জিয়াউদ্দিন রাজু

  ০১ ডিসেম্বর, ২০২২

ঢাকা মহানগর সম্মেলন শুক্রবার

নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম ছাত্রলীগ নেতৃত্ব প্রত্যাশা 

শীর্ষ পদের জন্য শেষ সময়ে দৌড়ঝাঁপ

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন শুরু হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের আগেই হতে চলেছে ঢাকার দুই মহানগরের সম্মেলন। ছাত্র রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদকে ঘিরে বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।

শীর্ষ পদ নিজের অনুকূলে নিশ্চিত করতে মরিয়া পদপ্রত্যাশীরা। তবে দলীয় সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে যে, সম্মেলনস্থলে কমিটি ঘোষণা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একই মঞ্চে দুই শাখার সম্মেলন হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের দলীয় নেতারা এতে উপস্থিত থাকছেন।

ছাত্রলীগের মহানগর নেতাদের সূত্রে জানা য়ায়, অন্যবারের তুলনায় এবার মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে শুধু সভাপতি-সম্পাদক পদের জন্য প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় চার শ। এর সঙ্গে মহানগরের বেশির ভাগ থানা ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকরাও এবার মহানগরের শীর্ষ পদ পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। ঢাকা মহানগর দুই ভাগ হওয়ার পর থেকে নেতৃত্ব বাছাইয়েও নানা পক্ষ তৈরি হয়েছে। মহানগর উত্তরে শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কথিত রয়েছে দুই সিন্ডিকেটের নাম। একটি ‘ধানমন্ডি বেল্ট’ অন্যটি ‘মিরপুর বেল্ট’। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের দ্বারা পরিচালিত হয় কথিত এই দুটি সিন্ডিকেট। উত্তর ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের কারা আসবেন তাও দুই সিন্ডিকেট নেতারা বাছাই করতেন। যদিও বর্তমানে দুই সিন্ডিকেটের নেতারাও খণ্ড খণ্ড হয়ে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে দক্ষিণে নিজেদের মধ্যে কোন্দলের শেষ নেই। বর্তমান সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে দূরত্ব ও দ্বন্দ্বের বিষয়টি নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। যদিও উত্তর ও দক্ষিণের পদপ্রত্যাশীদের অনেকের নামে একাধিক চাঁদাবাজি, ভূমি দখলসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তবে মুখ চিনে ও আনুকূল্যে নয়, যেকোনো পরিস্থিতিতে যারা শক্ত হাতে সংগঠনের হাল ধরে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন, তারাই নেতৃত্বে আসুক এটাই ছাত্রলীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের চাওয়া।

দলীয় সূত্রগুলো জানায়, এবার শেষ পর্যন্ত ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখায় শীর্ষ নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন সংগঠনের অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারের সম্মেলনকে একটু বেশিই গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের ভাষ্য মতে, পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ভালো, রয়েছে ক্লিন ইমেজ, পরিবারের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী; তারাই আগামীর নেতৃত্বে আসবেন। এ ছাড়া যারা শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় এবং মানবিক কাজ করে আলোচনায় আসতে পেরেছেন, এমন ছাত্রনেতারাও এগিয়ে থাকবেন।

এবার ঢাকা মহানগর ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের দৌড়ে যারা আলোচনায় রয়েছেন তারা হলেন-

ঢাকা মহানগর উত্তরে : বর্তমান কমিটির প্রচার সম্পাদক জুয়েল পোদ্দার রানা, সহ-সম্পাদক সৈয়দ আদনান শান্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেন মিঠু, কাজী মিজান, আসাদুজ্জা আল গালিব (মিরপুর কলেজ সভাপতি), আকরাম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে রায়হান পারভেজ, তরিকুল ইসলাম রাহুল, সুলাইমান ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আশিক ইকবাল, উত্তরের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সালমান খান প্রান্ত। এ ছাড়া ধানমন্ডি থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উত্তর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি, মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি রাসেল, আদাবর থানার সভাপতি রিয়াজের নামও আলোচনায় আছেন।

প্রচার সম্পাদক জুয়েল পোদ্দার রানা বলেন, ‘কমিটিতে যারা আসবে তারাই সাংগঠনিক সক্ষমতা দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করতে হবে। এজন্য দক্ষ এবং যোগ্যতাসম্পন্ন নেতাকেই ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আনতে হবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

উত্তরের সহ-সম্পাদক সৈয়দ আদনান শান্ত বলেন, ‘আমি চাই মহানগরের প্রত্যেকটা ছাত্রই সুশিক্ষিত হোক। এজন্য আমার একাধিক কর্মপরিকল্পনা রয়েছে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেকোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে কাজ করতে মাঠে থাকব’।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণে : শীর্ষ পদের আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি ও রমনা থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব হাসান, বারেক হোসাইন আপন, মাজেদুল মোল্লা মিন্টু, সাব্বির আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম মিরাজ, ইয়াসিন আরাফাত, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল আলম পুলক, রফিকুল ইসলাম রাছেল, সমাজসেবা সম্পাদক সৈয়দ মুক্তাদির সাদ, প্রচার সম্পাদক রিয়াজ মোল্লা, গণশিক্ষাবিষয়ক উপসম্পাদক আল-নোমান সরকার অনিক, উপসম্পাদক নুরুদীন হাওলাদার, সবুজবাগ থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন পাভেল।

নেতৃত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম মিরাজ বলেন, নেতৃত্ব নির্বাচনের পুরোটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। তিনিই যোগ্য নেতা নির্বাচন করবেন। যোগ্য ও ত্যাগীরা পদ পাবেন এটাই কামনা করি।

এদিকে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন, সৎচরিত্র, ছাত্রসমাজের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ও পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের ব্যাকরাউন্ডের হবে এ রকম নেতাই সম্মেলনের মাধ্যমে বাছাই করা হবে। বয়সের বিষয়টি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঢাকা মহানগর সম্মেলন,ছাত্রলীগ,নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close