মাওলানা মাসউদুল কাদির

  ২৮ এপ্রিল, ২০২২

আজ লাইলাতুল কদর

আমলে কাটুক পুণ্যময় রজনি

আজ ২৬তম রোজা। দিন কেটে গেলেই শুরু হবে পুণ্যময় রজনি। আমলের রাত। হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এই রাতে নিজেকে রাঙিয়ে নেওয়ার, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। কী আমল করতে হবে আমাদের? কেবল জেগে থাকা নয়, পুণ্য কাজেই যেন কাটে এই রাতের প্রতিটি ক্ষণ ও মুহূর্ত।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ (কদর) রাতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদরের (মর্যাদার) রাত কী? মহিমান্বিত কদরের রাত হলো হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ (হজরত জিবরাইল) তাদের প্রভুর অনুমতি ও নির্দেশ সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন। সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে ফজর পর্যন্ত।’ (সুরা কদর)।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে (কোরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা দুখান : ১-৬)।

নবীজি হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজানের শেষ দশকে শবেকদর খুঁজতে বলেছেন। মুমিনরা শবেকদর পাওয়ার জন্য বিরতিহীন ইবাদতে থাকার জন্য মসজিদে এতেকাফ করে থাকেন। আল কোরআনের এই আয়াত প্রমাণ করে যে, কদরের রাতে ইবাদত করা কেবল হাজার মাসের ইবাদতের সমানই নয় বরং তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এই শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদার মাপকাঠি কিংবা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে আরো কত মাস কত দিনের ইবাদতের সমান তা কিন্তু আমাদের জানা নেই। মুফাসসিররা মনে করেন, আল্লাহতায়ালা ‘হাজার মাস’ বলতে দীর্ঘ সময় কিংবা অনির্দিষ্ট সময়কে বুঝিয়েছেন। এ রাতের মর্যাদা যে কত বেশি, তা বুঝাতেই হাজার মাসের কথা বলা হয়েছে। এক হাজার মাসের হিসাব করলেও কদরের এক রাতের ইবাদতের সমান ৮৩ বছর ৪ মাস। তাই আল্লাহর এই বক্তব্য প্রমাণ করে, এ রাতের মর্যাদার শেষ নেই, অসীম মর্যাদায় পরিপূর্ণ এ রাতের ইবাদত। মহান আল্লাহর অনন্য নিয়ামতে পরিপূর্ণ এ লাইলাতুল কদর। তবে এই বিশেষ রাত্রটি রমজানের কোন রাতে, তা অবশ্য অনেকটা রহস্যাবৃত। কেননা হাদিস শরিফে রাতকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। তবে ২৭ রমজানের রাত অর্থাৎ ২৬ রোজার দিবাগত রাতে শবেকদর হওয়ার ক্ষেত্রে একটা প্রসিদ্ধি আছে। আর কারণেই মূলত ২৭-এর রাতে মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের ঝোঁক বেশি থাকে।

তবে রমজানের শেষ দশকের কোনো এক রাত মর্যাদায় পরিপূর্ণ এ ব্যাপারে সবাই একমত। রাসুল (সা.)-এর হাদিসেও রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে শবেকদর তালাশ করো।’ (বোখারি ও মুসলিম)। এ হাদিসে রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর খুঁজে ইবাদত করার জন্য বলা হয়েছে। তবে রাসুলের (সা.) অন্য একটি হাদিসে রমজানের শেষ সাত রাতে এ রাত খোঁজার জন্য বলেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবীজি (সা.)-এর সাহাবিরা থেকে কয়েকজনকে রমজানের শেষ সাত রাতে স্বপ্নের মাঝে শবেকদর দেখানো হয়।’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের স্বপ্নে শেষ সাত রাতের ব্যাপারে ঐকমত্য সাধিত হয়েছে। অতএব, যে শবেকদর পেতে চায়, সে যেন এই শেষ সাত রাতের মাঝ থেকে খুঁজে নেয়।’

পৃথিবীর কয়েক কোটি মুসলমানকে তিনি ক্ষমা করে দিলে কেউ কিছুই বলতে পারবে না। পৃথিবীর জাগতিক অনেক কিছুই তো আমরা চাই না। বদলে শুধু প্রভুর ভালোবাসা চাই। হারিয়ে যেতে চাই পুণ্যের আধার লাইলাতুল কদরে।

লেখক : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক [email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লাইলাতুল কদর,শবেকদর,রমজান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close