মাওলানা মাসউদুল কাদির

  ২২ এপ্রিল, ২০২২

আজ এতেকাফে বসার দিন

মসজিদময় জীবনের আরেক নাম এতেকাফ। প্রতীকী ছবি

আজ ২০ রোজা। এতেকাফে বসার দিন। আল্লাহর মোমিন বান্দারা পবিত্র লাইলাতুল কদরকে পাওয়ার জন্য এতেকাফে বসবেন। একান্তভাবে আল্লাহকে পাওয়ার এটাই সর্বোচ্চ পদ্ধতি। আল্লাহর নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-ও এভাবে রোজার দিনে এতেকাফ করেছেন।

আমরা জানি, কোরআন নাজিলের মাস রমজান। রমজানে একটি ফরজ—এক মাস রোজা রাখা; দুটি ওয়াজিব—সদকাতুল ফিতর প্রদান করা ও ঈদের নামাজ আদায় করা; পাঁচটি সুন্নত—সাহরি খাওয়া, ইফতার করা, তারাবি পড়া, কোরআন কারিম তেলাওয়াত করা ও এতেকাফ করা। এই এতেকাফ মসজিদে পালন করতে হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, এতেকাফকারী ও রুকুণ্ডসিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ (সুরা বাকারা : ১২৫)।

আজ রাত থেকে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী সমগ্র বিশ্বে লাখো লাখো মানুষ পুরো ১০ দিন মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এতেকাফে কাটাবে। এই এতেকাফ শবেকদর লাভকে নিশ্চিত করে। আমরা জানি, মসজিদময় জীবনের আরেক নাম এতেকাফ। এতেকাফ মানে বিচ্ছিন্ন থাকা, নিঃসঙ্গ থাকা, নিবেদিত হওয়া, মসজিদে এতেকাফ বা অবস্থান করা। রমজানের শেষ ১০ দিন মুমিন দুনিয়ার সব কোলাহল থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে আল্লাহর ঘরে নিজেকে সঁপে দেয়। আত্মশুদ্ধির এক বৈচিত্র্যময় ইবাদতে নিমগ্ন হয়ে বান্দা খুঁজে ফিরে আল্লাহর সন্তুষ্টি।

কোরআনেও বান্দাকে মুত্তাকি বানানোর জন্য এতেকাফের কথা তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা মসজিদে এতেকাফরত অবস্থায় তাদের সঙ্গে সংগত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। এভাবে আল্লাহ তার নিদর্শনাবলি মানবজাতির জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা মুত্তাকি হতে পারে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৭)।

সিয়ামের মাধ্যমে যেমন বান্দাকে আল্লাহতায়ালা পরহেজগার বানাতে চান, তেমনি এতেকাফের মাধ্যমেও তাণ্ডই। লক্ষ্য একটাই বান্দাকে পবিত্র করে গড়ে তোলা। এ আয়াতে মহান আল্লাহ এতেকাফের মসজিদকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এতিকাফ অবস্থায় পানাহার বৈধ। এ ছাড়া এতেকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস জায়েজ নেই। রোজায় যেমন সূর্যোদয় থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্ত্রী সহবাস না জায়েজ। কিন্তু এতিকাফকারীর দিন-রাত সবসময়ই এটা না জায়েজ।

এতেকাফ এক আত্মনিমগ্নতার আমল। এ আমলে মানুষ নিজেকে শুধরে পারে সহজে। মসজিদের পরিবেশ ও আমলের সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষণে নিজেকে নিয়োজিত করে এতেকাফ চর্চা করে মানুষ হয়ে ওঠে সত্যিকার অর্থেই পবিত্রতম। পরিবেশে মানুষ বনে। মানুষ গঠিত হয়। মানুষ নিজেকে হারিয়ে ফেলা খেই ফিরে পায়। নিবিড় পর্যবেক্ষণে নিজেকে নির্মাণ করে। আত্মশুদ্ধিতে বলীয়ান একজন বুজুর্গের তত্ত্বাবধানে এতেকাফ করতে পারলে নিজেকে রাঙানো অনেক বেশি সহজ।

আয়াতের শেষাংশে আল্লাহতায়ালা এতেকাফের হুকুম আরোপ করে বান্দাকে মুত্তাকি বানাতে চেয়েছেন এটা স্পষ্ট। তাই রহমতের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এতেকাফ করতেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-ও মসজিদে রাসুলের সঙ্গে এতেকাফ করতেন। হজরত ইবনে ওমর থেকে বোখারি এবং মুসলিম শরিফে উল্লেখ আছে, ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

এতেকাফ হলো আমলের এক চিরন্তন অধ্যায়। একটা নির্ধারিত সময় ধারাবাহিকভাবে মসজিদে কাটিয়ে ইবাদতরত অবস্থায় আল্লাহ প্রেমের সওদা গ্রহণে এর চেয়ে আর সুন্দর পথ কী বা আছে। তাই এতেকাফের মাধ্যমে হৃদয়বান পুণ্য মানুষের আবির্ভাব ঘটবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক [email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এতেকাফ,রোজা,রমজান,মসজিদ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close