বদরুল আলম মজুমদার
রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপির ৩১ দফা
১০ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে থাকা বিএনপি এখন এক দফায় মনোযোগ দিতে চায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতি, সরকারের দমন পীড়ন বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এখন আর সময় নিতে চায় না দলটি। এদিকে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফায় আরো ৪টি নতুন দফা যুক্ত করে ৩১টি দফার খসড়া অনুমোদন করেছে স্থায়ী কমিটি। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে ৩১ দফার এই যৌথ ষোষণা প্রকাশ হবে সহসাই। তবে এক দফা দাবিতে যাওয়ার আগে বিএনপি ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিভাগীয় শহরে দলের তরুণ নেতাদের নিয়ে সমাবেশ করতে চায়। এজন্য যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে সিরিজ বৈঠক করছে হাইকমান্ড।
জানা গেছে, আন্দোলনে থাকা দলগুলো নিয়ে এক দফা আন্দোলনে নামার আগে যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত হবে। এজন্য রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফাকে ৩১ দফায় উন্নীত করে যৌথ ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এরই মধ্যে এই খসড়া দেওয়া হয়েছে সমমনা রাজনৈতিক জোট ও দলের হাতে। খসড়ায় কারো কোনো আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে তা দু-এক দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর সবার মতামত এক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত হবে।
এদিকে আন্দোলনের মূলশক্তিÑ ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা পরখ করতে ‘তরুণ সমাবেশ’ করার চিন্তা করছে বিএনপি। প্রথমে চট্টগ্রাম এবং পরে ঢাকায় এ সমাবেশ হবে। গত ঈদুল ফিতরের কারণে ১৫ দিনের মতো রাজপথে জোরালো কোনো কর্মসূচি ছিল না বিএনপির। তারপরও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ও জামিন বাতিলের ঘটনা বেড়ে যায়। এ অবস্থায় করণীয় নিয়ে দলের কমিটির নেতারা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৩ মে ঢাকায় জনসমাবেশ করে বিএনপি। ওই সমাবেশ থেকে চার পর্বে ৮২ সাংগঠনিক জেলায় জনসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরীতে পদযাত্রা কর্মসূচিও দেওয়া হয়। ১৫ দিনব্যাপী ওই কর্মসূচি শনিবার শেষ হয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এ কর্মসূচি এক দফায় নামার প্রস্তুতির অংশ। তাদের মূল্যায়ন হলো এবারের কর্মসূচিতে আন্দোলনের গতি বেড়েছে। সভা-সমাবেশে জমায়েতও ছিল ভালো। এর মধ্যে গত ২৪ মে রাতে মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর নেতাকর্মীরা আন্দোলনের মাঠে নতুনভাবে উদ্দীপনা পেয়েছেন। মাঠের এই চিত্র এক দফার আন্দোলন সফল করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন নেতারা।
দলটির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এক দফার আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে রূপ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সমমনাদের মতামতের ভিত্তিতে সোমবার (২৯ মে) স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত করা হতে পারে। এরপর যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো এক মঞ্চ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার যৌথ ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি এক দফার ভিত্তিতে নতুন কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এক দফা আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এ সরকার একটি প্রতারক সরকার। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে নির্বাচন বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা রাখেনি। ফলে তাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। খুব দ্রুতই আমরা এক দফা আন্দোলনে নামব। এজন্য দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা কাজ করছি।
এদিকে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে যৌথ ঘোষণার ৩১ দফার একটি খসড়া রূপরেখা প্রণয়ন করেছে বিএনপি। দলের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখার সঙ্গে নতুন আরো চারটি দফা সংযুক্ত করে যৌথ ঘোষণাপত্রের এই খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
জানা গেছে, গণতন্ত্র মঞ্চের প্রস্তাবিত ৩৫ দফা ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের ১৩ দফার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রস্তুতকৃত এই খসড়া রূপরেখা নিয়ে এরই মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। সেখানে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এটি চূড়ান্ত করার কথা বলা হয়েছে।
গত শুক্রবার গুলশান কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠকে রূপরেখার একটি খসড়া হস্তান্তর করে বিএনপি। গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্য শরিকদের সঙ্গেও এ সপ্তাহে রূপরেখার খসড়া নিয়ে বৈঠক করবে দলটি। ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার এ বিষয়ে বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করি, শিগগিরই যৌথ ঘোষণাপত্র আসবে।
জানা গেছে, বিএনপি ৩১ দফার খসড়ায় কয়েকটি বিষয় আরো স্পষ্ট করেছে। ২৭ দফার একটি দফায় বলা হয়েছে, পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। আর প্রস্তাবিত ৩১ দফায় বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পরপর দুই টার্ম দায়িত্ব পালন করার পর তিনি আর কখনোই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। অন্যদিকে ২৭ দফা রূপরেখার ১৮ দফায় বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সব কালো আইন বাতিল করা হবে। খসড়ার ৩১ দফায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকারহরণকারী সব কালো আইন বাতিল করা হবে; যা দলটির গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ১০ দফায় বলা হয়েছে।
পিডিএসও/এমএ