মোহাম্মদ আবু ইউসুফ
আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ, কী এবং কেন
ধরুন, আপনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহী, কিন্তু কিভাবে? এ জন্য অবশ্যই আপনাকে পিএ বা নানা প্রটোকল পেরিয়ে তার কাছে পৌঁছাতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছাতেই যদি আপনাকে এমন মাধ্যম গ্রহণ করতে হয় তাহলে আল্লাহ হচ্ছেন সৃষ্টির স্রষ্টা, বিশ্বের মহান অধিপতি, সারা জাহানের পালনকর্তা। সুতরাং তাঁর কাছে কিভাবে আপনি কোনো মাধ্যম গ্রহণ ছাড়া পৌঁছানোর চিন্তা করতে পারেন? আমাদের দেশের তথাকথিত আলেমগণ বলেন, এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আল্লাহর একজন প্রিয় পুরুষ বা ওলীর দরবারে গিয়ে তার কাছে বায়আত গ্রহণ করতে হবে। তাদের সন্তুষ্টির মাধ্যমেই আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হবো।
আরেক দল আলেম আছেন, যারা এর প্রত্যুত্তরে বলেন, মহান রাব্বুল আলামীন কোনো এমপি বা মিনিস্টার নন যে, তাঁকে পেতে কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হবে। তাদের বক্তব্য, বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক সরাসরি। এর ব্যাখ্যায় তারা পবিত্র কুরআনের নানা ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন।
কেউ কেউ বলেছেন, আমাদের এবং আল্লাহর মাঝে মাধ্যম মানা অবশ্যম্ভাবী। কারণ আমরা এ ছাড়া আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে পারব না। এ বক্তব্যের উত্তর হিসাবে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র.) নিচের বিশদ আলোচনা করেছেন। আমি চেষ্টা করেছি, বিষয়টি সহজভাবে পাঠকের সামনে উপস্থাপনের জন্য। আশা করব, পাঠকগণ ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম
স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম মানার ব্যাপারটা অত্যন্ত বিপজ্জনক বিষয়। পরিতাপের বিষয় যে, অনেক মুসলমানই এ সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো ধারণা রাখেন না। ফলে আমরা আল্লাহর সাহায্য-সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হতে চলেছি, যে সাহায্য করার কথা তিনি কুরআনে তাঁর কাছে আশ্রয় কামনা এবং তাঁর শরীয়তের অনুসরণ করার শর্তে ঘোষণা করেছেন।
মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, আর মু'মিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব। (সুরা আর রূম: ৪৭)
তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তবে তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন, এবং তোমাদের পদযুগলে স্থিতি দিবেন। (সুরা মুহাম্মাদ: ৭)
তোমরা দুর্বল হয়ো না, এবং তোমরা চিন্তা করোনা, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা ঈমানদার হও। (সুরা আলে ইমরান: ১৩৯)
সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে মাধ্যম গ্রহণের ব্যাপারে মানুষ তিনটি দলে বিভক্ত
প্রথম দল
