মো. শহীদুল্লাহ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্ব
জেমস ম্যাকগ্রেগর বার্নস (James MacGregor Burns)। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। ‘নেতৃত্ব’ সম্পর্কে তার লেখা বইয়ের নাম ‘লিডারশিপ’। তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্ব-সংক্রান্ত তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য অথরিটি হিসেবে বিবেচিত। এ বিষয়ে তিনি বিশ্বমানের পণ্ডিত। অ্যাকাডেমিক স্তরে মান্যবর। এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দুই ধরনের নেতৃত্বের কথা বলেছেন।
তার বয়ান মোতাবেক, স্থানীয় বা জাতীয় রাজনীতিতে একদল নেতা আছেন, যারা আদান-প্রদাননির্ভর। তারা নিজের সুযোগ-সুবিধা, ক্ষমতা এবং নিজের স্বার্থ বলয়ের বাইরে কিছু ভাবতে পারেন না। তারা গদিতে বসেন, গদি হারান; কিন্তু সমাজ ও মানুষের মনে চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারেন না। মানুষ তাদের একটা সময়ের পর আর মনে রাখে না। এ ধরনের নেতাদের তিনি বলেছেন ‘Transactional Leader’, বলা যায়- এরা হচ্ছেন দপ জ্বলে ওঠে নিভে যাওয়া প্রদীপের মতো অস্থায়ী নেতা।
জেমস ম্যাকগ্রেগর বার্নসের মতে আরেক প্রকৃতির নেতা আছেন, তারা বিরল ধরনের। তারা উঁচুমাপের, অন্যরকম জননেতা। একটা জাতি বা দেশে তাদের দেখা মেলে যুগ যুগের ব্যবধানে, এমনকি শতাব্দী অন্তর। এ ধরনের চিন্তানায়ক নেতারা সমাজকে আলোর পথ দেখান। মানুষের পুরোনো জীবনদৃষ্টি বদলে দেন। ঘরে ঘরে জ্বালেন উন্নয়ন ও জীবনমুখী শিক্ষার প্রদীপ। জেমস বার্ন এ ধরনের নেতাদের বলেছেন ‘Transforming Leadership’, অর্থাৎ এ ধরনের নেতারা সমাজ, সভ্যতা পাল্টে দেন। রাষ্ট্রিক জাতি ও জনগণের গণ্ডি ছাড়িয়ে স্থান আসন গাড়ের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। তার ভাষণ, তার বক্তৃতা, তার লেখা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদে পরিণত হয় বিশ্ব পরিসরে।
জেমস বার্নের লিডারশিপ তত্ত্ব অনুযায়ী, আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সেই বিরল প্রকৃতির নেতা, যিনি বদলে দিয়েছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নিপীড়িত মানুষের মনন-সংগ্রাম ও সংস্কৃতি। ওই যে তার দ্বারা সমাজ বদল ও নতুন রাজনীতির শুরু যা পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। বাংলাদেশের জাতির পিতা। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাতে তাকে সপরিবারে হত্যা করেও স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক চক্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে বাঙালির হৃদয় থেকে মোছে ফেলতে পারেনি। এখন তার মেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার ধরনের-ই নেতা। তার নেতৃত্বের গুণ ও মান এখন বিশ্বকে নাড়া দিচ্ছে। তিনি এখন বিশ্ব পরিসরে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সুপরিচিত। তার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, উন্নয়ন, শান্তি ও মানবতার বাণী। বাংলাদেশে সম্প্রীতির সমাজ গড়া এবং অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন নীতির তিনি সুনিপুণ কারিগর। শেখ হাসিনা এমন এক পরিবর্তনকামী নেতা, যিনি কি না সুজলা-সুফলা বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন জঙ্গি ও মৌলবাদীদের হাত থেকে। বিএনপির আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে ইসলামের কট্টরপন্থি ঘরানার সালাফি-ওয়াহাবি জঙ্গিরা বাংলাদেশকে ইসলামি রাষ্ট্র বানানোর খুন-জখমের পৈশাচিক প্রেতনৃত্যে মেতেছিল, দেশের সেই দুঃসময়ে ‘আমরা সবাই তালেবান/বাংলা হলে আফগান’- এই সর্বনাশা স্লোগানধারী নালায়েক ও নচ্ছারদের রুখে দিয়েছেন তিনি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে নারী জাগরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ভাগ্যবদলের সুযোগ পৌঁছে গেছে দেশের ঘরে ঘরে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার প্রতি দেশবাসীর বিপুল সমর্থন তার প্রমাণ।
এখন আমাদের দেশে চলছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন অগ্রগতির যুগসন্ধিক্ষণ (Transitional Phase)। দেশের এই উৎক্রমণকালের কাণ্ডারি শেখ হাসিনা ছাড়া আর কি কেউ হতে পারেন? নাকি হওয়া উচিত? সহজ কথায়, তিনি ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানো নেতা। শেখ হাসিনাকে ছাড়া কি বাংলাদেশের উন্নয়ন-ইতিহাস লেখা সম্ভব? জেমস ম্যাকগ্রেগর বার্নস যাদের বলেছেন ‘Transforming Leadership’, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মান এখন সেই স্তরে উন্নীত হয়েছে। দেশে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় এক কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক এখন তিনি, যেমন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। সন্দেহ নেই শেখ মুজিব ছিলেন আরো উঁচু স্তরের, বিশ্ব মানের। বাংলাদেশ ও বিশ্ব-ইতিহাসে সোনার হরফে লেখা থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম, সঙ্গে তার স্নেহ ও গুণধন্য সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার নাম।