বদরুল আলম মজুমদার
চূড়ান্ত আন্দোলনে বেশি সময় নিতে চায় না বিএনপি

কেন্দ্রীয় নেতাদের সাজা এবং দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের আটক অভিযান আগের চেয়ে বেড়েছে। ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে আটক ও মামলার ঘটনা বেশি না থাকলেও গত ১৫ দিনে তা রেকর্ড অতিক্রম করছে। সারা দেশে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের আটক করতে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে আটকের ঘটনা সবচেয়ে বেশি।
দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, ‘সক্ষম’ নেতাদের আটক করে জেলে ভরা হচ্ছে। রাজপথে আন্দোলন ঠেকাতে সরকার এর আগেও এ কাজ করেছে। এবারও এ ঘটনার ব্যতিক্রম কিছু হচ্ছে না।
অনেকে মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণার পর সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটু সংযত হয়ে কাজ করবে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি বরং কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ ও ঢাকা সিটি উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানকে যথাক্রমে ৯ ও ১৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আরো বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার মামলার রায়ও ঘোষণার অপেক্ষায় আছে। এ অবস্থায় চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে আর সময়ক্ষেপণ করতে চায় না বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে বলেন, আগামীতে আবারও সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন যাতে না হতে পারে সেজন্য সরকার বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাজা দিচ্ছে। তারা একতরফা, কারচুপির নির্বাচনের পথে হাঁটছে। বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থার জাঁতাকলে পড়েছে, ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সাড়ে ১৩০০ মামলা নিয়ে সরকার মাঠে নেমেছে, যাতে আগামী নির্বাচনের আগে মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে বিএনপি নেতাদের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠনো যায় এবং নির্বাচনে তারা প্রতিপক্ষ ছাড়া খালি মাঠে গোল দিতে পারে। বিএনপি সূত্র বলছে, ঈদের পর বিএনপি তাদের চলমান যুগপৎ আন্দোলনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ঢাকার রাজপথে কর্মসূচি বাড়ানো হয়েছে। সামনে আরো বাড়ানো হবে। আন্দোলন সব ঢাকামুখী করা হবে। তৃণমূল থেকে ঢাকা অভিমুখী কর্মসূচি দেওয়া হবে। সমাবেশ কিংবা মানববন্ধনের বদলে দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি কিংবা ঘেরাওয়ের ডাক আসতে পারে। কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার দিনক্ষণ নিয়ে বিএনপি বরাবরই দ্বিধাধন্দ্বে আছে। কিন্তু দলের তৃণমূল নেতারা সরকারকে আর সময় দিতে চান না। এ অবস্থায় আগে অবস্থান পরিবর্তন করে শিগগিরই এক দফা দাবিতে মাঠে নামছে বিএনপি। আগামী জুলাই মাসের শুরু থেকেই শুরু হতে পারে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন। সেই ঘোষণার জন্য বিভিন্ন রূপরেখা চূড়ান্তের কাজ চলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এ প্রতিবেদকে বলেন, আমাদের সময় কম। অক্টোবরের দিকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হবে এসব মাথায় রেখেই আমরা কর্মপরিকল্পনা করছি। মাসখানেক পর ঈদ। পরে আগস্ট মাস। সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি। তিনি বলেন, দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা আসবে সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে। তখন হয়তো কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হবে। কারণ আন্দোলনের চাহিদা বেড়ে যাবে। সরকার দাবি না মানলে বাধ্য হয়েই নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন করতে হবে। আর আগে থেকে আন্দোলনের কৌশল বলে দিলে দমন করতে সরকারের সুবিধা হয়।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ মনে করেন, এবার বিএনপির আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি একেবারে ভিন্ন। তারা সঠিক প্রক্রিয়াতেই আছেন। এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো উসকানিতে পা দেননি। সরকারের পাতানো খেলায় অংশ না নেওয়াই তাদের বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান কিংবা সরকারের পতন কখনো বলেকয়ে আসে না। সময় নির্ধারণ করে বর্তমানে আন্দোলন হয় না। বর্তমানে সবকিছু পরিবর্তনশীল। আর সরকারও অনেক চতুর। তাই সর্বাত্মক প্রস্তুতি থাকলে পতন আন্দোলন বেশি সময় লাগবে না।
বিএনপি এখন তাদের সাংগঠনিক জেলাগুলোয় সমাবেশ শেষ করেছে। সমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হামলা, মামলা বেড়েছে। এসব চাপ বিএনপিকে ভোগাচ্ছে, এ বিষয়ে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সরকারের দমনপীড়নের মাত্রা আরো বাড়বে। কিন্তু বিএনপি রাজপথ ছাড়বে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পিছু হটার সময় নেই। গেল বছর বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে বিএনপি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। এরপর যুগপৎ আন্দোলন শুরু করলেও সেভাবে আর মাঠে আন্দোলনের পূর্ণতা পায়নি।
সর্বশেষ এককভাবে দেশজুড়ে সমাবেশ শেষ করেছে গত ২৭ মে। এখন দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করছে। তবে এবারে জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি নিয়ে কিছুটা নাখোশ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এই সরকারকে বাধ্য করতে হলে মাঠের আন্দোলন আরো জোরালো করতে হবে। এসব হাজারো সমাবেশ কিংবা অনশন দিয়ে কোনো কাজ হবে না। সরকারকে সরাতে হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট, ঘেরাওয়ের কোনো বিকল্প নেই। মাঠ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সরকার পতনে বড় আন্দোলনের জন্য তারা প্রস্তুত আছেন। এখন আর ছোট ছোট সমাবেশ কিংবা মানববন্ধনে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। তাদের প্রত্যাশা কেন্দ্র থেকে দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, আর আমরা সময়ক্ষেপণ করতে চাই না। এক দফার আন্দোলন চাই। আমার মনে হচ্ছে বিএনপি এবার তার নিজস্ব শক্তি নিয়ে আন্দোলন করবে। আশা করি, কেন্দ্র খুব দ্রুতই একটি চূড়ান্ত আন্দোলনের রোডম্যাপ দেবে।
পিডিএসও/এমএ