একদল হচ্ছে তারা যারা শরীয়ত প্রণেতা হিসাবে প্রেরিত একমাত্র মাধ্যম রাসূলুল্লাহ (সা.)কেও মানতে নারাজ, বরং তারা দাবি করছে, - আর কত জঘন্যই না তাদের এ দাবি - যে, শরীয়ত শুধু সাধারণ মানুষের জন্য, উপরন্ত তারা এ শরীয়ত কে ‘ইলমে জাহের’ বা প্রকাশ্য বিদ্যা হিসাবে নামকরণ করেছে, তারা তাদের ইবাদতের ক্ষেত্রে কতক বাজে চিন্তা-ধারণা ও কুসংস্কারকে গ্রহণ করে ‘ইলমে বাতেন’ বা গোপন বিদ্যা নামে চালু করেছে, আর এর দ্বারা যা অর্জিত হয় তার নাম দিয়েছে (কাশ্ফ)। মূলত তাদের এই কাশ্ফ ইবলিসের কুমন্ত্রণা আর শয়তানি মাধ্যম ছাড়া কিছুই নয়, কারণ এটা ইসলামের সাধারণ মূলনীতির পরিপন্থী, এ ব্যাপারে তাদের দলগত স্লোগান হলো- এ কথা “আমার মন আমার রব থেকে সরাসরি বর্ণনা করেছে”।
এতে করে তারা শরীয়তের আলেমদের সাথে ঠাট্টা করছে, এবং এ বলে দোষ দিচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের বিদ্যা অর্জন করছ ধারাবাহিক ভাবে মৃতদের থেকে আর তারা তাদের বিদ্যা সরাসরি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী রব এর কাছ থেকে অর্জন করছে।
এ সমস্ত কথা দ্বারা তারা অনেক সাধারন মানুষকে আকৃষ্ট করে তাদের পথভ্রষ্ট করছে। আর শরীয়ত নিষিদ্ধ অনেক কাজ তারা এভাবে জায়েয করেছে যার বিবরণ তাদের কুসংস্কারপূর্ণ বই গুলিতে বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ফলে এ ব্যবস্থার অবসান কল্পে আলেমগণ তাদেরকে কাফের এবং ধর্ম বিচু্যতির কারণে তাদের হত্যা করার নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ তারা জানতনা বা জেনেও না জানার ভান করত যে, ইসলামের প্রথম মূলনীতি হলো- মুহাম্মাদ (সা.) এর অবতীর্ণ পদ্ধতির বাইরে কেউ আল্লাহর ইবাদাত করলে সে কাফের হিসাবে গণ্য হবে; কেননা আল্লাহ বলেন: (সুতরাং তারা যা বলছে তা নয় বরং আপনার রবের শপথ, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে তাদের মধ্যকার ঝগড়ার মাঝে বিচারক মানবেনা অতঃপর তাদের অন্তরে আপনার ফয়সালার ব্যাপারে কোন প্রকার দ্বিধা দ্বন্দ্বের অস্তিত্ব থাকবেনা, এবং পরিপুর্ণভাবে তা মেনে নিবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ঈমানদার হতে পারবেনা)। {সুরা আন্-নিসা: ৬৫}
আর এভাবেই শরীয়তের ইলমের বিরোধীতা ও তার আলোকে নির্বাপিত করার কাজ শয়তান তাদের মনে সৌন্দর্য মন্ডিত করে দেখায়। ফলে তারা নিশ্চিদ্র অন্ধকারে ঘুরতে থাকে এবং তাদের খেয়াল খুশি মোতাবেক আল্লাহর ইবাদত করতে থাকে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা তাদের যে চিত্র অংকন করেছেন তা তাদের ক্ষেত্রে সঠিক বলে প্রতিয়মান হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন : (বলুন: আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্তদের সংবাদ দেব? (তারা হলো ঐ সব লোক) যাদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা পন্ড হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে করত কত সুন্দর কাজই না তারা করছে, তারাই সে সব লোক যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ ও তার সাথে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করেছে, ফলে তাদের সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে, সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য কোন ওজন স্থাপন করবোনা)। {সুরা আল-কাহ্ফ: ১০৩-১০৫}
এ গ্রুপ শতধা বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে লেগেছে, কারণ তারা সহজ সরল পথ থেকে দূরে সরে গেছে, যে পথ ছিল আল্লাহর নেয়ামতপ্রাপ্তদের পথ, অভিশপ্ত বা পথহারাদের পথ নয়।
