বদরুল আলম মজুমদার

  ০৩ জুন, ২০২৩

বিতর্কিত জনের তালিকা করছে বিএনপি

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা প্রধানকারী ব্যক্তিবর্গের তালিকা তৈরি করছে বিএনপি। গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করাসহ বিরোধী কর্মসূচিতে হামলাকারীদের বিশেষ তথ্য সংগ্রহে একটি সেল গঠন করা হয়েছ। এই সেলের অধীনে দুই/তিন বিভাগ ওয়ারী আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও চাপ কাজে লাগিয়ে দাবি আদায় করতে বিশেষ এই কৌশল অবলম্বন করেছে বিএনপি।

মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় থাকায় আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের ওপরও চাপ তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল করার ক্ষেত্রে পুলিশের অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তাকে মূল প্রতিবন্ধক হিসেবে গণ্য করছে বিএনপি। তাই নির্বাচন ও চূড়ান্ত আন্দোলন সামনে রেখে এসব কর্মকর্তাকে চাপে রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আদালত পাড়াসহ বিভিন্ন সেক্টরে যারা বিএনপির উপর অন্যায় দমন পীড়নের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি বা সংস্থার তালিকাও তৈরি করবে দলটি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ লক্ষ্যে দলের মামলা ও তথ্য সংগ্রহ কর্মকর্তা সাবেক ওসি সালাহউদ্দিন খানকে কন্টাক্ট পারসন করে একটি সেল গঠন করেছে বিএনপি। আর এ কাজে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি চেয়ে গত ১৮ ও ২৩ মে দেশের ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় পৃথক তিনটি চিঠি পাঠিয়েছে দলটি। এতে গুম-খুন, নিপীড়ন, গায়েবি মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের নাম এবং তাদের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, জেলা-মহানগরের নেতারা আন্দোলনে নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকারীদের ছবি, ভিডিওসহ যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করবেন। চিঠি পাওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে কেন্দ্রে পাঠাবেন তারা। এরপর জেলার এসব তথ্য-প্রমাণ সমন্বয়ে নথি ও ভিডিও ডকুমেন্ট তৈরি করবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেল, যা পরবর্তী সময়ে ঢাকাস্থ দূতাবাসের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা হবে। গত বছরের অক্টোবরে চট্টগ্রামে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘অতি উৎসাহী’ পুলিশ সদস্যদের তালিকা করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তখন তিনি বলেন, ‘পুলিশ নাকি বিএনপির নেতাকর্মীদের তালিকা করছে। অতি উৎসাহী কিছু পুলিশের সদস্য ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তালিকা আপনারা তৈরি করেন।’ দলের সাম্প্রতিক বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকেও পুলিশের অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের তালিকা করা হচ্ছে বলে বিএনপি নেতারা জানান।

জানা গেছে, গুম-খুন-সংক্রান্ত পৃথক দুটি চিঠির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলার গুম-খুন হওয়া দলীয় নেতাকর্মীদের তালিকা পাঠিয়ে পাঁচ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীদের নাম ও ঠিকানা; গুমের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ও টেলিফোন নম্বর/খুন হওয়া মামলার বাদী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়ে থাকলে তার নাম ও টেলিফোন নম্বর; মামলা হলে রুজুকারী কর্মকর্তার নাম, পরিচয় ও টেলিফোন নম্বর (যদি থাকে); মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম, পরিচয় ও টেলিফোন নম্বর (যদি থাকে); ওই সময়কার সংশ্লিষ্ট সার্কেল এএসপি/এডিসি/এসি জোন এবং এসপি/ডিসি জোনের নাম, পরিচয় এবং টেলিফোন নম্বর। অন্যদিকে গায়েবি মামলা-সংক্রান্ত চিঠিতে মামলা রুজুকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম ও পরিচয়, ওই সময়কার সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সার্কেল এএসপি/এডিসি/এসপি (মেট্রোর ক্ষেত্রে এসি-জোন) এবং এসপির (মেট্রোর ক্ষেত্রে ডিসি-জোন) নাম ও পরিচয়- এই চার ধরনের তথ্য কেন্দ্রে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে গুম-খুনের ঘটনা ঘটছে। কারা এটি করছে, কাউকে জড়িত মনে হলে জেলা-মহানগরের নেতারা তাদের তথ্য কেন্দ্রকে অবহিত করবে।’ তথ্য-উপাত্ত কেন্দ্রে পাঠানো শুরু হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিঠিটা কেবলই গিয়ে পৌঁছাল। এখনো কোনো তথ্য হাতে পাইনি। তবে শিগগিরই আসা শুরু হবে।’ তথ্য পাওয়ার পর বিএনপি সেটি নিয়ে কী করবে-এমন প্রশ্নে দলটির এই নেতা বলেন, ‘আগে আসুক, তারপর সেটি এনালাইসিস করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িতদের ভিসা দেবে না দেশটি। এই নীতির আওতায় কারা পড়বেন, তাও জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা কাজের ব্যাখ্যাও দেয় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা জানায়, এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া। মার্কিন এই ভিসা নীতির প্রেক্ষিতে বিএনপির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই পদক্ষেপে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর চাপ আরো বেড়েছে, যা আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তবে এটিই সবকিছু নয়। কারণ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, আর সে দাবি এখনো আদায় হয়নি। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতি ও চাপ কাজে লাগিয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হবে। আর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল বিএনপি।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,বিতর্কিত জনের তালিকা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close