বদরুল আলম মজুমদার

  ২১ নভেম্বর, ২০২২

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ

প্রথমে কড়া কথা, এখন সুর নরম বিএনপির  

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ নিয়ে বিএনপি নেতারা সরকারের প্রতি বেশ আক্রমণাক্ত বক্তৃতা করেছেন। সরকার হটানোর জন্য বলেছেন উত্তেজক ও কড়া কড়া কথা। সে কড়া অবস্থান থেকে এখন সরে আসছে বিএনপি। রাজধানীতে কোনো অবস্থান কর্মসূচির চিন্তা না করে বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মতো শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ শেষ করতে চায় বিএনপি। রাজধানীতে বিপুল লোক সমাগম করে ‘টানা অবস্থান’ নেওয়ার যে কথাবার্তা এত দিন চাউর হচ্ছিল, সে ধরনের চিন্তা দলটির এখন নেই বলে জানা গেছে। তবে শহরের এন্ট্রি পয়েন্টগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হলে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। বিএনপি পুরোনো হুঙ্কার থেকে সরে এসেছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদের লক্ষ্য ঢাকার সমাবেশের পর দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনে যাওয়া। এর মধ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মকৌশলও ঠিক করা হবে। নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা এবং নির্বাচনের পরে রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে জাতীয় সরকারের কাঠামোও ঘোষণা করা হবে। মূলত ঢাকার সমাবেশ থেকেই এক দফার আন্দোলনে নামার ঘোষণা আসতে পারে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, সরকার বিএনপির আন্দোলন বাধা দিতে চায় না। সে কারণে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে একটি ইস্যু বানাতে তৎপর আওয়ামী লীগ। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যে পরিমাণ লোকসমাগম হচ্ছে, সেখান থেকে সরকার পরিষ্কার বার্তা পেয়ে গেছে যে মানুষ আর তাদের চাচ্ছে না। এখন তাদের ভয়, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে জনস্রোতের সৃষ্টি হতে পারে। এই জনস্রোত থেকে জনরোষের সৃষ্টি করে কি না, সে আশঙ্কায় বিএনপিকে ফাঁদে ফেলার কৌশল হিসেবে সরকারি দল ১০ ডিসেম্বর নিয়ে বেশি তৎপর।

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে কোনো সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত নানামুখী আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি। বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মধ্য দিয়ে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে ‘আন্দোলন স্পৃহা’ তৈরি হচ্ছে, সেটিকে কাজে লাগিয়েই চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছতে চায় তারা। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় কর্মসূচি শেষ হলেও এরপর দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচির পথে যাবে বিএনপি। যেটিকে তারা সরকারবিরোধী সব দল নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন বলছেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মধ্যে মূল ফোকাস দেওয়া হচ্ছে ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে। ঢাকায় ওই দিন সর্ববৃহৎ শোডাউন দেওয়ার প্রস্তুতি এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকার সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি ঢাকার নেতাদের নিয়ে একাধিক সভা করেছে প্রস্তুতি কমিটি। মির্জা আব্বাস প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপির সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। জনগণ সেই সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, সমাবেশের বাইরে বিএনপির কোনো কর্মসূচির পরিকল্পনা নেই।

জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে বিএনপি দুই ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। তাদের প্রথম টার্গেট সাংগঠনিক শক্তিমত্তা জানান দিতে সর্বোচ্চ কর্মী সমাগম নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত সমাবেশ ঠেকাতে প্রতিপক্ষের যেকোনো বাধা মোকাবিলা করা।

বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে বিএনপি। কিন্তু সরকার যদি সেখানে বাধার সৃষ্টি করে তাহলে তারা সেটিকে চ্যালেঞ্জ করবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, বিএনপি অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মতোই রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে। সমাবেশ ডেকে অবস্থান নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি বলেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে জনগণ জানিয়ে দেবে তারা এই সরকারকে আর চায় না। নির্দলীয় সরকার ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সরকার যদি সেই সমাবেশে বাধা দেয়, তাহলে লড়াই বাধবে। বিএনপি সেই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোনোভাবেই তারা পিছপা হবে না। গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। এরই মধ্যে সাতটি বিভাগে সমাবেশ শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি সমাবেশেই বিএনপিকে প্রতিকূলতার বাধা ডিঙাতে হয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাস ও লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছোট-খাটো পরিবহনও ছিল কড়াকড়ির আওতায়। বিএনপি নেতাকর্মীদের এসব প্রতিকূলতা পেরিয়েই প্রতিটি সমাবেশে যোগ দিতে দেখা গেছে। এসব কর্মসূচিতে উপস্থিতিও ছিল বেশ লক্ষণীয়। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগামী ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা ও ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশের পর শেষ হবে বিভাগীয় সমাবেশ।

এদিকে সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ চলছে বিএনপির। ১০ ডিসেম্বরের আগেই এই সংলাপ শেষ করে যুগপৎ আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দফা সংলাপে চেষ্টা চলছে যুগপৎ আন্দোলনের দাবিগুলো সুনির্দিষ্ট করার। তবে দলগুলোর মুখ্য দাবি হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। আর এটি নিয়েই সামনের দিনগুলোতে সরকারবিরোধী দলগুলো এক দফা আন্দোলনের পথে হাঁটতে পারেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঢাকায় সমাবেশ,সুর নরম বিএনপির
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close