তাদের সমস্ত গ্রুপই জাহান্নামে যাবে, কারণ রাসূল (সা.) বলেছেন: (আমার উম্মত তিয়াত্তর ফেরকা বা গ্রুপে বিভক্ত হবে, বাহাত্তরটি জাহান্নামে আর একটি জান্নাতে যাবে - যারা আমি এবং আমার সাহাবাগণ যে পথে আছি, তার উপর থাকবে)। হাদিসটি আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, তিরমিযি সবাই আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
দ্বিতীয় দল
যারা মাধ্যম সাব্যস্ত করতে গিয়ে সীমালংঘন করেছে, আর মাধ্যমের ভুল ব্যাখ্যা করে এর উপর এমন কিছু জিনিস চাপিয়েছে, যা চাপানো কক্ষনো বৈধ নয়।
তারা রাসূল (সা.) এবং অন্যান্য নবী ও নেক্কার ব্যক্তিবর্গকে এমনভাবে মাধ্যম মানতে শুরু করেছে যে, তাদের বিশ্বাস আল্লাহ তাআলা কারো কোন আমল এদের মাধ্যম হয়ে না আসলে কবুল করবেন না। কারণ এরাই হচ্ছে তার কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম (আল্লাহ আমাদের মার্জনা করুন)। এতে করে তারা আল্লাহ তাআলাকে এমন সব অত্যাচারী বাদশাহদের বিশেষণে বিশেষিত করেছে, যারা তাদের প্রাসাদে প্রচুর দারোয়ান নিযুক্ত করে রেখেছে, যাতে কোন শক্তিশালী মাধ্যম ছাড়া তাদের কাছে পৌঁছা কক্ষনো সম্ভব হয়ে উঠে না।
অথচ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, “যখন আপনাকে আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করে তখন (বলুন) আমি নিকটে, আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার ডাকে সাড়া দেই,।সুতরাং তারা যেন আমার হুকুম মেনে নেয় এবং আমার উপরই ঈমান আনে, যাতে তারা সৎপথ প্রাপ্ত হয়।
আল্লাহ তাআলার এ বাণীর সঙ্গে পূর্ব বর্ণিত লোকদের বিশ্বাসের সংগতি কতটুকু পাঠকই তা বিবেচনা করবেন।
এ আয়াত ইঙ্গিত করছে যে, আল্লাহর কাছে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে তার উপর সঠিকভাবে ঈমান আনা এবং তার প্রর্দশিত পথে ইবাদাত করা। দৃশ্যনীয় যে, এ আয়াতে ইবাদতের কথা ঈমানের পূর্বে উল্লেখ করে নেক আমল বা সৎকাজের গুরুত্ব সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে; কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তার জান্নাত হাসিলের জন্য এটা প্রধান শর্ত।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে অসিলা শব্দের উল্লেখ করেছেন এবং তা দ্বারা পূর্ণ আনুগত্য করাকেই বুঝিয়েছেন। কারণ এটা (অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসূলের পূর্ণ আনুগত্যই) একমাত্র মাধ্যম যা তাঁর নৈকট্য দিতে পারে এবং তার রহমতের দরজা খুলতে ও জান্নাতে প্রবেশ করাতে সক্ষম। তিনি ইরশাদ করেছেন, “হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তার কাছে অসিলা (পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে নৈকট্য) অন্বেষণ কর আর তার রাস্তায় জিহাদ কর যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সুরা আল মায়িদা: ৩৫)
নেককার বান্দাদেরকে যারা অসিলা হিসাবে গ্রহণ করে এমন মূর্খ, চেতনাহীন লোকদেরকে আল্লাহ তাআলা পরিহাস করেছেন। কারণ তারা নেককার বান্দাদেরকে অসিলা বানাচ্ছে, অথচ নেককার বান্দারা নিজেরাই এই অসিলা তথা আল্লাহর আনুগত্য দ্বারা নৈকট্য হাসিলের অধিক মুখাপেক্ষী।
