মিজান রহমান

  ২৩ জুন, ২০২২

চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের আ.লীগ

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, ৭৩ বছরের পরিবার। সবচেয়ে পুরোনো ও উপমহাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন এবং বাঙালি জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানে বাঙালি জাতির সংগ্রাম ও গৌরবের ইতিহাস। এ রাজনৈতিক দলটি এ দেশের সুদীর্ঘ রাজনীতি এবং বাঙালি জাতির আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৭৩ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ইতিহাস সংগ্রাম, সৃষ্টি, অর্জন ও উন্নয়নের ইতিহাস। রোজ গার্ডেনে জন্মগ্রহণের পর থেকে নানা লড়াই, সংগ্রাম, চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দলটি এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়।

আওয়ামী লীগের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ দেশের অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও তরুণ মুসলিম লীগ নেতাদের উদ্যোগে ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের বশির সাহেবের বাসভবন রোজ গার্ডেনে একটি রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতাকর্মীরা সংগঠন থেকে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক।

১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির একচ্ছত্র নেতা। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও জাতির পিতা।

৬৯-এর গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির যে জাগরণ ও বিজয় সূচিত হয়, সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ এবং এই আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এরপর দলের মধ্যে ভাঙনও দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ তার নেতৃত্বে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। তিন দশক ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এ সময় আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে দলটি।

আবার ৭৩ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ বছর, ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে।

২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর দল আবার সুসংহত হয় এবং রাজনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করে জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতার পরিচয় দেয়। কিন্তু এ আন্দোলনের শেষপর্যায়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে আবার নতুন সংকটের মুখে পড়ে যায় দলটি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাসহ প্রথমসারির নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ায় এবং একাংশের সংস্কার তৎপরতায় কিছুটা সংকটে পড়ে দলীয় কার্যক্রম।

তবে, সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।

পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোটের শত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। সর্বশেষ, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।

নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সুখী, সমৃদ্ধ ‘ডিজটাল বাংলাদেশ’ গড়াসহ বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে দলটি।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, ‘ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অপর নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা-সংগ্রামসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক অন্দোলন ও মহৎ অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর নাম। শুধু আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে গণমানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই নয়, তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই দলটির মূল লক্ষ্য।’

আমির হোসেন আমু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্জিত বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। ২১ ফেব্রুয়ারির মাতৃভাষা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করা, সমুদ্রসীমা জয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, স্যাটেলাইটের নিজস্ব মালিকানা, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণসহ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, দারিদ্র্যবিমোচন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূরীকরণসহ সুদূরপ্রসারী সাহসী নেতৃত্বদানে বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকজন রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে শেখ হাসিনা আজ অন্যতম।’

নব্বইয়ের দশকে ফের শুরু হয় সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা। পঁচাত্তরের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ফের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুশাসন, স্থিতিশীল অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নয়নে দৃশ্যমান গতিশীলতা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংসংস্থান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সুখী, সমৃদ্ধ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়াসহ বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে দলটি। আওয়ামী লীগের ৭৩ বছরের ইতিহাস, দেশ ও মানুষের জন্য নিবেদিত থেকে আত্মদানের ইতিহাস। সুখে-দুঃখে-দুর্যোগে সর্বদা গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে এগিয়ে যাওয়াই আওয়ামী লীগের প্রত্যয়।

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েই আওয়ামী লীগের জন্ম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দলের হাল ধরেছিলেন। বাঙালিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছেন। তিনি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। আজকের আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তারই কন্যা শেখ হাসিনার হাতে। একই সঙ্গে তিনি দেশেরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অনন্য উচ্চতায় এখন বাংলাদেশ। সামাজিক, অর্থনৈতিক সব সূচকেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের জন্য এক আকর্ষণীয় দেশে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগকারীদের এক নম্বর পছন্দের দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নিজস্ব অর্থায়নে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু সফলভাবে নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ উন্নয়ন বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চড়াই-উতরাই,আওয়ামী লীগ,রাজনীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close