বদরুল আলম মজুমদার
বিএনপির বিকল্প হচ্ছে তৃণমূল বিএনপি!

বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে এসেছেন বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী দলটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী এবং দল থেকে বহিষ্কৃত ও চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার।
তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়ার দিনই সমশের মবিন চৌধুরী চেয়ারম্যান এবং তৈমুর আলম খন্দকার দলটির মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদাকে দলটির নির্বাহী চেয়ারপারসন করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপির সাবেক ডাকসাইটে দুই নেতা সমশের ও তৈমুর তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলটিকে বিএনপির বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাবেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে বারবার বলছে বিএনপি। এ অবস্থায় বিএনপির বিকল্প শক্তি হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি সেই অভাব পূরণ করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদিও বিএনপির দাবি, সরকারের মদদে গড়ে উঠা এই দলটি হালে পানি পাবে না। তাই বিএনপিও পাত্তা দিতে রাজি নয়।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তৃণমূল বিএনপির প্রথম জাতীয় কাউন্সিল হয়। কাউন্সিলে শমসের মবিন চৌধুরীকে দলটির চেয়ারপারসন ও তৈমুর আলম খন্দকারকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়েছে। এই দুই নেতা এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত য়ীলেন। একজন দল ছেড়ে চলে গেছেন। অন্যজন বহিষ্কার হয়েছেন। গত নারারণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচন করায় বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন তৈমুর। ওই সময় তিনি দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদে য়ীলেন।
দলছুট ও বহিষ্কার হওয়ার পর দীর্ঘদিন এই দুই নেতার রাজনৈতিক তৎপরতা চোখে পড়েনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তারা সক্রিয় হয়েছেন। যোগ দিয়েছেন বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত নাজমুল হুদার প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল বিএনপিতে।
কাউন্সিলে শমসের ও তৈমুরকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন অন্তরা হুদা। তিনি বলেন, আমাদের মাঝে আজ উপস্থিত আছেন আমার বাবার প্রিয়ভাজন, আমার পিতৃতুল্য প্রিয় ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী (বীর বিক্রম) এবং অপরজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে তাদের স্বাগত জানাই। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও অভিভাবকত্বে আমার বিশ্বাস আমাদের দল আরো শক্তিশালী এবং গতিশীল হবে ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির বিকল্প দল হিসেবে কি তৃণমূল বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যারিস্টার অন্তরা বলেন, ‘বিএনপিকে ভাঙার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। বিএনপি তাদের রাজনীতি করবে। আমরা আমাদের রাজনীতি করব। তৃণমূল বিএনপি একটি নতুন রাজনৈতিক দল। আমরা একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়তে চাই। এক্ষেত্রে আমরা সবার সহযোগিতা চাই। তৃণমূল বিএনপির দরজা সবার জন্য খোলা।’
নিজের যোগদানের বিষয়ে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, দেড় বছর হলো আমি বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়েয়ী। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি। আমার তো রাজনৈতিক পরিচয় দরকার। আর কথা বলার জন্য প্ল্যাটফর্মেরও প্রয়োজন। এজন্যই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েয়ী।
রাজনীতির মাঠে তৃণমূল বিএনপি কি আলাদা ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে? এ দলটি সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠলে কি বিএনপির রাজনৈতিক গুরুত্ব ও শক্তি কমে আসবে? এ দলটির রাজনৈতিক তৎপরতার নেপথ্যে কি কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে? তৃণমূল বিএনপির প্রথম কাউন্সিল অধিবেশন শেষে এমন সব প্রশ্ন গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই করে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদিও এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকদের কেউই এখনো সরাসরি মুখ খুলছেন না। তবে তৃণমূলের নেতারা বলেছেন, শুধু বিএনপি নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির অনেকেই এ দলে যোগ দেওয়ার ‘পাইপলাইনে’ রয়েছেন।
এদিকে দৃশ্যত তৃণমূল বিএনপি নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বিএনপির নেতারা। এ নিয়ে তারা কোনো কথাও বলতে চাইছেন না। তবে গুঞ্জন রয়েছে, বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময় বাদ পড়া এবং ক্ষোভণ্ডঅভিমানে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া অনেক নেতাই এ দলে যোগ দিতে পারেন। এমনকি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তারও রয়েছেন এই তালিকায়।
শোনা যাচ্ছে, বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলুও যোগ দিতে পারেন তৃণমূলে। তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু বলেন, ‘এ কথা মোটেও সত্য নয়। আমাদের প্রতিপক্ষ কেউ হয়তো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য এ ধরনের কথা ছড়াচ্ছে। কিন্তু আমাদের পরিবারের কেউ বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দলে যাবে না। আমৃত্যু আমরা এই দলেই আয়ী।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। মাঠের রাজনীতিতে ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত তিনি। লড়াই করেছেন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও। রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে তার অবদান নিয়ে বিতর্ক নেই। তার যোগদানের বিষয়েও কানাঘুষা চলছে।
বহিষ্কার করা না হলেও অনেকটা মনোকষ্টে দূরে আছেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন। এখন বিএনপিতে কোনো অবস্থান নেই মিলনের। বিএনপির সময় পরীক্ষায় নকল বন্ধ করে বেশ সুনাম কুড়িয়েয়ীলেন তিনি।
বিএনপি নতুন নিবন্ধিত দল তৃণমূল বিএনপিকে ভালো চোখে দেখছে না। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও তৃণমূল বিএনপি অংশ নেবে। তখন বিএনপিতে যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী থাকবেন তারা এ দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন। যেমনটা উপনির্বাচনে উকিল সাত্তার ভূঁইয়া করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কৃতদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। আগে স্থায়ী কমিটিতে উত্থাপন হতে হবে। তারপর সিদ্ধান্ত হবে। তবে এটাও দেখতে হবে, তারা এখন দল করতে চান কি না। তাদের আগ্রহসহ কিছু বিষয় ভাবতে হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তৃণমূল বিএনপি নামে দল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দলটি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। এর তিন দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি মারা যান নাজমুল হুদা। তার মৃত্যুর পর ১৬ মে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়ীত্ব নেন তার মেয়ে ব্যারিস্টার অন্তরা হুদা।
পিডিএস/মীর