আর এ ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের দ্বিতীয় কোন পথ নেই, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তারা যাদের আহ্বান করছে, তারা নিজেরাই তাদের রবের নৈকট্য লাভের জন্য অসিলা খুঁজছে। তারা তার রহমতের আশা করছে, তার শাস্তির ভয় করছে, নিশ্চয়ই আপনার রবের শাস্তি অতিশয় ভয়ঙ্কর। (সুরা বনী ইসরাঈল : ৫৭)
বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, এ সমস্ত অমনোযোগী লোকেরা যাদেরকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছে তাদের সত্তার উপর ভরসা করে থাকার ফলে নেক আমল করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, খারাপ কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। যা মুসলমানদের অধঃপতনের কারণ হয়েছে। তারা ভুলে গেছে বা ভুলে থাকার ভান করছে যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলকে - যিনি সমস্ত মানব সন্তানের নেতা - তাঁকে সম্বোধন করে বলেছেন, “বলুন, আমি আমার নিজের কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখি না।” (সুরা আল আ’রাফ: ১৮৮)
অনুরুপভাবে রাসূল (সা.) তাঁর কলিজার টুকরা কন্যাকে সম্বোধন করে বলেছেন, “হে ফাতিমা ! আমার কাছে যত সম্পদ আছে তার থেকে যা ইচ্ছা হয় চেয়ে নাও, আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোন কাজে আসবনা )। (বুখারী ও মুসলিম)
তিনি আরো বলেন, “যখন কোন মানুষ মারা যায় তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, কেবল তিনটি আমল ব্যতীত...”। (মুসলিম)
যদি নবীগণ ও নেক্কার লোকদের ব্যক্তিসত্তার অসিলা গ্রহণ জায়েয না হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল না থাকত, বরং আমাদের সামনে উমর (রা.) এর সেই ঘটনাটিই শুধু থাকত, যাতে তিনি নবী (সা.) এর মৃত্যুর পর তাঁর অসিলা বাদ দিয়ে তার চাচা আব্বাসের দোয়ার শরণাপন্ন হয়েছিলেন, তবে অসিলাবাদী এ দলের মূলোৎপাটনে তাই যথেষ্ট হতো।
ইমাম আবু হানীফা (র.) কতই না সুন্দর বলেছেন, “আমি আল্লাহর কাছে আল্লাহ ব্যতীত অপর কিছুর মাধ্যমে কিছু চাওয়াকে হারাম মনে করি।" (দুররুল মুখতার ও হানাফীদের অন্যান্য কিতাবে তা ইমাম সাহেব থেকে বর্ণিত আছে। যদি ব্যক্তিসত্তা দ্বারা অসিলা দেয়া জায়েজ হতো, তবে কুরআন ও হাদীসের যাবতীয় দোয়া, যার সংখ্যা অগণিত তা ব্যক্তিসত্তার অসিলা দিয়েই আসত। ‘কিন্তু তার একটিও সেভাবে আসেনি’।
তৃতীয় দল
যারা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম বলতে বুঝেছেন সেই রিসালাতকে, যার অর্থ হলো দ্বীন প্রচার, শিক্ষাদান ও দ্বীনের প্রশিক্ষণ। তারা এই রিসালাতের উচ্চ মর্যাদা এবং এর প্রতি মানবজাতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। ফলে তারা শরয়ী বিধান লাভের উদ্দেশ্যে এবং আসমানি বাণী বা ওহীর আলোকে আলোকিত হওয়ার জন্য রাসূল (সা.)-কে বড় মাধ্যম এবং বৃহৎ অসিলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন। যেমনিভাবে তারা কুরআন অধ্যয়ন করছেন তেমনিভাবে তারা রাসূলের পবিত্র জীবনী ও তার সুন্নাত অধ্যয়ন করছেন। এতে তাদের শ্লোগান হচ্ছে আল্লাহর বাণী- “নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে নূর এবং সুস্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে, এর দ্বারা যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুগামী হয় আল্লাহ তাদের হিদায়াত দান করেন, আর তাদেরকে তাঁর ইচ্ছা মোতাবেক অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যান এবং সরল সোজা পথে পরিচালিত করেন ।” সুরা আল মায়িদা : ১৫-১৬)
