সামনের কয়েকটা দিন অত্যন্ত ক্রুশিয়াল : সেতুমন্ত্রী
তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির অবস্থানের বিষয়ে সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সামনের কয়েকটা দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (ক্রুশিয়াল)। ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এর মধ্যে কত ফুল ফুটবে। আর শীতকাল তো এসে গেছে, কিছু ফুল ফোটার সময়ও এসে গেছে। এখন কোনও ফুল কোথায় ফুটছে...হঠাৎ জেগে উঠবে। অপেক্ষা করুন।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি না বা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট এখনও বলছেন নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, আজ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেননি আরেক প্রার্থী। কাজেই এসব প্রশ্ন করে লাভ নেই। তাদের বেলায় ঠিক আছে, আমাদের বেলায় সমস্যা? ট্রাম্প বলেছেন তিনি বাইডেনকে মানেন না। অথচ তাদের আরেকটা নির্বাচন সামনে। গণতন্ত্রের ভেতরে দোষ-ত্রুটি সব জায়গায় আছে। কেউ পারফেক্ট না।
কোনও ভয় করেন না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শঙ্কার এত পাহাড়, এত খরস্রোতা নদী পার হয়ে এলাম। এখন আবার কাকে ভয় পাবো? এত বিপৎসংকুল দরিয়া পার হলাম, তারপর আবার ভয় কিসের? কোনও ভয় করি না। প্রতিহত যারা করবে, আমরা লাগবো না, বাংলাদেশের জনগণ ও ভোটাররা তাদের প্রতিহত করবে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপের জন্য মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর চিঠি এবং সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংলাপের সময় এখন আর অবশিষ্ট নেই। গতকাল (বুধবার) এটা আমি বলেছি। মিস্টার লুয়ের চিঠি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। সেই চিঠির জবাব দুই একদিনের মধ্যে দেব। এটা একটা সৌজন্যবোধতা, শিষ্টাচারের বিষয়। তিনি একটা চিঠি দিয়েছেন, সেটার জবাব আমরা অবশ্যই দেবো। এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যেও পড়ে। চিঠি প্রসঙ্গে আমাদের কথা এটাই।
তিনি বলেন, সিইসি যে জায়গায় বসে আছে, তার বক্তব্যে এ ধরনের আহ্বান থাকাটা খুব স্বাভাবিক। সে স্পেস রাখবে কেন? স্পেস থাকলে সেখানে তাকে বলতে হবে। এমন কথা ওই পদে থাকলে আপনিও বলতেন। সেটার জন্য তো নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা স্থগিত থাকে না। সেটা হয়ে গেছে। এখন দলগুলো নিজেরা নিজেদের মধ্যে সংলাপ করবে কি করবে না, এটা তাদের ব্যাপার। উনি সিইসি হিসেবে একটা আহ্বান করার দরকার সেটা করেছেন।
আওয়ামী লীগ দলগত নাকি জোটগত নির্বাচন করবে, জাতীয় পার্টি থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সময়মতো জানতে পারবেন। এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা একেবারেই কম।
নির্বাচন সামনে রেখে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। চিঠি চালাচালি হয়েছে। কখনও ভগবান আসে, কখনো অবতার আসে, এসব অনেক শুনেছি। বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ঘামায়। আজ বিশ্ব কোথায়? কী হচ্ছে ফিলিস্তিনে? কী করতে পারলো জাতিসংঘ? কি করতে পারলো আমেরিকা? কী করতে পারলো ইউরোপ? ইউক্রেন জ্বলছে, কী করলো ইউরোপ? আর বাংলাদেশের একটা নির্বাচন নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন? আমি এসবের উত্তর দিতে রাজি না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া ষড়যন্ত্রের পথে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রক্ষমতার ইতিহাস নেই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গণতন্ত্রের মুকুটও ছিনতাই হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করা হয়। আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল না, তখন এই ২১ বছর গণতন্ত্র ছিনতাই হয়ে যায়। এই ২১ বছর আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্র চার্চা করতে দেয়নি। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছিল। তারপর খালেদাও একই কায়দায় স্বৈরাচারী গণতন্ত্র কায়েম করেছিল।
আওয়ামী লীগের ওপর বারবার হামলা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব প্রতিরোধ করেই আওয়ামী লীগ আজ এখানে এসেছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে যে কাজটা করেছেন, সেটা হলো দেশের মধ্যে গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা।
তিনি বলেন, আজকের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। একটা সময় নির্বাচন কমিশন ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে। সেটা স্বাধীনভাবে রূপ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এখন সংলাপের কথা বলে। কিন্তু সংলাপের আর সময় নেই।
কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার মাস্টারমাইন্ড বিএনপি। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিএনপির কাউকে হত্যা করেছে? আওয়ামী লীগ কোনও হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে না।
সংলাপ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা সংলাপের জন্য আহ্বান করেছিলেন। বহু দল গেলেও বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি। শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে খালেদা জিয়াকে সংলাপে আমন্ত্রণ করেছিলেন কিন্তু তিনি কি ব্যবহার করেছিলেন? আমাদের সঙ্গে এই ব্যবহার, আমাদের দোষ কোথায়, অপরাধ কোথায়?
এ দেশে গণতন্ত্রের নামে পদে পদে কলঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির অবরোধে তো আওয়ামী লীগ বাধা দেয়নি। বিএনপি তাদের নেতাকর্মীদের ডেকে এনে আগুনসন্ত্রাস করে সরকার পতন করতে চেয়েছিল। তারা সরকার পতনের নামে আগুনসন্ত্রাস করবে, ষড়যন্ত্র করবে, আওয়ামী লীগ যা ভেবেছিল, তা-ই তারা করছে। যখন শুনেছিলাম বিএনপি পুলিশকে হত্যা করেছে, বিচারপতির বাসায় হামলা করেছে, তখনই আমরা বুঝতে পেরেছি তাদের আন্দোলনের বারোটা বেজে গেছে। আগুনসন্ত্রাস করে সরকার পতন করা যায় না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বলেছিল আওয়ামী লীগ অলিগলি খুঁজে পাবে না। কিন্তু ২৮ তারিখে দেখলাম বিএনপি অলিগলি দিয়েই পালিয়ে গেলো। বিএনপিতে এখন আর নেতা নেই, আছে শুধু আবাসিক প্রতিনিধি। নেত্রীকে বলেছিলাম, তিনি বলেছেন এক জন বাইরে থাক। তাকে ধরার দরকার নেই। তাকে ধরার জন্য সরকারের জোর কোনও চেষ্টা করেনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা একা ক্ষমতায় যেতে চাই না। সবাইকে নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে যেতে চাই। আমরা চাই, সবাই ভোটে আসুক। তবে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
ওবায়দুল কাদের জানান, আগামীকাল শুক্রবার বিকাল ৩টায় তেজগাঁও কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠক হবে। এতে অংশ নেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। মনোনয়ন ফরম বিক্রয় উদ্বোধন করবেন তিনি। উদ্বোধনের পর থেকেই একই দিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সবাই কিনতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।