বিশেষ প্রতিবেদক
একান্ত সাক্ষাৎকারে বিদিশা এরশাদ
আমার ইচ্ছা আছে নির্বাচন করার

জাতীয় পার্টি (জাপা) পুনর্গঠনের চেয়ারম্যান ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদ রাজনীতি কখনোই ছাড়বেন না। তিনি রাজনীতিতে আরো সক্রিয় হয়ে উঠবেন। বিভক্ত জাতীয় পার্টিকে তিনি একত্র দেখতে চান। রাজনৈতিক সমীকরণ ঠিক থাকলে তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বারিধারার বাড়িতে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের এমন মনোভাবের কথা জানান তিনি।
তফসিল ঘোষণার বিষয়ে বিদিশা বলেন, তফসিল ঘোষণাটা জরুরি ছিল। কারণ কেউ কেউ মনে করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়তো ভয় পেয়ে যাবেন। ভয় পেয়ে ইলেকশন করবেন না। হয়তো তফসিল ঘোষণা করবেন না। তাই তফসিল ঘোষণাকে আমি স্বাগত জানাই। এটা একটা ভালো কাজ হয়েছে। আমরা দেখছি, অনেকেই ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছেন, স্বাগত জানাচ্ছেন। আজ আরো প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তফসিল ঘোষণা করাটা জরুরি ছিল, ভালো হয়েছে।
দেশের রাজনীতিতে কূটনীতিকদের তৎপরতার বিষয়ে বিদিশা বলেন, কূটনীতিকরা বাংলাদেশে এসে শুধু বসে থাকবেন পুতুল হয়ে। এটা হয় না। বাস্তবতার সঙ্গে এটা যায় না। কূটনীতিকদের সঙ্গে আমাদের একটা শক্ত বন্ধন আছে। বাই-লেটারাল সম্পর্ক আছে। আমাদের বিজনেস আছে। কাজেই অভিয়াসলি আমাদের দেশে পলিটিক্যাল আনরেস্ট অবস্থা থাকলে তাদের দেশের সঙ্গে সম্পর্ক, বিজনেস সব ডিস্টার্ব থাকে। আমি নাক গলানো বলব না, তারা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন চান। দেশের মানুষও তাই চান। সেটা যেন হয়, তার জন্য তারা মধ্যস্থতা করছেন, দূতিয়ালি করছেন।
নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপের বিষয়ে বিদিশা বলেন, ২৮ অক্টোবর যে ঘটনা ঘটানো হলো। এরপর তো আসলে সংলাপের সুযোগ থাকে না। আবার চাইলে সংলাপ হতে পারে অবশ্যই। ২৮ অক্টোবরের আগে যদি সংলাপটা হতো, তাহলে আমার মনে হয় এ দুঃখজনক ঘটনা ঘটত না, তাহলে এতগুলো মানুষ মারা যেত না। বিএনপি নেতাদের লক্ষ করে তিনি বলেন, এখন সংলাপটা তাদের ওপর নির্ভর করছে। তারা যদি মনে করে সংলাপের দরকার আছে, তো সংলাপ করবে। যদি মনে করে ইলেকশন এমনি হবে, অমনি হবে, তাহলে তাই হবে। হাত-পা ধরে কাউকে ইলেকশনে আনা যায় না।
অবরোধে সহিংসতার বিষয়ে বিদিশা বলেন, এজন্য ইলেকশনটা খুব প্রয়োজন। যত কষ্টই হোক না কেন, যত ঝামেলা-অসুবিধা হোক না কেন, আমি বলব- যদি প্রতিরোধও হয়, তার মধ্যেও এ ইলেকশনটা করে দেওয়া উচিত। সেটেল করা উচিত। ইলেকশনে সেন্ট পার্সেন্ট লোক হয়তো আসবে না। ১৮ কোটি মানুষের দেশে সবাইকে ইলেকশনে আনা যাবে না। যারা আসবে না, তাদের নিয়ে কিছু করার নেই। যারা আসবে, তাদের নিয়েই করতে হবে। আসলে অনেক পার্টি হয়ে গেছে। বিরোধী দল মানেই তো একটি বিরোধী দল নয়। বিরোধী দল তো আরো আছে। কাজেই ইলেকশনটা করে দেওয়া উচিত। ইলেকশন হওয়ার পর দেশের অবস্থা স্থিতিশীল হয়ে যাবে। নির্বাচনের পরিবেশ ভালো উল্লেখ করে বিদিশা বলেন, প্রধানমন্ত্রী সাহস করে যে তফসিল ঘোষণা করেছেন, রেডি হয়েছেন, যেমনভাবে তফসিল ঘোষণা হয়েছে, সেভাবে যেন নির্বাচনও হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বিদিশা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই পৃথিবীতে। এটার জন্য অনেকে হয়তো বলবে, আমি বায়াসড, আমি প্রো-শেখ হাসিনা। কিন্তু তা না বলে উপায় নেই। তার কারণ শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড- সারা