কিছু মানুষ জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, বললেন মির্জা ফখরুল
আমাদের লড়াই বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা যেকোনো মূল্যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানুষের স্বাধীনতা, ভোটের স্বাধীনতা, জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবো বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আজকে ৫৩ বছর পরেও ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর মিডিয়ার ওপর আক্রমণের বিষয় নিয়ে আমাদের কথা বলতে হচ্ছে। আমি গত পরশুও বলেছি, তার আগে স্টেটমেন্ট দিয়েছি, এটাকে আমরা নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘আক্রমণের মুখ স্বাধীন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান : রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রাজনৈতিক নেতারা। অনুষ্ঠানে আয়োজন করেন সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নোয়াব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আমার অধিকার প্রয়োগ করতে চাই। ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে চাই। এই বিষয়গুলো কিন্তু অত্যন্ত জরুরি বিষয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আজকে কিছু মানুষ জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। পুরোপুরি নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে বন্ধ করা দরকার। না হলে যে লক্ষ্য নিয়ে আমাদের ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে, মানুষজন প্রাণ দিয়েছে; এর সবটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
নির্বাচিত সরকার যে কারও থেকে ভালো উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচিত সরকার যেকোনো সরকারের চেয়ে ভালো, সে যেই আসুক। কিন্তু আমি সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করবো বা ঠিক করে দেব এভাবে ভাবতে আমি রাজি নই। চর্চা হোক যেটা হয়নি গত ৫৩ বছর, সেই গণতন্ত্রের চর্চা হোক। চর্চার মধ্য দিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।
একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করা বা একটা হটকারীতার দিকে যাওয়া এই মুহূর্তে জাতির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ অন্যান্য গণমাধ্যমকে একটি গোষ্ঠী হুমকি দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। একইসঙ্গে গণমাধ্যমে কাছে বৈষম্যহীন আচরণের প্রত্যাশা করেছেন রাজনৈতিক নেতারা।
অনুষ্ঠানে নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে যখন সংবাদপত্রগুলো চাপমুক্ত পরিবেশে কাজ করার কথা তখন কোনো কোনো সংবাদপত্র ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা ও হুমকি অব্যাহত রয়েছে। বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি মহল ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে যে ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে এবং প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর চরম হুমকি ছাড়া আর কিছু না। একইসঙ্গে আমরা দেখেছি বিমানবন্দরে নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদককে পুরানো স্বৈরাচারী আমলের মতো দুই দফায় হয়রানি করা হয়েছে। ঢালাওভাবে বাতিল হয়েছে সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড।
এ কে আজাদ বলেন, এ ধরনের অগণতান্ত্রিক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হুমকি সৃষ্টিকারী তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। যে কোনো মূল্যে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আশা করি সরকার তার প্রতিশ্রুতি দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখবে—উল্লেখ করেন একে আজাদ।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাহায্য ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করে এ কে আজাদ বলেন, দেশের এই সংকটময় সময়ে আমরা আশা করছি, রাজনৈতিক দলগুলোর যার যার অবস্থান থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে অবশ্যই সংবাদপত্রের স্বাধীন নিশ্চিত করতে বলে উল্লেখ করেন জামায়াত নেতা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, যেখানে গণমাধ্যম আক্রমণ শিকার হবে সেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীন, যেটা মানুষের মৌলিক ও বাক স্বাধীনতা সঙ্গে সম্পর্কিত তার ওপর কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না। আইনি দিক থেকে সংবাদমাধ্যম সরকারি কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান না হলেও বৃহত্তরে অংশে এটা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা অভিযোগ করেন, সংবাদ মাধ্যমে তাদের নিউজকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাদের বড়-বড় সমাবেশের নিউজ পত্রিকা ছাপা হয় না। আবার হলেও অনেক ক্ষেত্রে ভেতরের পাতায় ছোট করে হয়। তাই এই ক্ষেত্রে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রতি বৈষম্যহীন আচরণ করতে করার আহ্বান জানান তারা।