নাজমুল হাসান সাকিব

  ১২ অক্টোবর, ২০২১

শাসনে কৌশল : রাগ পুষে রাখার পরিণতি

ফাইল ছবি

পঞ্চম শ্রেণী। পুরো ক্লাসের ছেলেরা দুই ভাগ হয়ে গেছে। কথা কাটাকাটি। রাবারের গুলতি দিয়ে কাগজের টুকরা ছুঁড়াছুঁড়ি থেকে শুরু করে হাতাহাতি, মারামারি পর্যন্ত গড়ালো বিষয়টি। বিকালে ছুটির ঘণ্টার পর বাড়ি যাওয়ার পথে আরেক দফা মারামারি হলো। এমনকি এতে একজনের মাথা ফেটে রক্তও ঝরছে।

ঝগড়া শুরু হয়েছিলো গত বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ফলাফল নিয়ে। ক্লাসের ছেলেরা দুই ভাগ হয়ে পড়েছিলো। সেই থেকে রেশারেশি, রাগারাগি আর দলাদলি।

পরের দিন সবাই ভয়ে ভয়ে স্কুলে এলো। না-জানি কিছু হয়ে যায় কি না! ছাত্রদের অভিভাবকরাও এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষককে কোনো ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। কারণ, বিষয়টি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ছাত্রদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায়। আর স্কুলের পক্ষ হতে 'রহমত' স্যারকে দায়িত্ব দেয়া হলো। তিনি বিষয়টি মীমাংসা করবেন।

স্যার ক্লাসে আসলেন। সবাই তো ভয়ে থ হয়ে আছে। একটাই ভরসা 'রহমত' স্যার ছাত্রদেরকে সহজে মারেন না, কিন্তু আজ বলা যায় না। কারণ, বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক ছাত্রের মা-বাবা পর্যন্ত এসে হেড স্যারের কাছে অভিযোগ করেছেন। 'রহমত' স্যার ক্লাসে এসে প্রথমে কিছুক্ষণ চুপ-চাপ বসে ছিলেন। নিস্তব্ধ পুরো ক্লাস রুম। করো মুখে কোনো কথা নেই। ইতোমধ্যেই বলে উঠলেন, আসো আজ আমরা একটা খেলা খেলি।

একথা শুনে সবাই তো বেজায় খুশি। যাক এতক্ষণ যা ভেবেছিলাম তা বোধ হয় কাটলো। হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।

স্যার বলল, তোমরা সবাই আগামিকাল আসার সময় কিছু টমেটো নিয়ে আসবে। পরের দিন ক্লাসে স্যার বললেন, প্রত্যেকে নিজ-নিজ টমেটোগুলোর উপর কিছু নাম লিখো। যাদেরকে অপছন্দ করো শুধু তাদের নাম নামই লিখবে।

যাই হোক, সবাই নিজেদের মত করে নাম লিখে টমেটোগুলো কালো করে ফেলেছে। বললো, স্যার লিখেছি।

-এবার টমেটোগুলো প্রত্যেকে নিজ নিজ ব্যাগে রেখে দাও।

-সার! খেলবো না?

-এটাই তো খেলা।

-এবার টমেটোগুলো কী করবো?

-এগুলো এভাবেই থাকুক।

পরদিনও স্যার বললেন, টমেটোগুলো যার কাছে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকতে দাও। সবসময় সঙ্গেই রাখবে। আর বাড়িতে গেলে পকেটে রাখবে।

দুই দিন যেতে না যেতেই টমেটোগুলো পচতে শুরু করে। কারো টমেটো থেকে পঁচা দুর্গন্ধও বের হচ্ছে। আবার অনেকের কাছে একাধিক টমেটো থাকায় তারা আরো বেশি বিপদে পড়ল। এভাবে চার দিন অতিবাহিত হলো। পঞ্চম দিন স্যার জিজ্ঞাসা করলেন, এই চার দিন কেমন কাটল? ছাত্ররা তাদের নানা সমস্যার কথা বললো। ব্যাগ থেকে শুরু করে বই-খাতা সবই নষ্ট হয়েছে। টমেটোগুলো দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে, ইত্যাদি।

-স্যার বললেন, দেখো! তোমাদের ব্যাপারটাও ঠিক এমনি। তোমরা সেই গতবছরের রাগ আর ঘৃণা মনের ভেতর পুঁতে রেখেছিলে। আর সেই রেখে দেয়া রাগ আর ঘৃণা আজ পচে তোমাদের পরস্পরের মাঝে মারামারি হয়ে প্রকাশ পেয়েছে।

ঠিক যেমনটি টমেটোগুলো পচে পরিবেশ দূষিত করেছে। তেমনি তোমাদের রাগ-ঘৃণাও পুরো স্কুল আর গ্রামকে দূষিত করেছে। এই রাগ যতই ভেতরে পুঁতে রাখবে ততই পচতে থাকবে। তাই অতিদ্রুত এটিকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। যেমনটি আজ তোমরা টমেটোগুলো ঝেড়ে ফেলে দিয়েছো। তাহলেই আর মনের ভেতর দূষণ সৃষ্টি হবে না। আল্লাহ্ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: নাজমুল হাসান সাকিব, মুহাদ্দিস, রিয়াজুল জান্নাহ্ মহিলা মাদরাসা বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাগ,ঘৃণা,প্রতিহিংসা,বিদ্বেষ,মারামারি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close