দেশে তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখেন। সমস্যা থাকবে। ১৮ কোটি মানুষের দেশকে পরিচালনা করা কঠিন। এটা কৌতুক না। তিনি যেভাবে বলিষ্ঠভাবে দেশের অর্থনীতি ঠিক করেছেন, দেশকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে পরিচিত করেছেন, তাতে বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় চলে গেছে। সব ধরনের উন্নয়ন হয়েছে। তিনি তার মতো করে করেছেন। অতীতে এভাবে আর কেউ উন্নয়ন করেনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যদানের বিষয়ে বিদিশা বলেন, এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ঝুঁকি নিচ্ছেন। তিনি বলিষ্ঠভাবে, দৃঢ়ভাবে, ভিন্নভাবে কথা বলেন- তার তো এখন আর পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই। তার বাবা দায়িত্ব নিয়ে যে বাংলাদেশ সৃষ্টি করে দিয়ে গেছেন, সেই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার কন্যা। নির্বাচন হওয়া উচিত মন্তব্য করে বিদিশা বলেন, নির্বাচন যত কাছাকাছি আসবে, তত উৎসাহ-উৎসব বেড়ে যাবে। আগের চেয়ে ভালো নির্বাচন হবে। আগে নির্বাচনে যেমন ত্রুটি ছিল, সেগুলো সারিয়ে তোলা যাবে। ভুল থেকে সরকার শিক্ষা নেবে। এ নির্বাচনে বিদেশি অনেক চোখ থাকবে।
অনেক ডিফিকাল্টলির মধ্য দিয়ে এ ইলেকশনটা বের হয়ে আসবে। শেখ হাসিনা যদি এ ইলেকশনে জয়লাভ করেন, তবে তার ধারেকাছে অন্যরা যেতে পারবে না। আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ইচ্ছে আছে নির্বাচন করার। এখনো প্ল্যান করিনি। শুধু তফসিল ঘোষণা করা হলো, প্ল্যান করার সময় আসছে। আমি কীভাবে করব, পলিটিক্সের বিষয়টা সহজ না। আমি চাইলেই করতে পারব আর হয়ে যাবে, বিষয়টি তেমন নয়। একটা ক্যালকুলেশনের মধ্য দিয়ে আমরা ইলেকশনে যাব। এখানে জোটও আছে, আমাদের সঙ্গে আছে ৫৮ দলীয় জোট। সেই জোটের পক্ষে আমি লিড দিচ্ছি। জাতীয় পার্টির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হতে হবে। জাপা ২-৩ টুকরো হয়ে আছে। জাতীয় পার্টির সব পক্ষ সদিচ্ছা থাকলে একসঙ্গে শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্বাচনে যাবে। সময় এলে দেনদরবারও শুরু হতে পারে।
বিদিশা বলেন, আমি রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত আছি। জাপা রিফর্ম হতে পারে। আমি স্রোতের বিপরীতে কাজ করছি। তরুণদের সঙ্গে কথা বলছি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদকে নিয়ে একটি বায়োপিক নিমাণ করতে চাই। তা করা হবে আস্তে আস্তে। এরিককে তৈরি করা হচ্ছে। আমি রাত ২-৩টা পর্যন্ত কাজ করি। তিনি দলে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি টেনে বলেন, আমি ছাড় দিয়েছি- রংপুরে উপনির্বাচনে আমি ছাড় দিয়েছি। আমি বিভিন্ন বিষয়ে ছাড় দিলেও রাজনীতি ছাড়ব না। আমার এত দৌড়াদৌড়ি, তাড়াহুড়া নেই। আমি গুলশান থেকেই নির্বাচন করতে চাই। এখানে ২৭ বছর ধরে আছি। রাস্তার ফকিররাও আমাকে চিনে। অতীতে বিভিন্ন সময়, করোনার সময়ও আমি অসহায় মানুষকে সহায়তা করেছি। প্রয়াত এরশাদের সংসদীয় আসন থেকেও নির্বাচনে অংশ নিতে তার আগ্রহ আছে জানিয়ে বলেন, রংপুরের মানুষও চান আমি প্রার্থী হই। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। কিন্তু আমি কোনো কোন্দলে জড়াতে চাই না। ঝামেলা এড়াতে চাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জি এম কাদেরকে নিয়ে কথা বলতে চাই না। তিনি যেখানে সুবিধা পাবেন, সেখানে যাবেন। আমি তাদের ভালোভাবে চিনি। জাপার মেজরিটি সরকারের সঙ্গে থাকতে চায়।
পিডিএস/এমএইউ