বদরুল আলম মজুমদার

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

‘আশাবাদী’ বিএনপির দ্বিতীয় দফা শিগিরই

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সংলাপের প্রথম দফায় ‘আশাবাদী’ হয়ে ওঠা বিএনপি এবার বসছে দ্বিতীয় দফার আলাপে। দলটির নেতারা মনে করছেন, আলোচনার মাধ্যমেই ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব। তাই প্রথম দফার সংলাপে বিভিন্ন দলের দাবি বা প্রস্তাবনা নিয়ে পুনরায় আলাপ করতে চায় বিএনপি। আর সেটি হতে পারে ১৫ আগস্টের পর। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

গত ২৫ মে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে শুরু বিএনপির এই উদ্যোগ। এ পর্যন্ত ছোট-বড় ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে দলটি। সংলাপে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবসহ কিছু জটিল প্রস্তাবের মুখোমুখি হয়েছেন বিএনপি নেতারা। এবার যাতে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে দিকে লক্ষ্য রেখেই এগুচ্ছেন দলিটির নেতারা। এ ক্ষেত্রে সংলাপে আসা প্রস্তাবের ওপর ‘সামারি’ তৈরি করছেন তারা। সংলাপের সার সংক্ষেপ নিয়ে কতটুকু ছাড় দেওয়া যায় সে বিষয়টি নিয়েই হতে পারে দ্বিতীয় দফা সংলাপ।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সমঝোতার প্রয়োজনে আমরা অবশ্যই দ্বিতীয় দফা সংলাপ করবো। তবে শুধু দ্বিতীয় নয়, যখনই যাদের সঙ্গে বসা প্রয়োজন মনে হবে তখন তাদের সঙ্গেই আমরা বসব। প্রথম দফা যে আলোচনা হয়েছে তাতে আমরা সবাই অনেকটা আশাবাদি। যেটুকু মতপার্থক্য আছে বৃহৎ সার্থে সবাই কমবেশী ছাড় দেবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের সংলাপে শুধু সরকার বদলের আন্দোলন নয়, রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তনে রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির অঙ্গীকারও চেয়েছে উদার গণতান্ত্রিক পাঁচটি দল। দলগুলো জানিয়েছে, ক্ষমতায় এলে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনে বিএনপি রূপরেখায় কী উপস্থাপন করে, তার ওপর নির্ভর করছে যুগপৎ আন্দোলনের ভবিষ্যৎ। তবে সংলাপে বিএনপির সঙ্গে প্রায় সব ইস্যুতেই ঐকমত্যে পৌঁছেছে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা।

সংলাপ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ পর্যন্ত যতগুলো দলের সঙ্গে সংলাপ করেছি, সবাই নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয়েছে। আন্দোলন ছাড়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয় বলে দলগুলোর নেতারা বিশ্বাস করেন। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন তারা মেনে নেবেন না বলেও জানিয়েছেন। তবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎই বলে দেবে তারা কোন পথে এগোবেন, আন্দোলনের ধারা ও গতি কেমন হবে?

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, দলগুলোর অনেক প্রস্তাবের সঙ্গে আমরাও একমত। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জয়ী হলে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ভূমিকা রাখা সব দলকে নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন করব।

সরকারবিরোধী ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট’ গড়তে এরই মধ্যে ছোট-বড় সমমনা ডান-বাম ও ইসলামী ২২টি দলের সঙ্গে প্রাথমিক সংলাপ শেষ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের বাইরে ‘গণতন্ত্র মঞ্চে’র শরিক পাঁচটি দলের সঙ্গে সংলাপ করে দলটি। জোটগত আন্দোলনের পর ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চায় এ দলগুলো। তবে নবগঠিত 'গণতন্ত্র মঞ্চ' বহাল রেখেই সরকারবিরোধী বৃহৎ জোটে যোগ দেওয়া এবং যুগপৎ আন্দোলনে দলগুলো সম্মত হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সাংবিধানিক সংস্কারসহ ২১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। জবাবদিহি ও ভারসাম্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গড়তে গণসংহতি আন্দোলন দিয়েছে সাত দফা প্রস্তাব। অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সংস্কারসহ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি উত্থাপন করেছে ৩১ দফা। রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনেই ভারসাম্য চায় নাগরিক ঐক্য। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও সংবিধানের সংশোধনসহ ১০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ।

প্রথম পর্বের সংলাপ থেকে আসা প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে শিগগির দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে যাবে তারা। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে প্রধান করে একটি লিয়াজোঁ কমিটিও গঠন করা হবে।

গত ২৫ মে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে শুরু বিএনপির এই উদ্যোগ। এ পর্যন্ত নতুন সমমনা হিসেবে সংলাপ করেছে বাম ঘরানার জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন ও সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে। তৎকালীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য এবং মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের একাংশের সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে গণফোরামের (মন্টু) একাংশ ছাড়া বাকি পাঁচটি দলই নবগঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চে’র শরিক দল।

২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে সংলাপ হয়েছে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন কল্যাণ পার্টি, মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), মওলানা আবদুর রকিবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ-ভাসানী, মুফতি মো. ওয়াক্কাসের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খন্দকার লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), শেখ জুলফিকার রহমানের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ, কাজী আবু তাহেরের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), আবু তাহের চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক পার্টি, রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দল, সাইফুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেটিক লীগ, গরীবে নেওয়াজের নেতৃত্বাধীন পিপলস লীগ ও সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বাধীন জাতীয় দলের সঙ্গে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
‘আশাবাদী’ বিএনপি,বিএনপির দ্বিতীয় দফা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close