ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

  ০৯ মার্চ, ২০২৩

শাবান মাসের ফজিলত ও করণীয়

ছবি : সংগৃহীত

শাবান মাস এলেই চারদিকে ইবাদতের সুবাতাস বইতে শুরু করে। মুমিন হৃদয় জেগে ওঠে। নিজেদের প্রভুপ্রেমে বিলিয়ে দেন বিনীদ্র রজনিতে। ইবাদত-বন্দেগিতে কাটান দিনের বেশির ভাগ সময়। রমজানের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে মানসিকভাবে গড়ে তোলার অপূর্ব সুযোগ হলো শাবান মাস। এ মাস হাদিসের আলোকে বিভিন্ন বিবেচনায় একটি ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। মুসলিম উন্মাহর এ মাসে কিছু করণীয় রয়েছে।

রাসুল (সা.) রজবের চাঁদ উঠলে দোয়া করতেন ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান’ অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। ‘আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন’। এ কথার অর্থ হচ্ছে রমজান পর্যন্ত আমাদের জীবনদান করুন। যেন আমরা রমজান মাস পেয়ে অধিক হারে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মহান পবিত্র রমজান মাসের ফজিলত লাভে ধন্য হই। এজন্য পবিত্র রজব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর রমজানের চাঁদ দেখা পর্যন্ত উপরোল্লিখিত দোয়াটি পাঠ করা সুন্নত বা মুস্তাহাব।

যেহেতু পবিত্র রমজান মাস বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ মাস, সেহেতু পূর্ব থেকেই এ মাসের ইবাদত-বন্দেগির জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটাই একজন মুমিনের কর্তব্য। হজরত রাসুল (সা.)-এর উপরোক্ত দোয়া-ই প্রমাণ করে তিনি পবিত্র রজব মাস শুরু থেকেই রমজানের জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকতেন।

বিভিন্ন হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় হজরত মুহাম্মদ (সা.) পবিত্র রজব ও শাবানে রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। রমজানে অধিক ইবাদতের জন্য সময়-সুযোগ বের করতেন। মানসিকভাবে তৈরি হতেন। আর এ কারণেই তিনি পবিত্র শাবানের দিন, তারিখ গুরুত্বসহকারে হিসাব রাখতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুল (সা.) পবিত্র শাবানের (দিন, তারিখ হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ রাখতেন, যা অন্য কোনো মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না (সুনানে আবু দাউদ ১/৩১৮)। অনেক হাদিসেই বর্ণিত হয়েছে হজরত মুহাম্মদ (সা.) পবিত্র শাবানের চাঁদের দিন, তারিখের হিসাব রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

সুতরাং পবিত্র শাবান মাসের দিন-তারিখের হিসাব রাখাটাই সুন্নত এবং মুমিনদের করণীয়। পবিত্র শাবান মাসে অধিকহারে নফল রোজা রাখা উত্তম। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হজরত নবী করিম (সা.) শাবান ও রমজান ছাড়া দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে শাবান মাসের মতো এত অধিক (নফল) রোজা রাখতে আর দেখিনি। এ মাসের অল্প কিছুদিন ব্যতীত বরং বলতে গেলে সারা মাসটাই তিনি নফল রোজা রাখতেন (জামি তিরমিজি ১/১৫৫)।

সুন্নাহর আলোকে শাবান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো জেনে নেওয়া খুবই জরুরি। এ মাসে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি আমল বা কাজ, যা আমলে নববি বা সুন্নাতি আমল হিসেবে বিবেচিত। রমজান মাসের আমলগুলো ঠিকভাবে উদযাপন করতে শাবান মাসে ৪টি আমল বেশি বেশি করা খুবই জরুরি। শাবান মাসে এ আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে পারলেই রমজানের ইবাদতগুলো করা সহজ হবে। পরিপূর্ণ ফজিলত ও বরকত লাভ সম্ভব হবে। তাহলো ১. বেশি বেশি রোজা রাখা। ২. বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা। ৩. বেশি বেশি সাদাকাহ (দান-সহযোগিতা) করা। ৪. বেশি বেশি ইসতেগফার করা।

রমজানে রহমত-বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের জন্য শাবান মাস থেকেই সালফে সালেহিনরা বেশি বেশি ইসতেগফার করতেন, যা মানুষকে রমজানজুড়ে আমলে উদ্যোগী করে তোলে।

পরিশেষে বলতে চাই, মুমিন মুসলমানের উচিত, শাবান মাসজুড়ে নিজেদের ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রাখা। তাই এই বিশেষ ফজিলতের মাসে প্রত্যেক মোমেনের জন্য করণীয় হলো উপরোক্ত আমলগুলোকে ফলো করা। এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগা। আপনি রমজান পাচ্ছেন কি না তা জানা নেই, তাই আপনি এই মাসকে, আজকের দিনকে আপনার জন্য সুযোগ মনে করে নিন এবং প্রস্তুতি নিন। আগামীকাল আপনি পাবেন কি না তার নিশ্চয়তা নেই। আজ থেকেই আমল শুরু করে দিন। রমজানের প্রস্তুতি নিন। আর হাদিসের ভাণ্ডার পর্যালোচনা করে পবিত্র শাবানের এসব ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে জানা যায়। সুতরাং এর বাইরে নিজেদের মনগড়া কোনো কিছু করা সম্পূর্ণ অনুচিত। আল্লাহতায়ালা আমাদের বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক আমিন।

লেখক : গবেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শাবান মাস,ফজিলত ও করণীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close