বদরুল আলম মজুমদার

  ১২ অক্টোবর, ২০২১

নির্বাচন কমিশন গঠন

বিএনপির অন্য সুর

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে বিএনপি মাঠ ‘গরম’ করতে রাজি নয় এবার। তা ছাড়া এই ইস্যুতে জোটের শরিক দলের সমর্থন এবং সাংগঠনিক শক্তিও নেই দলটির। এ অবস্থায় রাজপথে খুব বেশি সুবিধাও করা যাবে না। তাই অনেক নেতা মাঠে নামার পক্ষে থাকলেও তাতে সায় নেই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের। তারা বলছেন, এটি এখন বড় ইস্যু নয়। আমাদের লক্ষ্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সেটা তত্ত্বাবধায়ক বা অন্য যেকোনো নামে হতে পারে। একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই তথ্য। এদিকে ইসি গঠন নিয়ে এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের আহ্বানে সাড়া না-ও দিতে পারে দলটি। ফলে ভেতরে-ভেতরে অনানুষ্ঠানিকভাবে অন্য দলের সঙ্গে ইসি নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও প্রক্রিয়াটি এখনই সামনে আনছে না বিএনপি।

নেতারা জানান, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরকার আগের পথেই হাঁটছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যও স্পষ্ট। তাই নিরপেক্ষ কমিশন গঠন না হলেও সেটি নিয়ে রাজপথে খুব বেশি সুবিধা করা যাবে না। তা ছাড়া কমিশন গঠন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশন গঠন আইন করার দাবি জানাচ্ছেন। এ অবস্থায় এমন আইন করার দাবি নিয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও বিষয়টি নিয়ে কৌশলে এগোবেন নেতারা।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করছেন, আন্দোলন দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না। যেকোনো সময় সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে দৃঢ় ঐক্য হতে পারে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা সরকারের বিপক্ষেও যেতে পারে। তাই সামনে সরকারবিরোধী যেকোনো আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দিয়ে যাবে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বিএনপি আন্দোলন করবে না এটা ঠিক নয়। আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি। তবে দিনক্ষণ ঠিক করে অতীতে আন্দোলন হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। নিরপেক্ষ ইসি দিয়ে একটি অবাধ নির্বাচন আমাদের দেশের বাস্তবতায় আশা করা যায় না, যা এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তাই আমরা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। একটি ইস্যুতেই থাকতে চাই। কারণ আগের ধারাবাহিকতায় এবারও ইসি নিয়োগ সরকারের ইচ্ছার বাইরে হবে না। তাই এটি আমাদের কাছে বড় ইস্যু নয়। আমাদের লক্ষ্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সেটা তত্ত্বাবধায়ক বা অন্য যেকোনো নামে হতে পারে।

ইসি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপিকে ডাকা হলে অংশ নেবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি দলীয় ফোরামে আলোচনার পরই বলা যাবে।

কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। কমিশন গঠন নিয়ে এরই মধ্যে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক বাহাস চলছে। ফলে ভেতরে-ভেতরে অনানুষ্ঠানিকভাবে অন্য দলগুলোর সঙ্গে ইসি গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও প্রক্রিয়াটি এখনই সামনে আনছে না বিএনপি। আর এ কারণেই স্থায়ী কমিটির আলোচ্যসূচিতেও জায়গা পায়নি ইস্যুটি।

জানা গেছে, কমিশন গঠনে এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে আগের মতো ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করার কথা বলা হচ্ছে। আর এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ্য বক্তব্যও এসেছে। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ ইস্যুটি নিয়ে আর বেশি কিছু করার নেই বলে ধরে নিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা।

তাছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়নি। তবে এটি নিয়ে দলে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন নেতা।

দলীয় সূত্র জানায়, এরই মধ্যে বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছে। বিষয়টি লন্ডন থেকে দেখভাল করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাই এ বিষয়ে বেশ সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন এজেন্সি ও নেতাদের সমন্বয়ে নানা প্রক্রিয়া চলমান থাকায় বিএনপিও হিসাব কষে এগোচ্ছে।

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এই প্রতিবেদককে বলেন, সরকারের নিয়োগ করা কমিশন কোনোভাবেই নিরপেক্ষ হবে না। আমরা চাই, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। যে কমিশন কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ হবে না। সরকারি দল, বিরোধী দল, সবার প্রতি সমান দায়বদ্ধতা থাকবে তাদের। ইসি স্বাধীন, মানে সংবিধান ও আইনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে। এই সরকারের অধীনে আবার ইসি গঠন হলে তা হুদা কমিশনের মতো হবে। এতে কোনো আস্থার জায়গা তৈরি হবে না।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দাবি ছিল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান। এই দাবিতে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে হরতাল-অবরোধসহ দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল দলটি। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে দলটি আন্দোলন চালিয়ে যায়। নির্বাচন পরবর্তী আরো মাস খানেক আন্দোলন অব্যাহত রাখা হয়। রাজনীতির অন্দরমহলে আলোচনা ছিল, সরকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে ওই নির্বাচন করেছে। দ্রুত আরেকটি নির্বাচন হবে। বিএনপি মূলত সেই লক্ষ্যে তখন আন্দোলন অব্যাহত রাখে। কিন্তু রাজনৈতিক কলাকৌশলে আওয়ামী লীগ তখন টিকে যায় এবং শক্তিশালী অবস্থানে চলে আসে। ফলে আন্দোলনের স্বপ্ন তখন ফিকে হয়ে আসে বিএনপির ঘরে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,নির্বাচন কমিশন,রাজনীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close