনের সামর্থ্য লাভের সম্ভাবনা নেই, তারা রোজার জন্য ফিদিয়া প্রদান করবেন। অর্থাৎ প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমান দান করবেন। জাকাত গ্রহণের উপযুক্তদের এ ফিদিয়া দেওয়া যাবে।

রমজানের রোজার প্রতিদান আল্লাহতায়ালা নিজ হাতে দেবেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই রোজা আমার জন্য। আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দেব।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৫১/১৬৫)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবেন। তাদের প্রবেশের পর এ দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা ছাড়া অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না।’ (বোখারি, খণ্ড ৩, হাদিস ১,৭৭৫)

রমজান মাস ইবাদতের বসন্তকাল। রমজান মাসে একটি ফরজ আদায়, পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করার সমান। রমজানের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুটি ওয়াজিব- সদকাতুল ফিতর প্রদান করা এবং ঈদের নামাজ আদায় করা। সাহরি খাওয়া, তাহাজ্জুদ আদায় করা, ইফতার করা ও করানো, ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করা, কোরআন কারিম বেশি বেশি তেলাওয়াত করা এবং ইতিকাফ করা; রমজানের শেষ ১০ দিন বিজোড় রাতগুলোয় শবেকদর সন্ধান করা এবং ঈদের জন্য শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা।

তারাবির নামাজ রমজানের বিশেষ আমল। পুরুষদের তারাবির নামাজ মসজিদে জামাতে আদায় করা সুন্নাহ। অসুস্থতা বা কোনো সমস্যা থাকলে মসজিদে যাওয়া সম্ভব না হলে এবং জামাত করা না গেলে তখন একা পড়লেও পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে। অনুরূপ পাঁচওয়াক্ত ফরজ নামাজও বিশেষ অবস্থায় একাকী আদায় করা যাবে। এতেও পরিপূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে।

লেখক : আলেম, শিক্ষক ও অনুবাদক [email protected]

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মাহে রমজান,কল্যাণের বারতা,সিয়াম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close