আশিকুর রহমান শুভ

  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান

‘কোনো অন্যায়কারীর স্থান ছাত্রলীগে হবে না’

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠির সন্তান ইনান ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। পরবর্তী সময়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস স্টাডিজে এমবিএ করছেন। ২০১৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সদ্য বিদায় নেওয়া কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনে ইনানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। সাংগঠনিক নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রতিদিনের সংবাদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আশিকুর রহমান শুভ

প্রতিদিনের সংবাদ : আপনি দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন। এই মুহূর্তে ছাত্রলীগের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : আমি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে মিটিং মিছিলে যুক্ত আছি গত ১৬ বছর ৪ মাস ধরে। মনে পড়ে যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন প্রথম আমি ছাত্রলীগের মিছিল করেছি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একটি চ্যালেঞ্জই দেখি, সেটি হচ্ছে—জাতির পিতার আদর্শকে সমুন্নত রেখে বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথে ছুটে চলা। ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের কর্মী হওয়ার যে গৌরব অর্জন করেছি, তা বজায় রেখে আমি যথাযথভাবে পথ চলতে পারি—এটাই আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি।

প্রতিদিনের সংবাদ : স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ ঠিক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগের কী ভূমিকা থাকবে?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ হলো স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সিটিজেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ স্মার্ট সিটিজেন গড়ার ক্ষেত্রে কাজ করে যাবে। দেখুন, আজকে যারা ছাত্র তারাই দেশের স্মার্ট সিটিজেন হবেন। এই শিক্ষার্থীদের স্মার্ট সিটিজেন হিসেবে গড়ে তুলতে ছাত্রলীগ কাজ করে যাবে।

প্রতিদিনের সংবাদ : সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই কঠিন সময়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন। এই চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করবেন কীভাবে?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সৃষ্টিই হয়েছে চ্যালেঞ্জ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। সূচনা থেকে অদ্যাবধি ছাত্রলীগের সব অর্জনই আকাশসম প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে। ছাত্রলীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ বিজয়ের পথে শিক্ষার্থী ও তরুণসমাজকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এবং একই আওয়াজ তুলে ছাত্রলীগ নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করবে।

প্রতিদিনের সংবাদ : ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, কমিটি-বাণিজ্য, যৌন হয়রানি ও শিক্ষার্থী নির্যাতন- এরকম নেতিবাচক সংবাদ গণমাধ্যমে দেখা যায়। এ বিষয়টিতে কী বলবেন?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : ছাত্রলীগ এই উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম একান্নবর্তী পরিবার। এত বড় পরিবারে প্রায় অর্ধ কোটি সদস্যের যে মেলবন্ধন, সেখানে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ে যায় অনেক সময়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ একটি সিদ্ধান্তে উপনীত যে, কোনো অপরাধী ও অন্যায়কারীর স্থান এ সংগঠনে হবে না। এ ধররের কিছু নজরে আসামাত্রই আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। এ ব্যাপারে নেতাকর্মীদের আরো সচেতন করে তোলার চেষ্টা করা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ : দেখা গেছে যে, এসব অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আগামীতেও কি তা-ই হবে?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : আপনার সঙ্গে একমত নই। অতীতেও বিভিন্ন সময় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সামনের দিনেও এই সংগঠনের সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ : ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন তথা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন যেমন ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদকে ক্যাম্পাসে সমাবেশ করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আপনার সংগঠনের বিরুদ্ধে আছে। তাহলে কি ছাত্রলীগ সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির চর্চা চায় না?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী। এই সংগঠন শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পক্ষে সব ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে একটি সুষ্ঠু সর্বজনীন, উপযোগী-কার্যকর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলায় বিশ্বাস করে। এক্ষেত্রে আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যাদের মূল আদর্শ বাংলাদেশের স্বাধীনতার চরম বিরোধিতা করা ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পদায়ন করা- অবশ্যই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এমন কোনো অপশক্তির সঙ্গে কোনো রকম সমঝোতায় আসতে বিশ্বাসী নয়। যারা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতে চায়, যারা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে কালিকলমের তুলির আঁচড়ের বিপরীতে রক্তের হোলি খেলতে চায়, তাদেরকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতীতেও শিক্ষার্থীদের পাশে নিয়ে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করেছে, সামনের দিনেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এই অপশক্তির অপতৎপরতা রুখে দাঁড়াবে।

