বদরুল আলম মজুমদার

  ২২ মে, ২০২৩

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হতে পারে বিএনপির ভোট

ছবি : সংগৃহীত

গাজীপুর সিটি নির্বাচন এরই মধ্যে বেশ জমে উঠেছে। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচনে বিএনপি না থাকলেও আওয়ামী লীগের নিজ দলের নেতাকর্মীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জমে উঠেছে মেয়র পদের নির্বাচন। এ অবস্থায় বিএনপি না থাকলেও নৌকার বিপরীতে নির্বাচন করছেন দলটির সাবেক পরিচিত নেতা এবং মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। আর নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আজমত উল্লা।

মেয়র পদে আরো বেশ কয়েকজন প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনা এখন আজমত উল্লা ও জাহাঙ্গীরের মা জায়েদাকে নিয়ে। ভোটের এমন পরিসংখ্যানের মাঝখানে বিএনপির ভোটব্যাংক হয়ে উঠতে পারে জয়-পরাজয়ের মূল ফ্যাক্টর। গাজীপুরের স্থানীয় নেতাদের অনেকে মনে করছেন, বিএনপির ভোট যিনি পাবেন, তিনি হতে পারেন আগামীর নগর পিতা। এমন বাস্তবতায় বিএনপির ভোট কোন বাক্সে পড়ে তা নিয়ে চলছে জল্পনা। তাই ভোটে বিএনপি না থাকলেও ঘুরেফিরে আসছে বিএনপির ভোটের হিসাব।

জানা গেছে, গাজীপুর সিটি ভোটে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩০ জন প্রার্থী। দলের পক্ষ থেকে এসব প্রার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হলেও মাঠপর্যায়ে এসব নেতা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাই তাদের পক্ষে ভোট টানতে বিএনপির ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন বলে মনে করছেন ভোট সংশ্লিষ্টরা। আর বিএনপির সিংহভাগ ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রয়োগ করলে কে পাবেন- বিএনপির এমন আলোচনা চলছে গাজীপুরজুড়ে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, কেন্দ্রে গেলে ভোটাররা অবশ্যই নৌকার বিপক্ষের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহীর কমিটির সদস্য এবং গত সিটি ভোটের মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার এই প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি যেহেতু এবার নির্বাচন করছে না, তাই তারা কাকে ভোট দিতে পারে সেটা আমি বলতে পারব না। তবে যেহেতু স্থানীয় নির্বাচন, তাই তাদের পছন্দের কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারেন। আমরা মনে করি এই সরকার ভালো ভোট করবে না। নির্বাচন কমিশনও শক্ত অবস্থানে থাকবে না। তাই ভোট হবে আগের মতো। নৌকা জেতানোর জন্য যা করা লাগে তা-ই করতে পারে কমিশন এমনটা মনে করে গাজীপুরবাসী।

স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরকে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ বলা হলেও ভোটের হিসাবে বিএনপিকে দূরে ঠেলে দেওয়ার সাহস দেখাবে না কোনো প্রার্থী। ১৯৯১, ২০০১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৩ সালের গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি তাদের ভোটের হিসাব দিয়ে রেখেছে। এখন নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও তাদের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটার যেদিকে ভোট দেবে, জয়ের পাল্লা সেদিকেই ভারী হবে।

বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গাজীপুর সিটিতে কাউন্সিলর পদে বিএনপির অন্তত ৩০ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন। সেক্ষেত্রে তারা কখনোই নৌকায় ভোট দেবেন না।

ওই নেতারা আরও বলেন, গাজীপুরকে নৌকার ঘাঁটি মনে করা হয়। আসলে প্রকৃত হিসাব করলে গাজীপুর বিএনপির ঘাঁটি। কারণ ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ (সদর-টঙ্গী) আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান দেশের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তিনি ধর্মপ্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে অধ্যাপক এম এ মান্নান ধানের শীষ প্রতীকে লক্ষাধিক ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করেন। ১৯৯১ থেকে ২০১৩ সাল, ২২ বছর পর বিএনপি আবার গাজীপুরে তাদের জনসমর্থন ও ভোটের মাঠে শক্তি প্রকাশ করেছিল। সে হিসাবে গাজীপুরে যে কোনো নির্বাচনে বিএনপিকে হিসাবে রাখতে হবে।

এদিকে সিটি নির্বাচনে বিএনপির এ বিশাল ভোট নিজেদের বাক্সে নিতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়রপ্রার্থীরা। তাদের মধ্যে তিন প্রার্থী উল্লেখযোগ্য। তারা হলেন- সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি পরিবারের সদস্য সরকার শাহনুর ইসলাম রনি।

স্থানীয়রা জানান, জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থাতেও বিএনপির সঙ্গে বিরোধে জড়াননি। এছাড়া তিনি মেয়র থাকা অবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। সে হিসাবে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা যদি কেন্দ্রে ভোট দিতে যায় তবে তাদের অনেকেই জাহাঙ্গীর আলমের মাকে ভোট দেবেন।

এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী জায়েদা খাতুনের ছেলে ও সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোটের মালিক জনগণ। এ নগরকে পরিকল্পিত করে গড়ে তুলতে কাকে প্রয়োজন তা নগরবাসীই ভালো জানেন। আমার মা প্রার্থী হিসেবে সবার কাছেই ভোট চাইতে পারেন।

তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন জানান, সচিব থাকা অবস্থায় গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। অনেককে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দিয়েছি। বিএনপির সব পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই বিএনপির ভোট লাঙ্গলের বাক্সেই আসবে বলে আশা করছি।

অপর প্রার্থী কারাবন্দি বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বলেন, বাবা ছিলেন বিএনপির নেতা। এছাড়া সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকার আমার আপন জ্যাঠা (বড় চাচা)। পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। তাই নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভোট আমি প্রত্যাশা করি। আশা করি তারা আমাকে ভোট দেবেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ৮, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৭৮ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ৫৭ ওয়ার্ডে ৪৮০ ভোটকেন্দ্রে তিন হাজার ৪৯৭টি ভোটকক্ষ থাকবে। মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬, তাদের মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গাজীপুর সিটি নির্বাচন,জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর,বিএনপির ভোট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close