বদরুল আলম মজুমদার

  ২১ মে, ২০২৩

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন 

কাউন্সিলর পদে বিএনপির প্রার্থী, কাজে আসছে না দলীয় শাস্তি

ছবি : সংগৃহীত

বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো ভোটে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে চলমান পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছে দলটির বড় নেতারা। বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও স্থানীয় প্রভাবশালী এবং পরিচিত বিএনপি নেতারা সিটির ভোটে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে এসব কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটে অংশ নেওয়ায় দল থেকে আজীবন বহিষ্কার হয়েছেন। অন্য সিটির কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও ভোটে না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে দলীয় কোনো নির্দেশনাই কাজে আসছে না। গাজীপুরে বিএনপির ৩০ জন স্থানীয় নেতা ভোটে অংশ নিচ্ছেন। অন্য চার সিটিতে আরো এ ধরনের ৬৬ নেতা ভোটের লড়াই অব্যাহত রেখেছেন। দলীয় শাস্তির ভয়কে তারা তোয়াক্কা করছে না।

পাঁচ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে দলের পদধারী নেতাদের তোড়জোড় না থাকলেও কাউন্সিলর পদে অনেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। দলীয় ফোরামে তাদের সঙ্গে আলোচনা ও চিঠি দেওয়ার পরও নির্বাচন থেকে তাদের সরানো যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। এরপরও যখন তারা থামেননি, তখন তারা দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন, এই ব্যবস্থা অন্যদের জন্য একটি বার্তা।

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ৩০ নেতা মনোনয়নপত্র তোলেন। দল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পর তাদের মধ্যে মাত্র একজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। বাকি ২৯ জনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার হওয়া নেতাদের একজন গাজীপুর মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ফয়সাল সরকার বলেন, দল যেটি ভালো মনে করেছে, সেটিই করেছে।

গাজীপুরে বহিষ্কৃত হওয়া নেতাদের মধ্যে ৫ জন বলেছেন, গাজীপুরের আরো বেশ কয়েকটি নির্বাচনে বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সিটি নির্বাচনে যেটি হয়েছে, তা অন্য নেতাদের উসকানিতে হয়েছে। এই নেতাদের দাবি, এই বহিষ্কার দলের জন্য ভালো হয়নি। কাউন্সিলর পদে জয় লাভ করলে দলেরই লাভ হতো।

জানা গেছে, বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে অনেক প্রার্থী আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কাউন্সিলর পদে কোনো প্রার্থী না দেওয়ায় বিএনপির প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার মেয়র পদে ভোট বাড়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভেতর ভেতর সহযোগিতা করছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এরকমই একটি ঘটনা দেখা গেছে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায়। টঙ্গীর মিলগেট এলাকার ৫৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাশেমের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেই বক্তব্যে তাকে বলতে শোনা যায় ‘জনসভা করে আমার নেতাকর্মীদের নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। এর ফলে তারা নৌকার গণমিছিলে যোগদান করেছে। আজমত উল্লা খানের পক্ষে যোগদানসহ নৌকার পক্ষে সমর্থন করেছি। সবাইকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপি একসঙ্গে ছিল। তখন আহ্সান উল্লাহ্ মাস্টার আমাকে আদর করতেন। তাকে আমি সমর্থন করতাম। দল এক জিনিস, ব্যক্তিগত সম্পর্ক আরেক জিনিস। কেউ আওয়ামী লীগ করবে, কেউ বিএনপি করবে। এর অর্থ এটা নয়, আওয়ামী লীগ-বিএনপি কারও সঙ্গে শত্রুতা করব। বিশেষ করে আমার ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে যারা বিএনপি করছে, তাদের কাছে আহ্বান আপনারা যদি আমাকে পেতে চান, তাহলে আগে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। নৌকায় ভোট দেওয়ার পর আমাকে ভোট দেবেন। বিএনপির উপযুক্ত প্রার্থী না থাকায় আমরা নৌকায় ভোট দেব।’ ভাইরাল হওয়া এই বক্তব্যদাতা হলেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য। তিনি ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও কাউন্সিলর প্রার্থী।

এদিকে প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধিরা জানায়, বরিশালের অন্তত ২৪টি ওয়ার্ডে বিএনপির বর্তমান এবং সাবেক ২৫ নেতা কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন আছেন বর্তমান মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। কাউন্সিলর পদে প্রার্থী না হতে সিলেটের ৩২ নেতাকে মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অবশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডে টানা চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তিনি সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।

বিএনপির সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান বলেন, বিএনপির যারা নির্বাচনে তৎপর ছিলেন, তাদের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ সিলেট সিটি নির্বাচনে অংশ নেন, তাহলে দলের স্থায়ী কমিটি পরবর্তী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। সময়ই বলবে, কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুলনায় কাউন্সিলর পদে দলটির পদধারী মাত্র দুজন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা নিয়ে তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। ফলে সিটি নির্বাচন নিয়ে অনেকটা স্বস্তিতে আছে খুলনা বিএনপি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে খুলনা সিটিতে কাউন্সিলর পদে ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতে আওয়ামী লীগ ও ৯টিতে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করেন। বাকি ১০টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং নির্দলীয় প্রার্থী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এছাড়া ১০ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের মধ্যে বিএনপির ছিলেন ১ জন। বিএনপির এই ১০ কাউন্সিলরের মধ্য ৬ জন আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এবারও তারা সবাই নির্বাচনী মাঠে আছেন, তবে বিএনপির পরিচয়ে নয়।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কাউন্সিলর,বিএনপির প্রার্থী,দলীয় শাস্তি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close