প্রতিদিনের সংবাদ : হলের গেস্টরুমে প্রায়ই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের কর্মীরা নানা কারণে নির্যাতন করে- এরকম অভিযোগ শোনা যায়। গেস্টরুম কালচার বন্ধে ব্যাপক সমালোচনা থাকলেও ছাত্রলীগ কেন তা এখনো বন্ধ করছে না?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গেস্টরুম নামক কালচারে আসলে বিশ্বাসী নয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের কর্মীদের নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা-কর্মিসভা করে থাকে। আমরা সপ্তাহিক আড্ডা দিয়ে থাকি, নিয়মিত আড্ডা দিয়ে থাকি। আমরা চা-চক্র করে থাকি, পাঠচক্র করে থাকি। এ বিষয় নিয়ে কেউ যদি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে তাহলে সেটা নিতান্তই উদ্দেশ্যমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলক।

প্রতিদিনের সংবাদ : ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। সেখানে ২৫টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই ছাত্রলীগ বিজয়ী হয়েছিল। এবারের নতুন নেতৃত্ব কি ডাকসু নির্বাচন চায়?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময়ই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে থাকে। ছাত্রলীগ এদেশের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠন। বিগত ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কোনো কর্তৃপক্ষ নয় যে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে। আমরা মনে করি, এটা একান্তই কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তবে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে আমরা সবসময় সোচ্চার।

প্রতিদিনের সংবাদ : আজকাল ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক ভাবমূর্তির কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরা চান না, তাদের সন্তানরা ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হোক। বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি তথা রাজনীতিতে সকল নেতিবাচক কর্মকাণ্ড শুরু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতের পর থেকে। তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রেও নেতিবাচক ধারণা বিরাজ করেছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের হাত থেকে অস্ত্র সরিয়ে নিয়ে কলম ও খাতা তুলে দিয়েছেন। এরপর থেকেই ছাত্ররাজনীতি এদেশের পূর্ব ইতিহাস সুনামের ধারায় ফিরে আসতে শুরু করে এবং এই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনা নিয়ে অনেক ইতিবাচক কর্মকাণ্ড অতীতেও করেছে, এখনো করছে, ভবিষ্যতেও করবে। আমরা বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ধারার সঠিক প্রবাহ রাখার জন্য এটি করে যাব।

প্রতিদিনের সংবাদ : আপনারা সবসময় নারী নেতৃত্বের কথা বলে থাকেন। তাহলে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে কেন নারীরা আসতে পারছে না?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : শীর্ষ নেতৃত্ব বলতে কি সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককেই মনে করা হয়! এমনটা আমি একবিন্দুও মনে করি না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীই শীর্ষ নেতা বরং আমি ও আমার সভাপতি দুজন এই সংগঠনের শীর্ষ কর্মী বলে নিজেদের মনে করি। তবে এই সংগঠনের শীর্ষ কর্মী হিসেবে আমরা জানাতে চাই, আমাদের বোনেরা আমাদের শক্তি, আমাদের বোনেরা এই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নারী কর্মীরাই আগামী বাংলাদেশের প্ল্যানেট ৫০-৫০ বাস্তবায়ন করবে। তারা নারী-পুরুষের সমঅধিকারের বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করবে। তারা একটি সুন্দর বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনায়।

প্রতিদিনের সংবাদ : প্রতিদিনের সংবাদের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : আপনাকেও ধন্যবাদ।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান,ছাত্রলীগ,প্রতিদিনের সংবাদ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close