এরাই হলো মুক্তি প্রাপ্ত দল, যাদের কথা পূর্বোক্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এবং তাদেরকেই জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ গ্রুপের পথ বিপদসংকুল, কণ্টকাকীর্ণ। কেননা, সত্যিকার ইসলাম আজ অপরিচিত হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ মুসলিম এ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। তারা এ দ্বীনকে বিদআত ও মনগড়া রসম রেওয়াজে পরিবর্তন করেছে।
এসব অতি পুরানো ব্যাধি, এ ব্যাপারে সংস্কারকদের ভূমিকা খুব ভয়াবহ ও কষ্টসাধ্য।
উমর বিন আব্দুল আজীজ (র.) বলেছেন, “আমরা এমন কাজ সংস্কার করতে চেষ্টা করছি, যাতে আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কোনো সাহায্যকারী নেই, যে কাজ করতে গিয়ে বৃদ্ধরা তাদের জীবন শেষ করেছে, আর ছোট ছোট ছেলেরা যুবক হতে চলেছে, বেদুঈনগণ তাদের বাস্তু ত্যাগ করে চলে গেছে। তারা এটাকে দ্বীন (ধর্ম) মনে করেছে অথচ এটা আল্লাহর কাছে দ্বীন বলে সাব্যস্ত নয়।”
অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়, কারণ রাসূল (সা.) দ্বীনের এ করুণ দৃশ্যের কথা বর্ণনা করতে যেয়ে বলেছেন (ইসলাম অপরিচিত হিসাবে শুরু হয়েছে। যেভাবে তা শুরু হয়েছিল সেভাবে আবার (অপরিচিত) অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং গরীব (এই অপরিচিত) দের জন্যই সুসংবাদ) হাদীসটি মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আন্হু)থেকে বর্ণিত।
অপর বর্ণনায় এসেছে, “হে আল্লাহর রাসূল এই গরিব (অপরিচিত) রা কারা? তিনি বললেন, বিভিন্ন গোত্র থেকে উত্থিত বিক্ষিপ্ত কতক ব্যক্তিবর্গ।” (আহমাদ, ইবনে মাজাহ)
তিরমিযির এক (হাছান) বর্ণনায় এসেছে, “এই গরীবদের জন্য সুখবর, যারা আমার সুন্নতের যে অংশ মানুষ নষ্ট করেছে তা পুনঃসংস্কার করে চালু করেছে।”
মুসনাদে আহমদের অপর এক সহীহ বর্ণনায় এসেছে, “এই গরিব (অপরিচিত) ব্যক্তিরা অনেক খারাপ লোকের মাঝে এমন কিছু ভালো লোক, যাদের অনুসারীর চেয়ে বিরোধীরাই হবে বেশি।”
সুতরাং এ গ্রুপকেই সংসকার কাজে এগিয়ে যেতে হবে, সংস্কারের আলোতে মুসলমানদের জাগিয়ে পুনরায় সঠিক ইসলামের দিকে ফিরিয়ে নিতে হবে। আর বিরোধিতা ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের আমরা তাই বলব, যা আল্লাহ তাআলা তাদের পূর্বসূরিদেরকে বলেছেন,
“আমাদের কি হলো যে, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করব না অথচ তিনি আমাদেরকে যাবতীয় পথের দিশা দিয়েছেন? আর আমরা তোমাদের শত আঘাতের বিপরীতে ধৈর্য ধারণ করবো, ভরসাকারীগণ যেন শুধু আল্লাহর উপরই ভরসা করেন।” (সুরা ইব্রাহীম : ১২)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে যাবতীয় ফিতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচিয়ে দুনিয়ার জীবনে শান্তি আখিরাতে মুক্তির পথ সুগম করে দেন। আমিন।
লেখক : সাংবাদিক