বদরুল আলম মজুমদার

  ০৫ আগস্ট, ২০২২

উদ্বিগ্ন বিএনপি, মাঠে থাকা নিয়ে সংশয়   

সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রথম দফাতেই মাঠে হোঁচট খেল বিএনপি। দীর্ঘদিন পর নেতাকর্মীদের রাজপথে নামিয়েও সফল হতে পারল না দলটি। ভোলায় ছাত্রদলের নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুুর রহিমের মৃত্যু এবং শতাধিক কর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিএনপি। এতে আগামী দিনে রাজপথের যে কোনো আন্দোলনে মাঠে ঠিকে থাকা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে খোদ দলটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যেই।

দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, জুন মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলকে পেটানো হয়েছে, ভোলায় গুলি করা হয়েছে। এমন প্রতিরোধের সামনে বিএনপি কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ফলে রাজপথে আইন সৃংখলা বাহিনীর বাধা এবং মাঠে সরকারি দলের সরব উপস্থিতির মুখে সাংগঠনিকভাবে ভঙ্গুর বিএনপি কতোটা ঠিকতে পারে সেটা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। তবে নেতাকর্মীদের জাগিয়ে তুলতে নতুন কর্মসূচি ও উদ্দিপনামূলক পরার্মশও দিচ্ছেন তারা।

ঢাকায় নূরে আলমের জানাজায় অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আর ক্রন্দন নয়, আমাদের জেগে উঠতে হবে। এই সরকারের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। শান্তিপূর্ণভাবে গণ-আন্দোলন শুরু করে নুরে আলম এবং রহিমের হত্যার প্রতিশোধ নেব। পরের দিন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায বরিশালের এক প্রতিবাদ সমাবেশে সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায়ের জন্য রাস্তায় শেষ খেলা হবে। সরকার যাবে এটা আমি নিশ্চিত। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের ক্ষমতার স্খলন কেউ বাঁচাতে পারেনি; আওয়ামী লীগও সেটি থেকে বাঁচতে পারবে না।

এ দিকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, ভোলার ঘটনা সরকার বিরোধীদের জন্য একটি পরিস্কার বার্তা। আগামী দিনে সরকারের বিরুদ্ধে বড় কোনো আন্দোলন যাতে দানা বাঁধতে না পারে, তার ছোট বার্তা এটি। এদিকে, হটাৎ সরকারের এমন মনোভাবে বিএনপি নেতারাও উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনরত দল বা বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ে এলে তাদের চা খাওয়ার দাওয়াত দেওয়ার দুই দিনের মাথায় ভোলার ঘটনা ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে।

তবে দলের একটি অংশ মনে করছেন, সরকার দীর্ঘ দিন থেকেই বিএনপিকে রাজপথে নামানোর জন্য চেষ্টা করছে। নির্বাচনের এক বা দেড় বছর আগে সরকার পতন বা অন্য যে কোনো দাবিতে আন্দোলনে নামাতে পারলে বিএনপিকে কাবু করা যাবে। কিন্তু বিএনপি কোনোভাবেই আগামী ডিসেম্ভরের আগে হরতাল বা অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যেতে চায় না। এমন একটি বার্তা সরকারের কাছেও আছে। তাই ভোলায় একটি ইস্যূ তৈরি করে বিএনপিকে জালাও পোাড়াওয়ের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে চায় সরকার। কিন্তু বিএনপি কোনোভাবেই সেই ফাঁদে পা দিবে না।

এ দিকে বিএনপির পক্ষ থেকে ভোলার ঘটনায় প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ গণজমায়েতের টার্গেটও নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে আছে, আজ (৬ আগস্ট) ছাত্রদল ঢাকায়, ৭ আগস্ট কৃষকদল ঢাকাসহ সারাদেশে, ৮ আগস্ট যুবদল ঢাকায়, ১০ আগস্ট শ্রমিক দল ঢাকায়, ১১ আগস্ট নারী দল ঢাকায় ও ১২ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক দল দেশজুড়ে সমাবেশ করবে।

বিদ্যুতের লোডশেডিং ও এ খাতে দুর্নীতির প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচিতে এ দুই নেতা নিহত হয়। ছাত্রদল ও স্বেচ্চাসেবক দলের এ দুই নেতা নিহত পর বিএনপি যথেষ্ট প্রতিক্রিয়াও দেখায়। নিহতের ঘটনার পর ভোলায় অর্ধ দিবস হরতাল ও দলের নয়াপল্টন অফিসের সামনে দুই দিন অবস্থান নেয় দলটির নেতা কর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় সামনে ৬ দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করে বিএনপি। কিন্তু ভোলার ঘটনা সরকার নিজেদের কঠোর হওয়ার বার্তাই দিয়েছে। তাই আগামী দিনে রাজপথের যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ঠিকে থাকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন দলটির নেতারা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উদ্ভিগ্ন বিএনপি,মাঠে থাকা নিয়ে সংশয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close