নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে : মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই দানবীয় সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে আর কালবিলম্ব নয়, এখনই সবাইকে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে। আন্দোলনে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। একদফার যুগপৎ আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী নির্বাচনে বিরোধী দল তথা বিএনপির নেতারা যাতে অংশ নিতে না পারে, সেজন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে তড়িঘড়ি করে সাজা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মামলা ও সাজা দিয়ে এই আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে পেতে জনগণ আজ মাঠে নেমেছে সরকারের বিরুদ্ধে।
সরকার জনগণকে বোকা বানাতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজকে দ্রব্যমূল্যের এত ঊর্ধ্বগতি যে, মানুষের ঘরে চাল নেই ডাল নেই তেল নেই। কিন্তু এইদিকে সরকারের কোনো খেয়াল নেই। সরকারের খেয়াল একটাইÑ কীভাবে ক্ষমতায় যেতে হবে, এই দেশকে শোষণ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আজকে আমরা রাস্তায় নেমেছি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে। কারণ, তারা পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। প্রশাসনকে এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে যেভাবে পারো মামলা দাও ও দ্রুত সাজার ব্যবস্থা করো।
ফখরুল বলেন, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা সব এই ফ্যাসিস্ট সরকার ধ্বংস করেছে। এটা পরিষ্কারÑ এই সরকার রাষ্ট্র চালাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। তাই সরকারকে বলবÑ অবিলম্বে পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। কিন্তু তারা জানে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে তারা ১০টি আসনও পাবে না। এ কারণে তারা দলীয় সরকারের অধীনে অবৈধভাবে আবারও নির্বাচন করতে চায়।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, সরকার জুতা মেরে গরু দানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সরকার দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণ না করে গরু-ছাগল বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে। মানুষ চায় তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে পেতে, আর আমরা সেই ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন করছি।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অত্যাচার নির্যাতন করে কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। আমরা ইতিহাস থেকে সেই শিক্ষা নিয়েছি।
বর্তমান প্রশাসনের অধীনেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে দাবি করে বিএনপি এ নেতা বলেন, শুধু এ সরকার নয়, বর্তমান প্রশাসনের অধীনেও কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। অর্থাৎ প্রশাসনের সব স্তরে আওয়ামী লীগ খুঁটি গেড়ে বসেছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগ অনুগতরা প্রশাসনে রয়েছে। সুতরাং তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেব না। এ কারণেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানতে হবে।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের জনগণ যখন রুখে দাঁড়িয়েছে, কোনো শক্তি তা আটকাতে পারবে না। অচিরে এই আন্দোলন সফল হবে এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, আজ গণতন্ত্রের জন্য আবারও মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মী নয়াপল্টনে জড়ো হন। শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মঞ্চে সমাবেশের ব্যানারে লেখা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস, বাংলাদেশের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিস্ট, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, আমান উল্লাহ আমানসহ সব সিনিয়র নেতার সাজা প্রদানের প্রতিবাদে ও মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যুগপৎ ধারায় আন্দোলনের এক দফা দাবিতে’ বিক্ষোভ সমাবেশ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমাবেশে অংশ নিতে দুপুর ১টার পর থেকে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে নয়াপল্টনে জড়ো হয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন সেøাগানে সমাবেশ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলেন। এদিকে, বিএনপির সমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তোলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।
পিডিএস/এমএ