জিয়াউদ্দিন রাজু

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০২২

ছাত্রলীগের সম্মেলন : বয়সই বাধা সিনিয়রদের

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। এ উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শেষ মুহূর্তে এসে পরবর্তী নেতৃত্ব ও গঠনতন্ত্রে বেঁধে দেওয়া বয়সসীমা নিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন মহলে চলছে জোর আলোচনা। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদের জন্য তিন শতাধিক আবেদন জমা পড়লেও যোগ্যতা বিবেচনায় মূল নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড, যোগ্যতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। এদিকে দলীয় সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে, সম্মেলনস্থলে কমিটি ঘোষণা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য মতে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রায় বছরখানেক বাকি। ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের মাধ্যমে যারা নেতৃত্বে আসবেন তারাই জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে মাঠে কাজ করবেন। তারাই দলের পক্ষে ষড়যন্ত্র, গুজব, বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা করবেন। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষিত যোগ্য নেতাকেই নেতৃত্বে আনবেন ছাত্রলীগের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এরই মধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যমে প্রার্থীদের বিস্তারিত ফিরিস্তি সংগ্রহ করেছেন।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবশেষ ২০১৮ সালে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনে বয়স বাড়িয়ে ২৮ বছর করা হয়েছিল। দুই বছরমেয়াদি কমিটি হলেও নানা কারণে বর্তমান কমিটির মেয়াদ চলছে প্রায় ৪ বছর। মাঝে সম্মেলন না হওয়ার ফলে যারা হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন তাদের অনেকের গঠনতন্ত্রের বেঁধে দেওয়া বয়সসীমা পার করে ফেলেছেন। তাই ৩০তম সম্মেলনে বয়সের ছাড় না দিলে সংগঠনের সিনিয়র নেতা বা মুখ পরিচিত অনেক যোগ্য নেতাই ছাত্রলীগ থেকে বাদ পড়ে যাবেন। তবে তাদের আশা, করোনার পরিস্থিতির কারণে গঠনতন্ত্রের বেঁধে দেওয়া বয়সসীমা এবার ছাড় দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সভাপতি-সম্পাদকের দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন সংগঠনের সিনিয়র নেতারা। তা না হলে নতুনরাই ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র ছাত্রলীগ অভিভাবক শেখ হাসিনার। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চারজন সমন্বয়ক কোনো তথ্য জানাননি।

এদিকে সম্মেলন ঘিরে পদপ্রত্যাশীরা লবিং বা তদবির নিয়েই ব্যস্ত। নিজ এলাকার উচ্চপর্যায়ের বা প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন নেতাদের দিয়ে নিজের পক্ষে তদবির করাচ্ছেন সবাই।

৩০তম সম্মেলন ঘিরে প্রায় কয়েক শ নেতা ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গত তিনটি সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে। এবারও এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনোনীত করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ফলে জাতীয় সম্মেলন ঘিরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কয়েক শ মনোনয়ন বিক্রি হলেও শেষ পর্যন্ত ডজনখানেক নেতাই আলোচনায় রয়েছেন।

ছাত্রলীগের বিগত কমিটিগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে যেসব নেতা রয়েছেন তাদের এলাকা থেকেই সুপারিশে নেতা নির্বাচিত হন। তবে ৩০তম সম্মেলনে শীর্ষ নেতা নির্বাচিত করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, এমনটাই জানিয়েছেন ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সমন্বয়করা। এবার পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা, চারিত্রিক মাধুর্যতা, শিক্ষার্থীবান্ধব আওয়ামী পরিবারের নেতাদেরই নেতৃত্বে আনার কথা জানান দলের হাইকমান্ড। এ ছাড়া করোনা মহামারিতে মানবিক কাজে যারা আলোচনায় এসেছেন তাদেরও বিবেচনা করা হবে বলে জানা যায়।

এসব যোগ্যতায় নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন, সোহান খান, ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজীব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

আলোচনায় রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, আরিফুজ্জামান আল ইমরান ও নাহিদ হাসান শাহিন। সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহান, সাদ বিন কাদের চৌধুরী ও শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান)।

এ ছাড়া সম্পাদক পদে থাকা নেতাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক রনি মোহাম্মদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, সাবেক উপ-দপ্তর শেখ হকিবুল ইসলাম সুমন, ক্রীড়া সম্পাদক আল আমিন সুজন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু, গ্রন্থনা ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আবু হাসনাত সরদার হীমেল, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, উপ-কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক তানভির রহমান মাহীদ, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন, উপ-বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার হাবিব আহসান, পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নন), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক আল আমিন রহমান। ঢাকা অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এহসান উল্লাহ পিয়াল।

সামনে জাতীয় নির্বাচন, তাই সারা দেশে ছাত্রসমাজের নেতৃত্ব দিতে পারবেন- এমন নেতাকেই সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হবে। তাই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নিজে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এবারের কমিটি দেবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন, সৎচরিত্র, ছাত্রসমাজের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ও পারিবারিকভাবে আওয়ামী ব্যাকরাউন্ডের, এ রকম নেতাই সম্মেলনের মাধ্যমে বাছাই করা হবে। বয়সের বিষয়টি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন।

বয়সের সীমারেখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বয়সের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন নেত্রী শেখ হাসিনা।’

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ছাত্রলীগের সম্মেলন,বয়স,সিনিয়র
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close